Advertisement
E-Paper

১০ আলিপুরের বাড়িতে রাতের বৈঠকে তৈরি ছকে যুদ্ধ ভুলে সম্প্রীতির সিএবি

বিবদমান দু’পক্ষকে সিএবি প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়ার এক দাওয়াই। আর তাতে ‘মধুচন্দ্রিমার’ ঘোর সিএবিতে! যে দাওয়াই প্রদানের স্থান— দশ নম্বর আলিপুর রোড। সময়— মঙ্গলবার রাত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৫ ০৩:৪৫
জন্মদিনে সারাদিন। ​বাড়িতে কাগজের তৈরি নিজের ‘থ্রি-ডি’ মূর্তির সামনে।

জন্মদিনে সারাদিন। ​বাড়িতে কাগজের তৈরি নিজের ‘থ্রি-ডি’ মূর্তির সামনে।

বিবদমান দু’পক্ষকে সিএবি প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়ার এক দাওয়াই। আর তাতে ‘মধুচন্দ্রিমার’ ঘোর সিএবিতে!
যে দাওয়াই প্রদানের স্থান— দশ নম্বর আলিপুর রোড। সময়— মঙ্গলবার রাত।
বুধবার সিএবিতে কাউকে কাউকে দেখা গেল, দু’পক্ষের আচমকা সম্প্রীতির ছবি দেখে বেশ অবাক। তাঁরা জানতেন না, বুধবার সিএবি ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের চেয়েও একটা গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়ে গিয়েছে বঙ্গ ক্রিকেট প্রশাসনে। যেখানে দুই যুগ্ম সচিব সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় এবং কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে-কে নিজের বাড়ি ডেকে সিএবি প্রেসিডেন্ট বলে দিয়েছেন যে, পনেরো দিন পরপর তিনি বসবেন তিন জনের সঙ্গে। কোনও ঝামেলা-ঝঞ্ঝাট হলে সেই বেঠকেই মেটাতে হবে।
শুধু তাই নয়, ওই বৈঠকে তিন জনকে ডালমিয়া কড়া ভাবে বলে দেন, সিএবি-তে এমন গোষ্ঠীদন্দ্ব চললে ইডেন আগামী বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনাল হারাতে পারে। তিন জনকে সতর্কও করে দেন সিএবি প্রেসিডেন্ট। বলে দেন যে, এ ভাবে চললে তিন জনকেই বলা হবে পদত্যাগ করতে!
যা শোনার পর সম্বিত ফেরে দু’পক্ষের। বুধবারের ওয়ার্কিং কমিটি বৈঠক নিয়ে কম আশঙ্কা ছিল না বঙ্গ ক্রিকেটমহলের। সিএবি-র বর্তমান পরিস্থিতি বিচার করে উত্তেজনার ঝড় দেখছিলেন অনেকে। কিন্তু আদতে দেখা গেল, সে সব কিছু হল না। কেউ কেউ ভেবেছিলেন সংস্থার ট্রাস্টি বোর্ড চেয়ারম্যান গৌতম দাশগুপ্ত মুখ খুলবেন, কিন্তু তিনিও শোনা গেল সে ভাবে কিছু বলেননি। কোনও উত্তেজনা তাই থাকল না। উত্তাপ ছড়াল না। শুধু সত্যিকারের সম্প্রীতি থেকে গেল।

বৈঠকের মধ্যেই সৌরভের তেতাল্লিশতম জন্মদিন উপলক্ষে কেক কাটা হল। কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ ফের সৌরভকে খাইয়ে দিলেন এবং অবশ্যই সৌরভও তাঁকে। গত চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে দু’বার। কোনও কোনও সদস্য রসিকতা করে বলে ফেললেন, দু’পক্ষে এমন কেক খাওয়ার ব্যাপার চললে বাংলা ক্রিকেটেরও ভাল হবে। দুই সচিবের মতপার্থক্য নয়, সহমতের ছবি থাকল বেশি। এবং বৈঠকে সংস্থার আর্থিক সমস্যাকে ঘিরে জবাবদিহির ‘ম্যাচ’ জেতার কৃতিত্বও কেউ একক নিলেন না। সৌরভ যেমন। মিডিয়া তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিল, বৈঠকে একা তিনি সামলে দিয়েছেন, কথাটা সত্যি কি না? উত্তরে হাসতে হাসতে সৌরভ বলে গেলেন, ‘‘আরে, বোলিং হলে তবে তো ব্যাট করব! ওটাই তো হল না।’’

প্রশ্ন বৈঠকে উঠেছে, যেমন উঠে থাকে আর পাঁচটা ওয়ার্কিং কমিটি বৈঠকে। কিন্তু কখনওই সেটা তীব্রতার চেহারা নেয়নি। সিএবির ওয়ার্কিং কমিটিতে রাজ্য সরকারের দুই প্রতিনিধি সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও সুব্রত বক্সী ছিলেন। রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানতে চান, মিডিয়ায় সিএবির গাড়ি ও খাওয়াদাওয়ার খরচ নিয়ে যে এত লেখালেখি হচ্ছে, তা নিয়ে সিএবি কী ভাবছে? যে সংস্থা গাড়ি বা খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করে তাদের চেয়ে কম খরচে কেউ দেয় কি না, খোঁজ নিয়েছে সিএবি? বলা হয়, প্রশাসনে আরও স্বচ্ছতা থাকা দরকার। বাইরের একজন অডিটর নিয়োগ করা হোক। যিনি গোটা বছর সিএবির খরচাপাতি কী হচ্ছে না হচ্ছে, খেয়াল রাখবেন। যা নাকি সমর্থন করেন সিএবি প্রেসিডেন্টও। বলেন, বাইরের অডিটর দিয়ে এ বছরের অ্যাকাউন্টসও অডিট করিয়ে নেওয়া হবে। পাশাপাশি আরও বলা হয়, তিন মাস অন্তর একটা বাজেট দেওয়া হোক ওয়ার্কিং কমিটিকে। বার্ষিক না করে বাজেটকে ত্রৈমাসিক করে ফেলা হোক। লাভ-ক্ষতির হিসেব বছরের শেষে গিয়ে নয়, আগে থেকে করা হোক।

বৈঠকে প্রস্তাব দেওয়া হয়, সিএবির গাড়ির খরচ নিয়ন্ত্রণে আনতে। যেমন, কোনও কর্তা একক ভাবে আর একটা গাড়ি ব্যবহার করতে পারবেন না। বরং ওই গাড়িকেই বিভিন্ন কর্তার কাছে পাঠানো যেতে পারে। খাওয়াদাওয়ার খরচ নিয়ন্ত্রণে আনতে বলা হয়, আগাম সার্কুলার পাঠিয়ে ক্লাবদের সিএবি আগাম বলে দিক কতটা খরচ বহন সম্ভব। কেউ কেউ পরে বললেন, পুরনো ফর্মূলাতে ফেরা যেতে পারে। যেখানে সিএবির কোনও অনুষ্ঠানে ক্লাবের নির্দিষ্ট প্রতিনিধির বাইরে অন্যান্য অভ্যাগতদের আনতে গেলে তার খরচ ক্লাবকে বহন করতে হত।

আরও দু’একটা ব্যাপার নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়। যেমন, আগামী ২৭ জুলাই সিএবির বার্ষিক সভায় বোর্ড আইনজীবী উষানাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাখা হবে নির্বাচনী পর্যবেক্ষক হিসেবে। কেউ কেউ ‘ভিশন২০২০’ চালু করা সত্ত্বেও কেন বাংলা ক্রিকেটের উন্নতি হচ্ছে না, সেটা সৌরভকে জিজ্ঞেস করেন। উত্তরে বলা হয়, এটা এক-আধ দিনের ব্যাপার নয়। শোনা যাচ্ছে, সৌরভ স্বয়ং এ বার বাংলা ক্রিকেটকে সময় দেবেন বলে ঠিক করেছেন। ঘনিষ্ঠমহলে নাকি বলেওছেন যে, হেড কোচ পাওয়া গেলে ভাল। নইলে তিনিই দেখে নেবেন। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সী আবার বলেন যে, মিডিয়ায় সবার কথাবার্তা বলা বন্ধ হওয়া উচিত। কোন ব্যাপারে কে কথা বলবে, সেটা প্রেসিডেন্ট, দুই সচিব এবং কোষাধ্যক্ষ মিলে ঠিক করে নিক। শোনা গেল, দুই সচিবে সেটা নিয়ে বৈঠকে একপ্রস্থ কথাও হয়ে গিয়েছে। দু’জনেরই প্রস্তাবটা পছন্দ।

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় সম্ভবত তেতাল্লিশতম জন্মদিনটা মনে রাখবেন। বেহালার বাড়িতে তাঁর থ্রি-ডি মূর্তি বসা যদি সৌরভকে ব্যতিক্রমী জন্মদিন-সকাল দিয়ে থাকে, তা হলে বিকেলের সিএবিতে ব্যতিক্রমী আবহ পেলেন। যেখানে দ্বন্দ্ব নয়, সম্প্রীতি থেকে গেল। মধুচন্দ্রিমা থেকে গেল।

কত দিন সেটা চলে, সেটাই শুধু এখন ময়দানের জিজ্ঞাসা।

উৎপল সরকার ও শঙ্কর নাগ দাসের ক্যামেরায় সৌরভের জন্মদিনের কয়েক ঝলক

10 alipur road cab enjoyed honeymoon jagmohun dalmiya saurav ganguly cab cab conflict
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy