মোহনবাগান ২ : বেঙ্গালুরুএফসি ৪
মোহনবাগানকে সব চেয়ে বেশি ট্রফি দেওয়া কোচ ও ফুটবলার সুব্রত ভট্টাচার্য বিস্ময় প্রকাশ করে বললেন, ‘‘এক গোলে এগিয়ে আছে দল, বিপক্ষ দশ জনে খেলল ৪০ মিনিট। তারপরও এত গোল খাবে! মোহনবাগানে কখনও এ রকম হয়েছে দেখিনি। এত রক্ষণাত্মক খেলা ঠিক হয়নি।’’
আর তেরো বছর পর সবুজ-মেরুনকে আই লিগ জেতানো কোচ সঞ্জয় সেনের মন্তব্য, ‘‘বেঙ্গালুরুর মতো দলের বিরুদ্ধে এ রকম সুবর্ণ সুযোগ কেউ হাতছাড়া করে? তার উপর চার গোল। ভাবতেই পারছি না!’’
সুপার কাপ থেকে মঙ্গলবার মোহনবাগানের লজ্জাজনক বিদায়ের পর দিপান্দা ডিকাদের কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তীর রণনীতি নিয়ে শুধু সুব্রত বা সঞ্জয় নন, সবুজ মেরুন সমর্থকরাও সমালোচনায় মুখর। ক্লাব তাঁবুতেও হতাশা, ক্ষোভ। উঠতি কোচ বলে শঙ্করলালের বিরুদ্ধে চাঁচাছোলা মন্তব্য করতে চাইছেন না প্রাক্তনরা। তবে সুনীল ছেত্রীর বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে নেমে যে ভাবে সোনার সুযোগ হাতছাড়া করলেন কিংগসলে ওবুমেনেমেরা, তাতে প্রশ্ন উঠে গেল মোহনবাগানের মতো ক্লাবে কোচের চেয়ারে অনভিজ্ঞ শঙ্করলালকে বসিয়ে কর্তারা বড় ঝুঁকি নিয়েছেন কী না?
শুরু থেকেই বেঙ্গালুরু কার্যত কোণঠাসা ছিল। জন জনসন, নিকোলাস ফেডর ফ্লোরেস (মিকু), উদান্ত সিংহরা নিজেদের খেলা খেলতেই পারছিলেন না। এই অবস্থায় বিরতির চার মিনিট আগে দিপান্দা ডিকা গোল করে ১-০ এগিয়ে দিয়েছিলেন মোহনবাগানকে। বেঙ্গালুরুর স্প্যানিশ কোচ আলবার্তো রোকার কপালে তখন চিন্তার বলিরেখা। ভেবেই পাচ্ছেন না কী ভাবে সামাল দেবেন পরিস্থিতি। বিরতির পাঁচ মিনিট পর আরও সুবিধা পেল মোহনবাগান। বেঙ্গালুরুর নিশু কুমার লাল কার্ড দেখে বাইরে চলে গেলেন। ফাইনালে ওঠার দরজা হাট করে যেন খুলে গেল শঙ্করলালের টিমের সামনে। প্রতিপক্ষ দশ জন হয়ে গিয়েছে। এ রকম সুবর্ণ সুযোগ পেলে যে কোনও কোচই বিপক্ষকে দুমড়ে-মুচড়ে দেওয়ার জন্য ফুটবলারদের পাঠান চূড়ান্ত আক্রমণে। গোলের সংখ্যা বাড়ানোই থাকে লক্ষ্য। কিন্তু মোহনবাগান কোচ করলেন উল্টোটা। দেখা গেল মাঝমাঠ থেকে নেমে এসে নিজেদের বক্সে ভিড় বাড়াচ্ছেন ক্যামেরন ওয়াটসন, নিখিল কদমরা। একটা সময় ছয়-সাত জন মোহনবাগান ফুটবলারকে দেখা গেল নিজেদের বক্সের আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকতে।
দিপান্দা ডিকাদের এই রক্ষণাত্মক মনোভাব সুবিধা করে দিল বেঙ্গালুরুকে। চার বছরে চারটি ট্রফি জিতেছে দক্ষিণের সফলতম এই ক্লাব। দুই উইং ব্যবহার করে তারা আক্রমণের ঝড় তুলতে শুরু করল। সঙ্গে সঙ্গেই নিজের মেজাজে যেন ফিরলেন মিকু। ভেনেজুয়েলার ভয়ঙ্কর এই স্ট্রাইকার আইএসএল প্রচুর গোল করেছেন এ বার। গোলের সামনে ঝুঁটি বাঁধা মিকু মানেই ভয়ঙ্কর। সাপের মতো ড্রিবল করে ঢুকে গিয়ে জোরাল শটে গোল করাটাই তাঁর অভ্যাস। ঠিক সেই কায়দায় মাত্র দু’মিনিটের ব্যবধানে পর পর দু’টি গোল করে গেলেন মিকু। চাপের মুখ থেকে ছিটকে বেরিয়ে এসে ২-১ এগিয়ে যাওয়ার পরই ম্যাচ হাতের মুঠোয় নিল বেঙ্গালুরু। চাপে পড়ে উদান্ত সিংহকে নিজেদের বক্সে ফাউল করলেন মোহনবাগানের পরিবর্ত ফুটবলার রানা ঘরামি। সেই পেনাল্টি থেকে মিকুর হ্যাটট্রিকও। বেঙ্গালুরুর হয়ে ৩-১ থেকে ৪-১ করলেন সুনীল ছেত্রী। মোহনবাগানের আঠারো গজ বক্সের ভিতর থেকে দুর্দান্ত শটে গোলটি করলেন সুনীল। শেষ দিকে ডিকা যখন ৪-২ করে সমতা কমালেন, তখন গ্যালারিতে হাজির কলকাতা থেকে যাওয়া মোহনবাগান সমর্থকরা কেউ কাঁদছেন, কেউ মাথা চাপড়াচ্ছেন।
শুক্রবার ভুবনেশ্বরে সুপার কাপের ফাইনাল। ইস্টবেঙ্গলের সামনে এ বার বেঙ্গালুরু। মিকু হুঙ্কার দিয়ে গেলেন, ‘‘বিরতিতে কোচ বলেছিলেন আমাদের আক্রমণের দর্শন যেন ঠিক থাকে। দশ জনেও আমরা ম্যাচটা জিতেছি এ জন্যই। এ বার সামনে ইস্টবেঙ্গল। আইএসএল ফাইনাল উঠেও জিততে পারিনি। এই ফাইনালটা জিততেই হবে।’’ আর হেরে মোহনবাগান কোচের বক্তব্য, ‘‘মনঃসংযোগের অভাবেই হেরেছি। তবে প্রচুর গোলের সুযোগ নষ্ট করেছি আমরা।’’