Advertisement
২৩ মার্চ ২০২৩
Sports News

দারুণ শুরু করেও হার চিলের, কনফেড কাপ জার্মানির

কে বলবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিল চিলে? কে বলবে জার্মান রিজার্ভ বেঞ্চের সামনে নীল শার্ট পরে দাঁড়িয়ে থাকা ভদ্রলোক সফলতম কোচ জোয়াকিম লো? চিলের খেলায় যে কোনও আতঙ্কই ছিল না। শুরু থেকে শুধু অ্যাটাক, অ্যাটাক আর অ্যাটাক।

প্রথমবারের মতো কনফেডারেশন্স কাপ চ্যাম্পিয়ন হল জার্মানি। ছবি: এএফপি।

প্রথমবারের মতো কনফেডারেশন্স কাপ চ্যাম্পিয়ন হল জার্মানি। ছবি: এএফপি।

সুচরিতা সেন চৌধুরী
শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৭ ০১:৪৭
Share: Save:

জার্মানি ১ (স্টিনডেল)
চিলে ০

Advertisement

ম্যাচ শেষে তত ক্ষণে একে একে রিজার্ভ বেঞ্চে ফিরে গিয়েছেন সকলে। ফাঁকা মাঠে তখনও দাঁড়িয়ে ব্রাভো এবং স্টেগেন।

স্টেগেনের মতো জুনিয়র গোলকিপারের কাছে আজ হারতে হয়েছে ব্রাভোকে। হয়তো শুভেচ্ছাই জানাচ্ছিলেন। জড়িয়ে ধরলেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে। গ্যালারির লাল অংশ তত ক্ষণে ভিজে উঠছে চোখের জলে। সাদা প্রান্তে তখন উৎসব। এটাই হয়তো ফুটবল। মাঠের মধ্যে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেল ভিদালের মতো উগ্র ফুটবলারকে। স্যাঞ্চেজ মুখ ঢাকলেন জার্সিতে। পাশ দিয়ে যেতে যেতে মাথায় হাত বুলিয়ে গেলেন কোনও এক জার্মান। ফুটবলের রাত শেষ হল এ ভাবেই। প্রথম বারের মতো কনফেডারেশন্স কাপ চ্যাম্পিয়ন জার্মানি।

আরও পড়ুন: চিলের বিরুদ্ধে টাইব্রেকার চায় না জার্মানি

Advertisement

বলবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিল চিলে? কে বলবে জার্মান রিজার্ভ বেঞ্চের সামনে নীল শার্ট পরে দাঁড়িয়ে থাকা ভদ্রলোকটি সফলতম কোচ জোয়াকিম লো? চিলের খেলায় যে কোনও আতঙ্কই ছিল না। শুরু থেকে শুধু অ্যাটাক, অ্যাটাক অ্যান্ড অ্যাটাক। চিলের আক্রমণে নাস্তানাবুদ হতে হল জার্মান ডিফেন্সকে। গোলের নীচে স্টেগেনও তখন ত্রস্ত। এই বুঝি তাঁকে কাটিয়ে চিলের স্ট্রাইকাররা জালে বল জড়িয়ে দিলেন। ২০ মিনিটের সেই খেলা যে একটা কাউন্টার অ্যাটাকেই অন্য মোড় নেবে তা কে জানত। কিন্তু, ফুটবলে যে সবই সম্ভব তা আবারও প্রমাণ করল কনফেডারেশন কাপের ফাইনাল। ঠিক যেমন তৃতীয় স্থানের লড়াইয়ের ম্যাচে ৯০ মিনিট পর্যন্ত ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে ২-১-এ পর্তুগালের কাছে হেরে যেতে হল মেক্সিকোকে। সেটা অঘটন নয়তো কী!

আরও পড়ুন: নাটকীয় ম্যাচে বাজিমাত পর্তুগালের


চোট পেয়ে মাঠে পড়ে রয়েছেন ভিদাল। ছবি: এএফপি।

এই ম্যাচে অবশ্য তেমন কোনও অঘটন হল না। শুধু যে গতিতে আর যে আক্রমণাত্মক ঢঙে খেলা শুরু করেছিল চিলে, একটা গোল হজম তা থেকে স্যাঞ্চেজদের ছিটকে দিল অনেক দুরে। বক্সের মধ্যে দিয়াজের পা থেকে যতটা দক্ষতার সঙ্গে বল কেড়ে নিয়েছিলেন তিমো ওয়ের্নার ঠিক ততটাই সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছিলেন স্টিনডেলকে। এখানেই আসল ভুলটি করলেন টাইব্রেকার হিরো ব্রাভো। আর সেই সুযোগই নিলেন ওয়ের্নার। চিলের ডিফেন্সকে যখন পুরোপুরি মাত দিয়ে দিয়েছে ওয়ের্নার, তখন গোলের মুখ ছোট করতে বেরিয়ে এসেছিলেন ব্রাভো। আর সেই সুযোগেই বল লক্ষ্য করে মাঝ মাঠ থেকে উঠে আসা স্টিনডেলকে বল বাড়িয়ে দেন ওয়ের্নার। তত ক্ষণে গোল ছেড়ে অনেকটাই বেরিয়ে এসেছেন ব্রাভো। ফাঁকা গোলে সহজেই বল পাঠিয়ে জীবনের সব থেকে সহজ গোলটি হয়তো করে ফেললেন এই মিডিও।

