Advertisement
০৫ মে ২০২৪

স্পিনের ভেল্কিতে বিধ্বস্ত পেনদের রক্ষা করতে পারে শুধু বৃষ্টি

শনিবার সিডনির মাঠের রং তাই গোলাপি। আর মাঝেমধ্যে সেটাকে ছাপিয়ে গেল ভারতীয় ক্রিকেটের উদ্দামতার সবুজ রং।

ভারতীয় ক্রিকেটের উদ্দামতার সবুজ রং। ছবি: এএফপি।

ভারতীয় ক্রিকেটের উদ্দামতার সবুজ রং। ছবি: এএফপি।

সুমিত ঘোষ
সিডনি শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:২৫
Share: Save:

অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে এই দিনটা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। আরও পরিষ্কার করে বললে সিডনির জন্য। তাদের প্রিয় এক কৃতী সন্তানের কাছে বিশেষ অর্থবহ এই দিন।

বলা হয় পিঙ্ক ডে। আসলে জেন ম্যাকগ্রা পিঙ্ক ডে। অস্ট্রেলিয়ার পেস বোলার গ্লেন ম্যাকগ্রার স্ত্রী জেন ক্যানসারে মারা যান ২০০৮ সালে। তার পর থেকে ম্যাকগ্রা ফাউন্ডেশনের নেতৃত্বে প্রত্যেক বছর পালিত হয় পিঙ্ক ডে। ব্রেস্ট ক্যানসার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য গোলাপি রংয়ে ছেয়ে যায় পুরো স্টেডিয়াম। মেলবোর্নে যেমন বক্সিং ডে টেস্ট ঐতিহ্যের বাহক, সিডনিতে তেমন হয় নিউ ইয়ার টেস্ট। আর এই নিউ ইয়ার টেস্টের তৃতীয় দিনটা পালিত হয় পিঙ্ক ডে হিসেবে। জেন মারা যাওয়ার পর থেকে ম্যাকগ্রা নিজে উদ্যোগ নিয়ে এই দিনটাকে সাজান। স্টেডিয়ামে ঢোকার মুখ থেকে গোলাপি রংয়ের নানা জিনিস বিক্রি করতে দেখা যায় তার ফাউন্ডেশনের কর্মীদের। সব অর্থ যাবে ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসার তহবিলে। এখনও পর্যন্ত ৭৬ হাজার পরিবারকে সাহায্য করেছে ম্যাকগ্রা ফাউন্ডেশন। এই মুহূর্তে ১২০ জন নার্সের খরচ চালায় এই সংস্থা।

শনিবার সিডনির মাঠের রং তাই গোলাপি। আর মাঝেমধ্যে সেটাকে ছাপিয়ে গেল ভারতীয় ক্রিকেটের উদ্দামতার সবুজ রং। ব্যাটিং সহায়ক পিচ, সিরিজে প্রথম বার অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং রুখে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, বুমরাদের দেখে মনে হচ্ছে দীর্ঘ সফরের শেষে এসে ক্লান্ত। সকালে শুরুর দিকে তখন মনে হচ্ছিল এই টেস্ট ড্রয়ের দিকেই চলে যাবে। তাতেও ক্ষতি নেই অবশ্য। সিরিজে ২-১ এগিয়ে থাকা বিরাট কোহালির দলটা তার পরেও সিরিজ জিতে ইতিহাস তৈরি করতে পারবেন। স্বাধীনতার বছর থেকে অস্ট্রেলিয়া সফর করেছে ভারতীয় ক্রিকেট দল। আজ পর্যন্ত কোনও অধিনায়ক এখান থেকে সিরিজ জিতে ফিরতে পারেননি। লালা অমরনাথ দিয়ে শুরু হয়েছিল। কোহালির আগে শেষ সিরিজে অধিনায়ক থাকা মহেন্দ্র সিংহ ধোনি পর্যন্ত কেউ পারেননি। সবচেয়ে কাছাকাছি এসেছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের দল। স্টিভ ওয়ের বিদায়ী সিরিজে শেষ পর্যন্ত ১-১ করে ফেরে সৌরভের দল।

আরও পড়ুন: ‘দারুণ মঞ্চ পেয়েছ ঋষভ, মনে রেখো উন্নতির শেষ নেই’

সচেতনতা: গোলাপি রংয়ের ক্যাপ হাতে কোহালি। ছবি: এএফপি।

সকালের দুশ্চিন্তা দূর করলেন চায়নাম্যান কুলদীপ যাদব। প্রথম উইকেটে ৭২ রান তোলার পরে ওপেনিং জুটিকে ভাঙলেন তিনিই। উসমান খোয়াজা কার্যত উইকেট ছুড়ে দিয়ে চলে গেলেন। এর পর অন্য ওপেনার মার্কাস হ্যারিসকে ফেরালেন অন্য স্পিনার রবীন্দ্র জাডেজা। আর সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া আবার এই সিরিজের কম্পমান অস্ট্রেলিয়া হয়ে গেল। একের পর এক উইকেট পড়তে থাকল। ঝড়বৃষ্টি এসে সিডনিতে খেলা থামিয়ে দেওয়ার আগে রীতিমতো কোণঠাসা হয়ে পড়েছে অস্ট্রেলিয়া। স্কোর ২৩৬-৬। এখনও ৩৮৬ রানে পিছিয়ে। হাতে চার উইকেট। খেলার এখনও দু’দিন বাকি। একমাত্র বৃষ্টিই এখন রক্ষা করতে পারে টিম পেনের টিমকে। না হলে ৩-১ সিরিজ জেতা শুধুই সময়ের অপেক্ষা কোহালিদের জন্য।

আরও পড়ুন: কুলদীপ ‘টেক্কা’ ঠিক সময়ে কাজে লাগালেন বিরাটরা

অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে সেই সেঞ্চুরি অধরা থেকে গেল এখনও। তাদের দেশের সাংবাদিকেরাও বারবার বলছিলেন, কখনও এমন সিরিজ কভার করেননি যেখানে চতুর্থ টেস্ট হচ্ছে আর তাদের দলের কোনও ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি করতে পারেননি। এ দিনও সর্বোচ্চ স্কোর ৭৯। মার্কাস হ্যারিসের। বিপর্যয়ের মধ্যে তাঁকে নিয়েই স্বপ্ন দেখছেন শেন ওয়ার্নরা। গতকাল ফক্স স্পোর্টসে ওয়ার্ন ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে, এই সিরিজেই অস্ট্রেলিয়ার সেঞ্চুরি খরা কাটবে। সিডনিতে সেঞ্চুরি করবেন হ্যারিস। সেটা সত্যি না হলেও এ দিনও কমেন্ট্রিতে ওয়ার্ন বলেছেন, হ্যারিসকে দেখে মনে হচ্ছিল বোলিংকে শাসন করতে পারে। ‘‘ওকে দেখে আমাদের যে কোনও প্লেয়ারের থেকে ভাল লাগছে,’’ বলেন ওয়ার্ন।

কিন্তু একা হ্যারিসের উপর ভর করে মানরক্ষা হওয়া কঠিন অস্ট্রেলিয়ার। আরও উদ্বেগজনক হচ্ছে, তাদের ক্রিকেট সংসারে বাদানুবাদ শুরু হয়ে যাওয়া। গতকাল টিম পেন অভিযোগ করে গিয়েছিলেন পিচ নিয়ে। অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক মনে করেন চলতি সিরিজে যে রকম পিচ দেওয়া হয়েছে তা তাদের চেয়ে অতিথিদের বেশি সাহায্য করেছে। এ দিন অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট বোর্ডের নতুন চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার আবার তাদের অধিনায়কের অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়েছেন। সিইও কেভিন রবার্টস বলে দিয়েছেন, ‘‘পিচ ঠিকই আছে। আমরা পিচ নিয়ে কোনও বদল আনার কারণ দেখছি না। বরং আমাদের ভারতের থেকে শেখা উচিত। আমরা বিশ্বের এক নম্বর দলের বিরুদ্ধে খেলছি। ওরা দেখিয়ে দিচ্ছে কেন এক নম্বর। লম্বা দৌড়ে অস্ট্রেলিয়ার অনেক উপকার হবে, যদি ওরা ভারতের এই দলটার থেকে দেখে শিখতে পারে,’’ বলেছেন তিনি।

চাপের মধ্যে থাকা টিম পেন রান পেলেন না। স্টিভ স্মিথরা ফিরলে দলে তাঁর জায়গা থাকা নিয়েই প্রশ্ন উঠে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। খেলার দুনিয়া যে নির্মম হতে পারে তা আগে অনেক বার দেখা গিয়েছে। কে মনে রাখবে যে অস্ট্রেলিয়াকে দুঃসময়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন পেন। এ দিন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট কমেন্ট্রি করতে করতে বলেন, ‘‘আমাদের চোখের সামনে ভূপতিত হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট।’’ লক্ষ লক্ষ শ্রোতার মুখে এখন গিলক্রিস্টের মন্তব্য ঘুরছে। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে এই গ্রীষ্মে ব্যাট হাতে সবচেয়ে ধারাবাহিক প্যাট কামিন্স। এ দিনও তিনি ২৫ ব্যাটিং। জেফ থমসন তাঁর কলামে ঠিকই লিখেছেন, যে টিমের সাত নম্বর সর্বোচ্চ স্কোর করে, বুঝতে হবে সেই দলে মারাত্মক কোনও গোলমাল আছে।

ছয় উইকেটের মধ্যে তিনটে নিলেন কুলদীপ যাদব। দুটি জাডেজা। একটি মহম্মদ শামি। মানে পিচে স্পিনের ভেল্কি শুরু হয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয় ইনিংসে তা হলে কি করে টিকবেন অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা? বিশেষ করে কুলদীপকে নিয়ে কূলকিনারা খুঁজে পাচ্ছেন না তাঁরা। আরও একজন নিশ্চয়ই গভীর মনোযোগ দিয়ে দুই স্পিনারের বোলিং দেখছেন। জাডেজা-কুলদীপ জুটি এখানে ভাল কিছু করে দিয়ে যদি ভারতকে জিতিয়ে দেন, তা হলে তিনি আর অশ্বিন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে পড়তে পারেন।

যদিও অস্ট্রেলিয়া সফর সাঙ্গ হলে, ভারতের পরের টেস্ট সিরিজ প্রায় সাত মাস পরে। এর পর সবাই ঢুকে পড়বে আইপিএল আর বিশ্বকাপ গিয়ারে। তাই অশ্বিন পাজ্‌ল নিয়ে এখনই মাথা না ঘামালেও চলবে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE