বিবদমান দু’পক্ষকে সিএবি প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়ার এক দাওয়াই। আর তাতে ‘মধুচন্দ্রিমার’ ঘোর সিএবিতে!
যে দাওয়াই প্রদানের স্থান— দশ নম্বর আলিপুর রোড। সময়— মঙ্গলবার রাত।
বুধবার সিএবিতে কাউকে কাউকে দেখা গেল, দু’পক্ষের আচমকা সম্প্রীতির ছবি দেখে বেশ অবাক। তাঁরা জানতেন না, বুধবার সিএবি ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের চেয়েও একটা গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়ে গিয়েছে বঙ্গ ক্রিকেট প্রশাসনে। যেখানে দুই যুগ্ম সচিব সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় এবং কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে-কে নিজের বাড়ি ডেকে সিএবি প্রেসিডেন্ট বলে দিয়েছেন যে, পনেরো দিন পরপর তিনি বসবেন তিন জনের সঙ্গে। কোনও ঝামেলা-ঝঞ্ঝাট হলে সেই বেঠকেই মেটাতে হবে।
শুধু তাই নয়, ওই বৈঠকে তিন জনকে ডালমিয়া কড়া ভাবে বলে দেন, সিএবি-তে এমন গোষ্ঠীদন্দ্ব চললে ইডেন আগামী বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনাল হারাতে পারে। তিন জনকে সতর্কও করে দেন সিএবি প্রেসিডেন্ট। বলে দেন যে, এ ভাবে চললে তিন জনকেই বলা হবে পদত্যাগ করতে!
যা শোনার পর সম্বিত ফেরে দু’পক্ষের। বুধবারের ওয়ার্কিং কমিটি বৈঠক নিয়ে কম আশঙ্কা ছিল না বঙ্গ ক্রিকেটমহলের। সিএবি-র বর্তমান পরিস্থিতি বিচার করে উত্তেজনার ঝড় দেখছিলেন অনেকে। কিন্তু আদতে দেখা গেল, সে সব কিছু হল না। কেউ কেউ ভেবেছিলেন সংস্থার ট্রাস্টি বোর্ড চেয়ারম্যান গৌতম দাশগুপ্ত মুখ খুলবেন, কিন্তু তিনিও শোনা গেল সে ভাবে কিছু বলেননি। কোনও উত্তেজনা তাই থাকল না। উত্তাপ ছড়াল না। শুধু সত্যিকারের সম্প্রীতি থেকে গেল।
বৈঠকের মধ্যেই সৌরভের তেতাল্লিশতম জন্মদিন উপলক্ষে কেক কাটা হল। কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ ফের সৌরভকে খাইয়ে দিলেন এবং অবশ্যই সৌরভও তাঁকে। গত চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে দু’বার। কোনও কোনও সদস্য রসিকতা করে বলে ফেললেন, দু’পক্ষে এমন কেক খাওয়ার ব্যাপার চললে বাংলা ক্রিকেটেরও ভাল হবে। দুই সচিবের মতপার্থক্য নয়, সহমতের ছবি থাকল বেশি। এবং বৈঠকে সংস্থার আর্থিক সমস্যাকে ঘিরে জবাবদিহির ‘ম্যাচ’ জেতার কৃতিত্বও কেউ একক নিলেন না। সৌরভ যেমন। মিডিয়া তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিল, বৈঠকে একা তিনি সামলে দিয়েছেন, কথাটা সত্যি কি না? উত্তরে হাসতে হাসতে সৌরভ বলে গেলেন, ‘‘আরে, বোলিং হলে তবে তো ব্যাট করব! ওটাই তো হল না।’’
প্রশ্ন বৈঠকে উঠেছে, যেমন উঠে থাকে আর পাঁচটা ওয়ার্কিং কমিটি বৈঠকে। কিন্তু কখনওই সেটা তীব্রতার চেহারা নেয়নি। সিএবির ওয়ার্কিং কমিটিতে রাজ্য সরকারের দুই প্রতিনিধি সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও সুব্রত বক্সী ছিলেন। রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানতে চান, মিডিয়ায় সিএবির গাড়ি ও খাওয়াদাওয়ার খরচ নিয়ে যে এত লেখালেখি হচ্ছে, তা নিয়ে সিএবি কী ভাবছে? যে সংস্থা গাড়ি বা খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করে তাদের চেয়ে কম খরচে কেউ দেয় কি না, খোঁজ নিয়েছে সিএবি? বলা হয়, প্রশাসনে আরও স্বচ্ছতা থাকা দরকার। বাইরের একজন অডিটর নিয়োগ করা হোক। যিনি গোটা বছর সিএবির খরচাপাতি কী হচ্ছে না হচ্ছে, খেয়াল রাখবেন। যা নাকি সমর্থন করেন সিএবি প্রেসিডেন্টও। বলেন, বাইরের অডিটর দিয়ে এ বছরের অ্যাকাউন্টসও অডিট করিয়ে নেওয়া হবে। পাশাপাশি আরও বলা হয়, তিন মাস অন্তর একটা বাজেট দেওয়া হোক ওয়ার্কিং কমিটিকে। বার্ষিক না করে বাজেটকে ত্রৈমাসিক করে ফেলা হোক। লাভ-ক্ষতির হিসেব বছরের শেষে গিয়ে নয়, আগে থেকে করা হোক।