কনফেড কাপ ফাইনালে যে পথে চিলের জালে বল জড়াল জার্মানি।

চিলে ভুগল ফিনিশিং-এর অভাবে। একাধিক গোলের সুযোগ তৈরি করেও গোলের মুখ খুলতে ব্যর্থ অ্যালেক্সিস, ভিদালরা। না হলে প্রথমার্ধেই দু’গোলে এগিয়ে যায় কোপা চ্যাম্পিয়নরা। অদ্ভুত ফর্মেশনে এ দিন দল নামিয়েছিলেন পিজ্জি। চার ডিফেন্সের সামনে এক জন বাড়তি ব্লকার রেখেছিলেন। মাঝ মাঠ ও দুই ফরোয়ার্ডের মাঝখানে ভিদালকে অনেকটা ফ্রি জোনে খেলার ছাড় দিয়ে রেখেছিলেন। সবই হচ্ছিল পরিকল্পনা মতোই, শুধু গোলটাই হল না। সেখানে ৩-৪-৩-এ সফল জার্মানি। প্রথমার্ধে দুটো সুযোগ আর একটা গোল। প্রথম গোলের পরই নিশ্চিত গোলের সুযোগ গোরেৎজা নষ্ট না করলে ২-০ নিয়েই দ্বিতীয়ার্ধে নামতে পারত জার্মানি।


জয়ের উল্লাসে। ছবি: এএফপি।

চিলের মিসের পালা চলল ম্যাচের শেষ পর্যন্ত। ৮৪ মিনিটে বক্সের মধ্যে থেকে বল বাইরে পাঠালেন সাগা। গুচ্ছ গুচ্ছ মিস আর ফিনিশিং-এর অভাবই ডোবাল চিলেকে। অভিজ্ঞতাকে হারতে হল একঝাঁক জুনিয়রের কাছে। ম্যাচে উত্তেজনার পারদ এতটাই চড়ল যে ঘনঘন হাতাহাতিতে জড়ালেন দুই দলের ফুটবলাররা। সাতটি হলুদ কার্ড হল। তার মধ্যে একটি হলুদ কার্ডের সিদ্ধান্ত হল ভিডিও রেফারেলের মাধ্যমে। সবই হল দ্বিতীয়ার্ধে। শুধু গোলটাই হল না। পাঁচ মিনিট অতিরিক্ত সময় দিতে বাধ্য হলেন রেফারি। শেষ পর্যন্ত চিলে যেমন গোলের মুখ খুলতে পারল না, ঠিক তেমনই গোলের ব্যবধান বাড়াতেও ব্যর্থ জার্মানি।

কনফেডারেশন্স কাপ ফ্যাক্টস

• এই প্রথম জার্মানি ও চিলে ফাইনালে পৌঁছেছিল।

• এর আগে জার্মানির সেরা পারফর্ম্যান্স ২০০৫-এ তৃতীয় স্থান।

• সে বার মেক্সিকোকে হারিয়ে তৃতীয় হয়েছিল। এ বার মেক্সিকোকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে জার্মানি।

• ২০০৩-এ শেষ কোনও ইউরোপিয়ান দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল (ফ্রান্স)।

• দক্ষিণ আমেরিকার দল এই টুর্নামেন্টে সব থেকে বেশি সফল। এক বার আর্জেন্তিনা ও চারবার ব্রাজিল।

• এটা তৃতীয় কনফেড কাপ ফাইনাল যেখানে ইউরোপিয়ান ও দক্ষিণ আফ্রিকান দেশ মুখোমুখি হয়েছিল।

• টানা পাঁচ ম্যাচ চিলের সঙ্গে অপরাজিত থাকল জার্মানি।

• চিলে জার্মানির বিরুদ্ধে শেষ জিতেছে ১৯৬৮ সালে ফ্রেন্ডলিতে।

• এই বছর এই টুর্নামেন্টে সব থেকে বেশি গোল করেছে জার্মানি। ১৪টি।

শেষ বেলায় চিলের জোরালো আক্রমণ আটকালেন তের স্টেগেন। এ যাত্রায় ব্রাভোকে ছাপিয়ে গেলেন জার্মান গোলকিপার। কনফেডারেশন্স কাপও যে তাঁরই। গোল্ডেন বুট পেলেন জার্মানির ২১ বছরের স্ট্রাইকার তিমো ওয়ের্নার। গোল্ডেন বল পেলেন জার্মানির অধিনায়ক জুলিয়ান ড্রাক্সলার। পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দিয়েগো মারাদোনা, রোনাল্ডো (ব্রাজিল)-র মতো ফুটবলের বিশ্ব তারকারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.