‘‘মহমেডানের মাঝমাঠের মুদে মুসা, দশ নম্বর (কোসি) এবং ২২ নম্বর (ছাংতে) খুব ভাল। সেটা মাথায় রাখছি।’’ বলার সময় কিবুর কপালে চিন্তার ভাঁজ। যোগ করেন, ‘‘কলকাতা লিগ আনপ্রেডিক্টেবল। যে কোনও দল যে কাউকে হারিয়ে দিচ্ছে। অবনমনে থাকা এরিয়ান আমাদের হারিয়ে দেবে ভাবিইনি। মনে হচ্ছিল লিগটা শেষ হয়ে গেল। ইস্টবেঙ্গল ড্র করায় আবার সুযোগ এসেছে। ছেলেদের বলেছি কোনও দিকে না তাকিয়ে বাকি তিন ম্যাচ জেতো।’’
ফুটবলার জীবনে বহু ডার্বি খেলেছেন মহমেডানের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর দীপেন্দু। কিন্তু জীবনে প্রথম বার কোনও বড় ম্যাচে আজ রিজার্ভ বেঞ্চে থাকবেন তিনি। দীপেন্দুও আশা এবং আশঙ্কায় দুলছেন, ‘‘ফুটবলার জীবনের চেয়েও বেশি চাপ মনে হচ্ছে। তখন শুধু গোল করার কথা ভাবতাম। এখন লাটাই আমার হাতে। কীভাবে এগারো জনকে ব্যবহার করব, বিপক্ষকে টেক্কা দেব সেটা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। আলেসান্দ্রোর চেয়েও কিবু বেশি অভিজ্ঞ। মাঝমাঠটা ভাল তৈরি করেছে।’’
খেতাবি লড়াইয়ের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের ভরকেন্দ্র লুকিয়ে রয়েছে দুটি জায়গায়। এক) লড়াইটা কার্যত স্পেনীয় বনাম আফ্রিকান ফুটবলারদের। সবুজ-মেরুনের স্টপারে ত্রিনিদাদ ও টোব্যাগোর ড্যানিয়েল সাইরাস যদি খেলেনও, জেতানোর জন্য কিবুর প্রধান অস্ত্র তিন স্পেনীয় জোসেবা বেইতিয়া, জুলেন কলিনাস বা সালভা চামোরোরা। দুই) ময়দানি কোনও ডার্বিতে বঙ্গসন্তানদের আবেগ এখনও কতটা কার্যকর তারও পরীক্ষা হবে। মহমেডানের সাত ফুটবলার বাংলার গ্রাম-গঞ্জ থেকে উঠে আসা। মোহনবাগানের দেবজিৎ মজুমদার, শেখ সাহিল, সুরাবুদ্দিন মল্লিক বা শুভ ঘোষেরও তো এটা নায়ক হওয়ার ম্যাচ হয়ে যেতে পারে।
কিবু ভিকুনার অনুশীলনে দেখা গেল, সাদা-কালোর মাঝমাঠের স্তম্ভ মুসাকে থামানোর কৌশল ঠিক হচ্ছে। খড়দহের ছেলে সাহিলকে দেওয়া হচ্ছে দায়িত্ব। আট ম্যাচে ছয় গোল করা আর্থার কোসিকে আটকানোর জন্য রক্ষণ জমাট করার রণকৌশলও তৈরি হল। দীপেন্দু আবার থামাতে চান মোহনবাগানের দুই উইং আর বেইতিয়াকে। লালরাম চুলোভাকে থামাতে বসিরহাটের বিধায়কের ‘অস্ত্র’ সামসাদ আলি নামে এক টগবগে মিডিয়ো। অন্য প্রান্তে ব্যবহার করতে চান ছাংতেকে। আর বেইতিয়াকে থামাতে জোনাল মার্কিং করার ভাবনা রয়েছে সাদা-কালো টিডির।
দু’দলেই রয়েছেন দুই সেট-পিস মাস্টার। মোহনবাগানের বেইতিয়া আর মহমেডানের তীর্থঙ্কর সরকার। পাশাপাশি আর্থার কোসির মতোই সবুজ-মেরুনের সালভা চামোরোও গোলের মধ্যে রয়েছেন। ডুরান্ড কাপে মোহনবাগান জিতেছিল এই ম্যাচে। দু’দলের কোচ এবং টিডি মানছেন সেই ম্যাচের সঙ্গে এ বারের প্রেক্ষাপট আলাদা। কিবু বলেছেন, ‘‘আমার তো দল গড়াই সমস্যা। ছ’জন বিদেশি। কাকে খেলাব, কাকে বাইরে রাখব বুঝতে পারছি না।’’ নতুন আসা স্পেনীয় জুলেনকে শুরু থেকে নামাবেন কি না সেই প্রশ্নেও নীরব।
দীপেন্দু অবশ্য ঠিক করে ফেলেছেন শুরু থেকে নামাবেন না আর্থার কোসিকে। নিজের সেরা অস্ত্রকে পরের দিকে ব্যবহার করার কথা ভাবছেন তিনি। শুরুতে জন চিডিকে নামিয়ে প্রতিপক্ষকে ধোঁয়াশায় রাখতে চান। লিগ খেতাবের লড়াইতে বেঁচে থাকতে যে ম্যাচটা জিততেই হবে দু’পক্ষকে। সেই রসায়নেই একটা ধুন্ধুমার ম্যাচ দেখার আশা করা যেতেই পারে।
তৈরি পিয়ারলেস: বারাসতে আজ, বৃহস্পতিবার দ্বৈরথ লিগ টেবলের এক নম্বরে থাকা পিয়ারলেস এবং দ্বিতীয় ভবানীপুরের। পিয়ারলেস কোচ জহর দাস বলেছেন, ‘‘এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাই না। লিগে শীর্ষস্থান ধরে রাখাই লক্ষ্য।’’
আজ কলকাতা প্রিমিয়ার লিগে: মোহনবাগান বনাম মহমেডান (যুবভারতী, বিকেল ৩.০০), পিয়ারলেস বনাম ভবানীপুর (বারাসত, দুপুর ২.৩০)।