Advertisement
E-Paper

দুই পেসারের দাপটে ইনিংস শেষ ছ’ওভারে

একটা গোটা টিম উড়ে যাচ্ছে মাত্র ৩৩ রানে, সাকুল্যে টিকছে মোটে ছ’ওভার, এ জিনিস কেউ কখনও দেখেছে না শুনেছে? কেউ ভাবতে পারবে, একটা টিম কি না মাঠে নামছে মাত্র আধঘণ্টার জন্য! আধঘণ্টায় প্রতিপক্ষকে শেষ করে একটা আস্ত ম্যাচ ঘণ্টাদেড়েকের মধ্যে শেষ করে কিট গুছিয়ে বাড়ির রাস্তা ধরছে?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:০৩
রবিকান্ত-গীতা। স্থানীয় ক্রিকেটে দুই পেসারের চমক।

রবিকান্ত-গীতা। স্থানীয় ক্রিকেটে দুই পেসারের চমক।

একটা গোটা টিম উড়ে যাচ্ছে মাত্র ৩৩ রানে, সাকুল্যে টিকছে মোটে ছ’ওভার, এ জিনিস কেউ কখনও দেখেছে না শুনেছে?

কেউ ভাবতে পারবে, একটা টিম কি না মাঠে নামছে মাত্র আধঘণ্টার জন্য! আধঘণ্টায় প্রতিপক্ষকে শেষ করে একটা আস্ত ম্যাচ ঘণ্টাদেড়েকের মধ্যে শেষ করে কিট গুছিয়ে বাড়ির রাস্তা ধরছে?

বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না, কিন্তু বিশ্বাস করতে হবে। কল্পনা করা যায় না, কিন্তু করতে হচ্ছে। ময়দানে এমন মহাশ্চর্য কাণ্ড তো ঘটে গেল মঙ্গলবার! যেখানে সিএবি লিগ চ্যাম্পিয়ন টিমের সামনে পড়ে স্রেফ উড়ে গেল প্রতিপক্ষ। তাদের গোটা ইনিংস ধ্বংস হয়ে গেল মাত্র তেত্রিশ রানে, টিকতে পারল মাত্র ছ’ওভার!

ভবানীপুর বনাম তালতলা একতা সংঘর ম্যাচে!

ভবানীপুর ক্রিকেটাররা ভাবতেও পারেননি। স্বাভাবিক। সাধারণ যুক্তিবোধে তো এ জিনিস আন্দাজ করা সম্ভব হয় না। কে ভাবতে পারবে যে, দু’জন পেসার মাত্র তিন ওভার করে বল করে পাঁচ-পাঁচ উইকেট নিয়ে বেরিয়ে চলে যাবেন? রবিকান্ত সিংহ এবং গীত পুরি— দু’জনের সঙ্গে কথা বলে মনে হল, রাতেও তাঁরা ব্যাপারটা পুরোপুরি বিশ্বাস করে উঠতে পেরেছেন বলে। কী করা যাবে, ম্যাজিক স্পেল বললেও তো একে কম বলা হয়।

রবিকান্ত সিংহ: ৩.১-১-১৬-৫!

গীত পুরি: ৩-০-১৫-৫!

এবং তালতলা ৬ ওভারে ৩৩ অলআউট!

পরে রবিকান্ত-গীত দু’জনেই বললেন যে, ৩৩ অলআউট যে তাঁরা ঘটাবেন ভাবতে পারেননি। গীত বলছিলেন, ‘‘নিজের ক্রিকেট কেরিয়ারে এ জিনিস কখনও ঘটতে দেখিনি। ঘটতে শুনিওনি।’’ ঘটনা হল, ম্যাচের রেজাল্টের মতো দুই বোলারের নেপথ্যকাহিনীও সমান চমকপ্রদ। রবিকান্ত— উন্মুক্ত চন্দের বিশ্বজয়ী অনূর্ধ্ব উনিশ ভারতের পেসার ছিলেন। ফাইনালে তিনটে উইকেট পেয়েছিলেন। কিন্তু তার পর কলঙ্কের মেঘে ঢেকে গিয়েছিল জীবন। ‘চাকিং’-এর অভিযোগ উঠে গিয়েছিল যে! গীত— তিনি আবার বঙ্গদেশেরই নন। অনূর্ধ্ব পর্যায়ের ক্রিকেটটাও বাংলায় খেলেননি। খেলেছেন তামিলানড়ুর হয়ে! বাবা অপরাজিত, বাবা ইন্দ্রজিৎ, অশ্বিন ক্রাইস্টদের সঙ্গে!

‘‘এখনও কলকাতায় ওরা খেলতে এলে আমাকে যোগাযোগ করে, কথা হয়,’’ বলছিলেন সেন্ট জেভিয়ার্সের কম্পিউটার বিজ্ঞান নিয়ে পড়া ছাত্র গীত। সঙ্গে জুড়ে দেন, ‘‘আট থেকে ষোলো বছর পর্যন্ত আমি তামিলনাড়ুতে ছিলাম। জুনিয়র লেভেলটা পুরোটাই ওখানে খেলেছি। কলকাতায় বছর পাঁচেক আগে এলাম যখন, প্রথম দিকে ভালই অসুবিধে হত। দু’টো রাজ্যের ক্রিকেট সংস্কৃতি তো আলাদা। কিন্তু আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে গিয়েছে। এখন বাংলার হয়েই রঞ্জি খেলার স্বপ্ন দেখি।’’ আ বিশ্বজয়ী রবিকান্ত? চাকিংয়ের দুঃস্বপ্নের দিনগুলো এখন আর কাঁদায় না। সময় সামলে দিয়েছে সব। ‘‘আমাকে ক্লিয়ার করে দেওয়ার পর আর ভাবিনি ওটা নিয়ে। এখন চেষ্টা করি ভাল পারফর্ম করতে। সেটা তো করছিও। একটা জিনিস ভেবে খারাপ লাগে যে, পর্যাপ্ত সুযোগ আমি পেলাম না। যাক গে, সেটা তো আমার হাতে নেই,’’ বলে দেন রবিকান্ত। আর তিনি, গীত দু’জনেই বললেন যে, স্রেফ সুইং বল করে এ দিন তাঁরা তালতলাকে শেষ করে দিয়েছেন।

শুধু একটাই যা খচখচানি। না, তালতলা কোনও অভিযোগ তোলেনি। ক্লাবের কোচ দেবেশ চক্রবর্তী বলে দিলেন, ‘‘অজুহাতে আমি বিশ্বাস করি না। আমার প্লেয়াররা পারেনি। তবে এত খারাপ করার মতো টিম আমার নয়।’’ প্রশ্নটা তুললেন কীর্তিমান ক্লাবের কোচ স্বয়ং। ভবানীপুর কোচ আব্দুল মুনায়েমের মনে হচ্ছে, বড় ক্লাবের সঙ্গে ছোট ক্লাবের এখন এতটাই তফাত যে, চোখে পড়ার মতো দৃষ্টিকটু সব ঘটনা ঘটছে। ‘‘আমি নিজের বোলারদের কৃতিত্ব দিয়েও বলছি, ওদের ব্যাটসম্যানদের মেরিটের অভাবটা প্রচণ্ড বোঝা গিয়েছে,’’ বললেন মুনায়েম।

তা হলে প্রশ্ন ওঠে— এমন ম্যাচ খেলিয়ে লাভ কোথায়, যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বীতা বলে শব্দটাই নেই!

Bhawanipur vs Taltala Ekta Sangha cricket match Ravikant Singh Geet Puri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy