Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
স্পিনের জাদু আর কোহালির কামালে আতঙ্কের ডারবানে জয়ের হুঙ্কার

অশ্বিনরা যদি বিশ্বকাপে যান, সেটাই হবে অঘটন

অশ্বিন, জাডেজা কি একদিনের ক্রিকেটে আর ফিরবেন: দেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা স্পিনার হয়েও ২০০৩ বিশ্বকাপে নিয়মিত ভাবে খেলা হয়নি অনিল কুম্বলের।

যুগলবন্দি: ওয়ান ডে ক্রিকেটে চলছে তাঁদের সোনার দৌড়। অশ্বিন-জাডেজাকে সরিয়ে আনা হয়েছিল কুলদীপ যাদব এবং যুজবেন্দ্র চহাল-কে। বৃহস্পতিবার ডারবানে প্রথম ওয়ান ডে-তেও কোহালির তুরুপের তাস দুই তরুণ স্পিনার। ছবি: রয়টার্স

যুগলবন্দি: ওয়ান ডে ক্রিকেটে চলছে তাঁদের সোনার দৌড়। অশ্বিন-জাডেজাকে সরিয়ে আনা হয়েছিল কুলদীপ যাদব এবং যুজবেন্দ্র চহাল-কে। বৃহস্পতিবার ডারবানে প্রথম ওয়ান ডে-তেও কোহালির তুরুপের তাস দুই তরুণ স্পিনার। ছবি: রয়টার্স

সুমিত ঘোষ
শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৪:১৫
Share: Save:

২০১৯ বিশ্বকাপের আর চোদ্দো মাস বাকি। কিন্তু বিরাট কোহালিদের সংসারে ক্রিকেটের সেরা ইভেন্টের জন্য দল গড়ার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। ক্যাপ্টেন কোহালি এবং হেড কোচ রবি শাস্ত্রীকে কঠিন সিদ্ধান্তের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন দলের দুই ‘রিস্ট’ স্পিনার— যুজবেন্দ্র চহাল এবং কুলদীপ যাদব। বিদেশের মাঠেও যাঁরা রহস্যের জাল বুনে ফেলতে শুরু করে দিলেন। ইংল্যান্ডের উড়ান থেকে কি দুই তরুণ তুর্কি অশ্বিন-জাডেজাকে ছিটকেই দিলেন? উত্তর খুঁজতে গিয়ে যা সব তথ্য, বিশ্লেষণ পাওয়া গেল—

অশ্বিন, জাডেজা কি একদিনের ক্রিকেটে আর ফিরবেন: দেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা স্পিনার হয়েও ২০০৩ বিশ্বকাপে নিয়মিত ভাবে খেলা হয়নি অনিল কুম্বলের। তখনকার অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ওয়ান ডে ক্রিকেটে স্পিনার হিসেবে প্রথম পছন্দ সব সময়ই ছিলেন হরভজন সিংহ। অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে হলেও তাই সৌরভকে বসাতেই হতো সিনিয়র কুম্বলেকে। এ বার কি কোহালিকেও সেই অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাঁর সিনিয়র স্পিনারকে নিয়ে? গতিপ্রকৃতি সে দিকেই ইঙ্গিত করছে। কুম্বলে ২০০৩ বিশ্বকাপের স্কোয়াডে ছিলেন। কিন্তু প্রথম একাদশে সৌরভের প্রথম পছন্দ ছিলেন হরভজন। এখানে এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি, অশ্বিন বিশ্বকাপের স্কোয়াডেই জায়গা পেলে অবাক হতে হবে।

মোহভঙ্গের শুরু কবে থেকে: চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে হারের পর থেকেই অশ্বিন এবং জাডেজা ব্রাত্য হয়ে গিয়েছেন কোহালিদের ওয়ান ডে দলে। স্বপ্নভঙ্গ হওয়া সেই ফাইনালে দু’জনে মিলে ১৮ ওভার বল করে ১৩৭ রান দিয়েছিলেন। সেখান থেকেই দুই স্পিন তারকার উপর আস্থা হারানো শুরু। অশ্বিন এবং জাডেজা দেশের মাঠে টেস্ট ক্রিকেটে এর পরেও সেরা বোলিং অস্ত্র থেকে গিয়েছেন। কিন্তু ওয়ান ডে-র আসন ফিরে পাননি এবং বিদেশের মাঠে টেস্ট ক্রিকেটেও অপরিহার্যতা হারাতে শুরু করে দেন। জোর দেওয়া শুরু হয় সব পরিবেশের সঙ্গে মানানসই বোলিং আক্রমণ গড়ে তোলার উপর।

ময়নাতদন্তে কী পাওয়া গিয়েছিল: চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পরেই কোহালির সঙ্গে বনিবনা না হওয়ার জেরে অনিল কুম্বলে কোচের পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হন। ভারতীয় দলের হেড কোচ হিসেবে ফিরে আসেন রবি শাস্ত্রী। শ্রীলঙ্কায় প্রথম তিনি দায়িত্ব নেন। সেখানে বোলিং কোচ বি. অরুণকে নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হারের ময়নাতদন্ত করেন। আঁতকে ওঠা সব হিসেব হাতে আসে তাঁদের। দেখা যায়, ২০১৫ বিশ্বকাপ থেকে অশ্বিন এবং জাডেজার ওয়ান ডে পারফরম্যান্স প্রবল ভাবে নিম্নমুখী। অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বকাপ খেলে আসার পর থেকে অশ্বিন ১৬টি ওয়ান ডে ম্যাচের ১৫ ইনিংসে ১৩৮.৪ ওভার বল করেছেন। পেয়েছেন মাত্র ১৮ উইকেট। গড় ৪০-এর উপর। স্ট্রাইক রেট ৪৬, অর্থাৎ প্রত্যেক উইকেট তুলতে বল নিয়েছেন ৪৬। ইকনমি রেট অর্থাৎ ওভার প্রতি রান দিয়েছেন ৫.২৭ করে। জাডেজার পরিসংখ্যান ছিল আরও উদ্বেগজনক। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে ১৮ ইনিংসে তিনি নিয়েছিলেন ১২ উইকেট। গড় ৭২.৫০। স্ট্রাইক রেট ৮২.৫। বিশ্লেষণে ধরা পড়ে, মাঝের দিকে কোনও প্রভাবই ফেলতে পারছে না এই স্পিন জুটি। উইকেট তোলার সক্রিয়তা নেই, রান আটকাতেও পারছেন না।

কেন রিস্ট স্পিনারের আবির্ভাব: বিশ্ব ক্রিকেটের দিকে তাকালে দেখা যাবে, বেশির ভাগ দল গত দু’বছর ধরেই ওয়ান ডে ক্রিকেটে রিস্ট স্পিনার (শেন ওয়ার্নের মতো যাঁরা কব্জির ব্যবহারে বল করেন, অশ্বিনের মতো আঙুলের ব্যবহার করা ফিঙ্গার স্পিনার নন) খেলিয়ে যাচ্ছে। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে ওয়ান ডে-তে সব চেয়ে সফল স্পিনাররা সবাই রিস্ট স্পিনার। ইংল্যান্ডে আদিল রশিদ। আফগানিস্তানের রশিদ খান। দক্ষিণ আফ্রিকার ইমরান তাহির। ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টও তাই ঠিক করে ওয়ান ডে দলে রিস্ট স্পিনার আনতে হবে। যারা যে কোনও পরিবেশে সফল হতে পারবে। যাদের সাফল্য পিচের ধরনের উপর নির্ভরশীল হবে না। সেই ভাবনা থেকেই যুজবেন্দ্র চহাল এবং কুলদীপ যাদবকে নিয়ে আসা হয়।

অশ্বিনদের সঙ্গে তুলনায় কুলদীপরা কোথায় থাকছেন: শ্রীলঙ্কাতে পরীক্ষামূলক ভাবে চহাল এবং কুলদীপকে নিয়ে আসার পর থেকে সোনার দৌড় চলছে তাঁদের। অশ্বিনের প্রত্যেক উইকেট নিতে লাগছিল ৪৬ বল। জাডেজার লাগছিল ৮২ বল। সেই তুলনায় কুলদীপের লাগছে ২৯ বল। চহালের লাগছে ৩১ বল। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে অশ্বিন ওভার প্রতি রান দিচ্ছিলেন ৫.২৭ করে। জাডেজাও তাই। আর কুলদীপ দিচ্ছেন ওভার প্রতি ৪.৭৭ রান। চহাল দিচ্ছেন ৪.৬০ রান। চহাল লেগস্পিনার। কুলদীপ বাঁ হাতি চায়নাম্যান। দুর্দান্ত বৈচিত্র এবং রহস্যের জালে তাঁরা সব ধরনের পরিবেশে, সমস্ত প্রতিপক্ষকে নাজেহাল করে ছাড়ছেন। বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আফ্রিকাকেও মাঝের ওভারগুলোতে চাপে ফেলে দিলেন এই দু’জন। অশ্বিন-জাডেজার চেয়ে উইকেট নেওয়ার ব্যাপারেও অনেক এগিয়ে কুলদীপ-রা। ২০১৫ বিশ্বকাপ থেকে পরের দু’বছরে ১৫ ইনিংসে অশ্বিন নিয়েছেন ১৮ উইকেট। জাডেজা ১৮ ইনিংসে নিয়েছেন ১২ উইকেট। আর কুলদীপ ১৩ ইনিংসে পেয়েছেন ২৪ উইকেট। চহাল ১৭ ইনিংসে পেয়েছেন ২৯ উইকেট। বৃহস্পতিবার ডারবানেও দক্ষিণ আফ্রিকার আটটি উইকেটের মধ্যে পাঁচটি নিয়েছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE