Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ওপেনার-সঙ্কটে মেলবোর্নে অভিষেকের দৌড়ে মায়াঙ্ক

বিরাট কোহালির দলকেও অস্ট্রেলিয়ার রাস্তায় বেরিয়ে পড়া কোনও গাড়ি হিসেবে বর্ণনা করা যেতেই পারে। অ্যাডিলে়ডে শাসন করে জেতার পরে পার্‌থে শাসিত হয়ে হেরেছে। মেলবোর্নে স্টিয়ারিং হাতে একটা ভুল টার্ন মানেই পাঁচ হাজার ডলারের চেয়েও বড় মূল্য চোকাতে হতে পারে। হাত থেকে পিছলে যেতে পারে সিরিজই। 

চর্চা: মায়াঙ্ক এবং হনুমা। ওপেনার হিসেবে দলের অঙ্কে। ফাইল চিত্র

চর্চা: মায়াঙ্ক এবং হনুমা। ওপেনার হিসেবে দলের অঙ্কে। ফাইল চিত্র

সুমিত ঘোষ 
মেলবোর্ন শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:১৩
Share: Save:

ভুল করার শাস্তি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটেই শুধু নয়, দৈনন্দিন জীবনেও একটা নির্মমতার ছোঁয়া রয়েছে। স্টিভ স্মিথ এবং ডেভিড ওয়ার্নারেরা নিশ্চয়ই জানবেন।

শুধু অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট বোর্ডই যে বল-বিকৃতি কেলেঙ্কারির জেরে তাঁদের প্রতি নির্দয় হয়ে এক বছরের নির্বাসন দিল, এমন নয়। এখানকার রাস্তায় গাড়ি চালাতে গিয়ে সামান্য ভুলচুক করলেও সাংঘাতিক মূল্য চোকাতে হতে পারে। সামান্য বেখেয়ালবশত ‘প্রবেশ নিষেধ’ লেখা অঞ্চলে ঢুকে পড়লে জরিমানা হতে পারে পাঁচ হাজার অস্ট্রেলীয় ডলার। অর্থাৎ, ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা।

বিরাট কোহালির দলকেও অস্ট্রেলিয়ার রাস্তায় বেরিয়ে পড়া কোনও গাড়ি হিসেবে বর্ণনা করা যেতেই পারে। অ্যাডিলে়ডে শাসন করে জেতার পরে পার্‌থে শাসিত হয়ে হেরেছে। মেলবোর্নে স্টিয়ারিং হাতে একটা ভুল টার্ন মানেই পাঁচ হাজার ডলারের চেয়েও বড় মূল্য চোকাতে হতে পারে। হাত থেকে পিছলে যেতে পারে সিরিজই।

কোহালি-রবি শাস্ত্রী জমানায় সব চেয়ে বেশি বিতর্ক হয়েছে তাঁদের প্রথম একাদশ নির্বাচন নিয়ে। সেই সমালোচনার সবটা ঠিক না হলেও কোনও কোনও ক্ষেত্রে যে সত্যিই দল বাছাইয়ে ভুল হয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। যেমন কেপ টাউনে অজিঙ্ক রাহানেকে বসিয়ে রোহিত শর্মাকে খেলানো। বার্মিংহামে চেতেশ্বর পূজারাকে বসিয়ে দেওয়া। লর্ডসে মেঘলা আবহাওয়া দেখেও বাড়তি পেসার না খেলিয়ে কুলদীপ যাদবকে খেলানো।

মেলবোর্নে একই ভুল করার আর জায়গা নেই। শাস্ত্রী-কোহালিকে প্রথম নিশ্চিত করতে হবে যে, তাঁরা সঠিক প্রথম একাদশ নামাতে পেরেছেন। পার্‌থ থেকে মেলবোর্নে আসার পরে ভারতীয় দল শনিবার পর্যন্ত ছুটিতেই ছিল। ক্রিসমাস এবং নিউ ইয়ার পালনের জন্য সকলের পরিবার যোগ দিয়েছে। কিন্তু সব পার্টিই মাটি হয়ে যাবে বক্সিং ডে টেস্ট ম্যাচে সফল না হতে পারলে।

আজ, রবিবার মাঠে ফিরছেন কোহালিরা। কিন্তু বিশ্রামে থাকলেও ইয়ারা নদীর তীরে হোটেলে বসে প্রাথমিক কথাবার্তা অবশ্যই শুরু হয়ে গিয়েছে প্রথম একাদশ নিয়ে। যে যে বিষয়গুলি নিয়ে সব চেয়ে বেশি আলোচনা হওয়ার কথা, তা খোঁজার চেষ্টা হল। ধরেই নেওয়া যায়, দলের অন্দরমহলে সিংহভাগ আলোচনাই চলছে ওপেনিং নিয়ে—

রাহুল-বিজয়ের ব্যর্থতা

এক জনের দু’টেস্টের চার ইনিংসে সংগ্রহ ৪৮। অন্য জনের ৪৯। ক্রমশ পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে, এই দুই ওপেনারকে দিয়ে চলবে না। নতুন মুখ আনা দরকার। বিজয়কে ইংল্যান্ড সফরেই মাঝপথে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। নিয়ে আসা হয়েছিল পৃথ্বী শ-কে। পৃথ্বীর ভাগ্য খারাপ যে, প্রস্তুতি ম্যাচে গোড়ালিতে মারাত্মক চোট পেয়ে পুরো সিরিজ থেকেই ছিটকে গেলেন। কারও সর্বনাশ, কারও পৌষ মাস। বিজয় তাই পার্‌থ পর্যন্ত টিঁকে গেলেন।

শিখরকে নিয়ে গুজব

এমনই সঙ্কট তৈরি হয়েছে ওপেনিং নিয়ে যে, মেলবোর্নের টিম হোটেলে শিখর ধওয়নকে দেখে গুজব ছড়িয়ে যায় যে, তিনি দলের চতুর্থ ওপেনার। দরকারে তিনিও নাকি নামতে পারেন। নিজের ক্রিকেট সরঞ্জামের ব্যাগও নাকি সঙ্গে রয়েছে বাঁ হাতি ওপেনারের। যদিও খোঁজ নিয়ে জানা গেল, শিখরকে ফেরানোর কোনও ভাবনা নেই। নির্বাচকেরা মায়াঙ্ক আগরওয়ালকে পাঠিয়েছেন পৃথ্বীর বিকল্প হিসেবে, দলে না থেকে শিখর কী ভাবে খেলবেন? মেলবোর্নেই তাঁর শ্বশুরবাড়ি, ছুটি কাটাতে কাটাতেই হয়তো দেখা করতে এসেছিলেন সতীর্থদের সঙ্গে।

তাতেই জল্পনা!

বিজয়কে ফেরত আনল কে

প্রশ্ন উঠছে, ইংল্যান্ড থেকে মুরলী বিজয়কে ফেরত পাঠানোর পরেও কী ভাবে অস্ট্রেলিয়ার জন্য আবার তাঁকে নিয়ে আসা হল? এর মাঝে কাউন্টিতে রান করলেও পাল্টা প্রশ্ন তোলা যেতেই পারে যে, এখন কাউন্টি ক্রিকেটের মান অনেক নেমে গিয়েছে। বেশির ভাগ দলেই বিভিন্ন দেশের জাতীয় দল থেকে ব্রাত্যরা খেলেন। তা হলে সেখানে সাফল্যের ভিত্তিতে কী করে ভারতীয় দলে ফেরত নেওয়া হল বিজয়কে? এটা কি টিম ম্যানেজমেন্ট চেয়েছে না জাতীয় নির্বাচকদের সিদ্ধান্ত? মায়াঙ্ক আগরওয়াল নিয়মিত ভাবে ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে রান করে গিয়েছেন। পৃথ্বী শয়ের চেয়েও বেশি রান করেছেন তিনি। কারও কারও মনে হচ্ছে, বিজয়ের জায়গায় অস্ট্রেলিয়ায় শুরু থেকেই মায়াঙ্ককে আনা হলে ওপেনিং নিয়ে এই বিভ্রাট হয় না।

রোহিত না বিহারী, কে ভাল

একটা ভাবনা চলছিল যে, রোহিত শর্মাকে ওপেন করার প্রস্তাব দেওয়া হবে কি না। তিনি সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বিশ্বের অন্যতম সেরা ওপেনার। হাতের কাছে বীরেন্দ্র সহবাগের উদাহরণও আছে। কিন্তু যা খবর, এই মুহূর্তে রোহিতকে দিয়ে লাল বলে ওপেন করানোর ভাবনা হয়তো স্থগিতই রাখতে হবে। একে তো তিনি নিজে কতটা তৈরি, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। প্রস্তাব দেওয়া হলেও রাজি হবেন কি না, অনিশ্চিত। দ্বিতীয়ত, কারও কারও মত, মিডল-অর্ডার থেকে কাউকে যদি তুলে আনতেই হয়, তা হলে হনুমা বিহারী বেশ ভাল পছন্দ হতে পারেন। ওভালে এবং পার্‌থে যে রকম শৃঙ্খলাবদ্ধ ব্যাটিং করেছেন হনুমা, তাতে ওপেনারের সংযমের ছাপ রয়েছে। এই দলের হেড কোচ রবি শাস্ত্রী নিজে এগারো নম্বর থেকে উন্নীত হতে হতে এক নম্বরে ব্যাট করেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে বিশ্বত্রাস চার ফাস্ট বোলারকে নতুন বলে খেলে সেঞ্চুরি করেছেন। তিনি বিহারীকে নিজের উদাহরণ দিয়ে নতুন চ্যালেঞ্জের জন্য তৈরি করার চেষ্টা করবেন কি না, সেটাই দেখার। ও দিকে, রোহিতের স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। মেলবোর্ন টেস্টের মধ্যেই বাবা হতে পারেন ভারতের সীমিত ওভারের ক্রিকেটের সহ-অধিনায়ক। মেলবোর্ন টেস্টে না খেললে স্ত্রীর পাশে থাকতে রোহিত মুম্বই ফিরতে পারেন সফর থেকে দিন দু’তিনেকের

ছুটি নিয়ে।

মায়াঙ্ক, তৈরি থাকো

রাতারাতি খুব বড় কোনও পট পরিবর্তন না ঘটলে মেলবোর্নে নতুন ওপেনিং জুটি খেলার সম্ভাবনাই বেশি। বিজয় এবং রাহুলের মধ্যে যে কোনও এক জন বসবেন এবং সেই ফাঁকা হওয়া জায়গা নেওয়ার জন্য দারুণ ভাবেই দৌড়ে রয়েছেন মায়াঙ্ক আগরওয়াল। কেউ কেউ মনে করছেন, সোজাসুজি অস্ট্রেলিয়ায় এ রকম তীব্রতার স্তরে পৌঁছে যাওয়া হাড্ডাহাড্ডি সিরিজে তাঁকে নামিয়ে দেওয়াটা ঠিক হবে কি না? খুব ফেলে দেওয়ার মতো প্রশ্ন অবশ্যই নয়। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে নতুন কোনও ভারতীয় ওপেনারকে টেস্ট অভিষেক ঘটাতে দেখা যায়নি। অতীত যা-ই বলুক, মায়াঙ্ক ইতিহাস সৃষ্টিকারী সেই প্রথম ওপেনার হলে অবাক হওয়ার নেই।

আজ থেকে নেটে আকর্ষণ

মেলবোর্নে রবিবার থেকে নেট সেশনে আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকতে চলেছেন দু’জন। বল হাতে অশ্বিন এবং ব্যাট হাতে মায়াঙ্ক। যদি তিনি নেটে আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিং করতে পারেন, তা হলে অভিষেকের বাজনা আরও জোরালো হবে। যদি একান্তই এই পরিবেশের জন্য মায়াঙ্ককে বেমানান দেখায়, হনুমা বা রোহিতকে দিয়ে ওপেন করানোর ঝুঁকি নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে এই দু’জনের এক জন ওপেন করবেন, অন্য জন ছয় নম্বরে নামবেন। দুই ওপেনারের মধ্যে টিকে থাকার ব্যাপারে এগিয়ে রাহুল। তেমনই অশ্বিনকে হয়তো রবিবারেই ফিটনেস পরীক্ষা দিতে দেখা যাবে। টিম ম্যানেজমেন্ট সাউদাম্পটন টেস্টের পুনরাবৃত্তি চায় না। পুরো ফিট না থাকা সত্ত্বেও ধরে নেওয়া হয়েছিল অশ্বিন ফিট। কিন্তু ম্যাচ চলাকালীন দেখা যায়, তিনি সম্পূর্ণ ছন্দে নেই। অশ্বিন ব্যর্থ হলেও মইন আলি ধ্বংস করে দিয়ে যান ভারতকে। এ বারে তাই ধরে নেওয়া যায়, একশো শতাংশ ফিট না হলে অশ্বিনকে খেলানো হবে না। রবীন্দ্র জাডেজাকে নামানো হবে। যিনি থাকা মানে ব্যাট হাতে সাত নম্বরে নেমে নুইয়ে পড়া ভারতীয় টেলএন্ডার ব্যাটিংকেও চাঙ্গা করতে পারবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE