Advertisement
০৩ মে ২০২৪

বোলারদের ভুলে প্রথম দিনে শাসক অস্ট্রেলিয়া

নতুন স্টেডিয়াম। যেখানে সারাক্ষণ তাড়া করে বেড়াল পুরনো মাঠের ভূত। 

উদ্বেগ: পেশিতে টান ইশান্তের। গেটি ইমেজেস

উদ্বেগ: পেশিতে টান ইশান্তের। গেটি ইমেজেস

সুমিত ঘোষ 
পার্থ শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:৩৫
Share: Save:

নতুন স্টেডিয়াম। যেখানে সারাক্ষণ তাড়া করে বেড়াল পুরনো মাঠের ভূত।

বরাবর পার্‌থ মানে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের দুর্ভেদ্য দুর্গ। যদিও অনিল কুম্বলের নেতৃত্বে ঐতিহাসিক সোয়ান নদীর তীরে ভারতের স্মরণীয় জয় আছে, সেটাকে ব্যতিক্রম হিসেবেই ধরতে হবে। ডেনিস লিলি, জেফ থমসনের যুগে এ শহরে থরহরিকম্প বেধে যেত প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে। সেটা ছিল ওয়াকা। এ দিন রণক্ষেত্রের মঞ্চ ছিল নতুন ওপটাস স্টেডিয়াম। দেখা গেল মাঠ পাল্টালেও বদলায়নি দুর্গের ইতিহাস। সিরিজে চাপে থাকা টিম পেনের অস্ট্রেলিয়াকেও আশ্চর্যজনক ভাবে ফিরিয়ে আনল পার্‌থ। দিনের শেষে অস্ট্রেলিয়া ২৭৭-৬ এবং, যতই শুরুর দিককার ব্যর্থতা কাটিয়ে যশপ্রীত বুমরা ভারতকে ম্যাচে ফিরিয়ে এনে থাকুন, অস্ট্রেলিয়াই যে প্রথম দিনে শেষে কিছুটা হলেও এগিয়ে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই।

আর তার জন্য প্রথম ঘণ্টায় ঘাসের পিচ পেয়েও ভারতীয় পেসারদের শর্ট বল করার প্রবণতাকেই কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে। ইয়ান বোথাম আনন্দবাজারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলে দিলেন, ঘাসের পিচের সদ্ব্যবহার করতে পারেননি ভারতীয় বোলাররা। একই কথা অস্ট্রেলীয় সংবাদমাধ্যমে বলেছেন অ্যালান বর্ডারও। ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি অলরাউন্ডারের মতো অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক বর্ডারও বলেছেন, প্রথম সেশনে ভারতীয় পেসাররা অতিরিক্ত শর্ট বল করায় অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের কাজ অনেক সহজ হয়ে গিয়েছিল।

ঘাসে মোড়া সবুজ পিচে প্রথম ঘণ্টায় কেমন বল করলেন ভারতীয় পেসাররা? একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। অ্যারন ফিঞ্চকে টেস্ট ম্যাচের ব্যাটসম্যান বলেই মনে করেন না অনেকে। ফিঞ্চ অ্যাডিলেডে রান না পেয়ে প্রবল চাপে ছিলেন। টেস্টের আগের দিন বৃহস্পতিবার রিকি পন্টিংয়ের ক্লাস করেন তিনি। তা বলে রাতারাতি তাঁর ব্যাটিংয়ে দারুণ উন্নতি ঘটে গেল, এমন ভাবা ঠিক হবে না। টেস্টে ফিঞ্চকে ঘায়েল করার মোক্ষম অস্ত্র হচ্ছে, উপরের দিকে ভিতরে আসা বল। অর্থাৎ, ফুল লেংথে ইনসুইং। শর্ট বল করলেই তিনি মেরে দিতে পারেন। অ্যাডিলেডে এই অঙ্ক কষে তাঁকে রান করতে দেননি ভারতীয় পেসাররা। এখানে সেই রাশ আলগা হয়ে গেল। ইশান্ত শর্মারা ভুলে গেলেন, ফিঞ্চকে কী বল করতে হয়। যশপ্রীত বুমরা তবু কিছুটা চেষ্টা করছিলেন। এক বার জোরালো এলবিডব্লিউ আবেদন নাকচ হল। বিরাট কোহালি ডিআরএস নিলেন। কিন্তু তাতেও উইকেট এল না। ফিঞ্চ এবং মার্কাস হ্যারিস অপরাজিত থেকে লাঞ্চ সারতে গেলেন। দু’জনেই হাফ সেঞ্চুরি পেলেন। এর পর হাফ সেঞ্চুরি করে গেলেন ট্রাভিস হেডও।

ভারতকে ম্যাচে ফেরালেন সেই বুমরা। পার্টনারশিপ ভাঙার ব্যাপারে যিনি এখন কোহালির সেরা অস্ত্র হয়ে উঠেছেন। ফিঞ্চকে তিনিই ফেরালেন সেই ভিতরে আসা বলে এলবিডব্লিউ করে। দিনের শেষে ভারতকে যে আরও বেকায়দায় দেখাচ্ছে না, তার কারণ বুমরার ভয়ঙ্কর সুন্দর বোলিং। ভয়ঙ্কর কারণ, সবুজ পিচে তাঁর বাউন্সকে কেউ সামলাতে পারছেন না। অন্যদের সঙ্গে বুমরার তফাত হচ্ছে, অ্যাকশনের কারণে তাঁর বলে স্লিপারি বাউন্স রয়েছে। অর্থাৎ পিচে পড়ার পরে পিছলে খুব দ্রুত তা শরীর লক্ষ্য করে চলে আসে। প্রতিক্রিয়া দেখানোর জন্য খুব কম সময় হাতে থাকে বলে ব্যাটসম্যানেরা তা সামলাতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন। পার্‌থের নতুন মাঠের পিচকে আরও বেশি করে পুরনো ওয়াকা সদৃশ করে তুলেছিলেন বুমরা। শনিবার সকালে দশ ওভার মতো পুরনো নতুন বল নিয়ে তিনি যদি ফের ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন, তা হলে ম্যাচে ভাল ভাবেই ফিরে আসতে পারে ভারত।

না হলে প্রথম দিনেই যে রকম অসমান বাউন্স লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কোহালির দলের কাজ মোটেও সহজ হবে না। অস্ট্রেলিয়ার সব চেয়ে বড় সুবিধে হচ্ছে, তিন জন ভাল পেসার তো আছেই— মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স এবং জশ হেজ্লউড। পেস ত্রয়ীর সঙ্গে আছেন নেথান লায়নও। অ্যাডিলেডে তিনিই ভারতকে ভেঙেছিলেন। এখানে ফাস্ট পিচ হলেও প্রথম দিনেই ক্ষত তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। অনিয়মিত স্পিনার হনুমা বিহারী দু’টো উইকেট নিয়ে গেলেন। তার মধ্যে একটা কার্যত বাউন্সারে। বিহারী পরে বলে গেলেন, ‘‘দলের কাজে আসতে পেরে আমি খুশি। জানতাম, যে-হেতু সব পেসার নিয়ে খেলছে দল, আমাকে বল করতে হতে পারে। তৈরিই ছিলাম।’’ পিচের অবস্থা নিয়ে কী ভাবছেন? জিজ্ঞেস করায় বিহারীর জবাব, ‘‘পিচ নিয়ে ভাবছি না। নিজেদের খেলা খেলে যেতে হবে। পিচে বল লাফাচ্ছে, নিচু হচ্ছে। কিন্তু সে সব নিয়ে ভাবলে খেলা যায় না।’’ প্রথম দিনেই কথা উঠে গিয়েছে, চোটের জন্য বাইরে থাকা অশ্বিনের অভাব এই টেস্টে কতটা অনুভূত হবে। কারও কারও মত, অশ্বিন না থাকলেও রবীন্দ্র জাডেজাকে খেলানো উচিত ছিল। চার পেসারে নামাটা ঠিক হয়নি। এঁদের যুক্তি, প্রথম দিনেই যেখানে পিচে ফাটল বেরিয়ে পড়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, সেখানে এক জনও বিশেষজ্ঞ স্পিনার না রাখাটা ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে। আবার এটাও ঠিক যে, অশ্বিন না থাকায় সবুজ পিচে চার পেসারেই রণতরী সাজাতে চেয়েছে ভারত। লক্ষ্য ছিল, গতি এবং বাউন্সের পাল্টা প্রত্যাঘাতে চাপে থাকা অস্ট্রেলীয় ব্যাটিংকে আক্রমণ করা। কে জানত, নতুন বলে বহু দিন পরে ভারতীয় পেসারদের একটা খারাপ দিন অপেক্ষা করে আছে। আর সেই দিনটা কি না হাজির হল পেসারদের স্বর্গভূমিতেই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE