E-Paper

এ বার আসছে বেঙ্গল প্রিমিয়ার লিগ, উদ্যোগী সৌরভ, দল কিনতে পারে কেকেআর, মুম্বই, লখনউ

প্রাথমিক ভাবে যা ঠিক হয়েছে, একই সঙ্গে পুরুষ ও মহিলাদের টি-টোয়েন্টি লিগ চালু করা হবে। যা অন্য কোনও রাজ্য করেনি। অন্যান্য রাজ্যে আইপিএলের ঢংয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি লিগ চালু হলেও শুধু পুরুষদের মধ্যেই তা সীমাবদ্ধ রয়েছে।

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:৩০
sourav ganguly.

চমক: বঙ্গ প্রতিভাদের তুুলে আনতে অভিনব উদ্যোগ প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক সৌরভের। —ফাইল চিত্র।

বঙ্গ ক্রিকেটে বিপ্লবের হাওয়া তুলে এ বার আসতে চলেছে বেঙ্গল প্রিমিয়ার লিগ। আইপিএলের ঢংয়ে রাজ্যভিত্তিক টি-টোয়েন্টি লিগ, যা পাল্টে দিতে পারে এ রাজ্যের ক্রিকেট মানচিত্রই। রাজ্য ক্রিকেট সংস্থা সিএবি-র এই উদ্যোগের নেপথ্যে অন্যতম প্রধান ভূমিকায় রয়েছেন স্বয়ং সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, তাই বড়সড় প্রকল্পই হতে চলেছে বলে ওয়াকিবহাল মহল আশা করছে। যদি নমুনা দরকার হয়, তা হলে বলে ফেলা যাক প্রথম বছর থেকেই বাংলা প্রিমিয়ার লিগের দেশের প্রথম সারির ক্রীড়া চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার হওয়া প্রায় ৯৯ শতাংশ নিশ্চিত।

প্রাথমিক ভাবে যা ঠিক হয়েছে, একই সঙ্গে পুরুষ ও মহিলাদের টি-টোয়েন্টি লিগ চালু করা হবে। যা অন্য কোনও রাজ্য করেনি। অন্যান্য রাজ্যে আইপিএলের ঢংয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি লিগ চালু হলেও শুধু পুরুষদের মধ্যেই তা সীমাবদ্ধ রয়েছে। সিএবি ঠিক করেছে, একই সঙ্গে পুরুষদের লিগ হবে ইডেনে। আর মেয়েদের লিগ হবে সল্ট লেক যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস মাঠে। মেয়েদের ফাইনাল হবে ইডেনে। একই দিনে দু’টি করে ম্যাচ করা হতে পারে। প্রথম বছরে পুরুষদের লিগে থাকবে আটটি দল, মহিলাদের ছ’টি। তার পরে মেয়েদের দলের সংখ্যা বাড়ানো হতে পারে।

সৌরভ তো আছেনই, গত কয়েক বছর ধরে সিএবি-র তরফে প্রেসিডেন্ট স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় এবং প্রাক্তন ক্রিকেটার ও সিএবি কর্তা সঞ্জয় দাস মিলে এই লিগের নকশা সাজাচ্ছেন। গত বছরই ভারতীয় বোর্ডের অনুমোদন তাঁরা পেয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু সব কিছু গুছিয়ে ওঠা যায়নি বলে চালু করা যায়নি। এ বার আশা করা হচ্ছে নতুন বছরে জুন মাসে লিগ চালু করা যাবে। তার জন্য যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সমস্ত আয়োজন সম্পূর্ণ করতে মাঠে নেমেছেন স্নেহাশিস, সঞ্জয়রা। সম্ভবত নতুন বছরের জানুয়ারিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে নতুন লিগ চালু করার কথা ঘোষণা করবে সিএবি। পুরুষদের লিগের নেতৃত্বে যেমন সৌরভ, তেমনই মেয়েদের লিগের মুখ হবেন
ঝুলন গোস্বামী।

কারা হতে চলেছে বাংলা প্রিমিয়ার লিগের দল? এখানেও বড়সড় চমকের সম্ভাবনা রয়েছে। সৌরভের মাধ্যমে সিএবি কথাবার্তা বলছে আইপিএলের কয়েক জন নামী ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি মালিকের সঙ্গে। তার মধ্যে শাহরুখ খানের কলকাতা নাইট রাইডার্স রয়েছে। অম্বানীদের মুম্বই ইন্ডিয়ানস আছে। সঞ্জীব গোয়েন্‌কার লখনউ সুপার জায়ান্ট্স রয়েছে। এই তিনটি ফ্র্যাঞ্চাইজ়ির শীর্ষ স্তরে কথা বলেছেন সৌরভ নিজে। তারা আগ্রহও প্রকাশ করেছে বঙ্গ লিগে দল কেনার ব্যাপারে।

অন্যান্য কয়েকটি রাজ্যে টি-টোয়েন্টি লিগ চালু হয়ে গেলেও কোথাও আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজ়িদের দল নেই। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের তরফে এমন কোনও নিয়ম নেই যে, আইপিএলের দল রাজ্য লিগে অংশ নিতে পারবে না। বোর্ডের তরফে যে সব বিধিনিষেধ রয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য মূলত দু’টি। এক) আইপিএল শেষ হওয়ার পরে অন্তত ১৪ দিন পরে রাজ্য লিগ চালু করতে হবে। দুই) শুধু নিজেদের রাজ্যের ক্রিকেটার, কোচ, সহকারী কোচেদেরই রাখা যাবে। বাইরে থেকে না আনা যাবে কোনও ক্রিকেটার, না ভাড়া করা যাবে কোচ। অর্থাৎ, রোহিত শর্মা বা বিরাট কোহলিকে এনে খেলাতে পারবে না বাংলা প্রিমিয়ার লিগ। এ রাজ্যের অভিমন্যু ঈশ্বরন, অনুষ্টুপ মজুমদার, মুকেশ কুমারদের দিয়েই কাজ চালাতে হবে।

সিএবি সেই বিধিনিষেধ মাথায় রেখেই নকশা সাজাচ্ছে। তাই এ বারেও বোর্ডের অনুমোদন পেতে বিশেষ বেগ পেতে হবে না বলেই অনুমান। সিএবি কর্তারা জোর দিচ্ছেন নতুন প্রতিভা তুলে আনার উপরে। যারা জাতীয় স্তরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্য হবে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য আইপিএল এ বারে আগে শুরু হয়ে যাচ্ছে। মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে শেষ হয়ে যেতে পারে আইপিএল। তাই জুনের মাঝামাঝি লিগ চালু করতে চায় সিএবি। যাতে বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগে প্রতিযোগিতা সম্পূর্ণ করে ফেলা যায়। সেপ্টেম্বর এলেই আবার ঘরোয়া ক্রিকেট শুরু হয়ে যাবে। তখন সেরা খেলোয়াড়দের পাওয়া যাবে না। কলকাতার একটি পাঁচ তারা হোটেলের সঙ্গে চুক্তি করা হচ্ছে। প্রতিযোগিতা চলাকালীন পুরুষ ও মহিলাদের প্রত্যেকটি দলের সব সদস্যই সেই হোটেলে থাকবেন। কেউ বাড়ি থেকে এসে খেলতে নেমে গেলেন, এমন অপেশাদারিত্বকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।

প্রত্যেকটি দলে ২০ জন করে ক্রিকেটার রাখা হবে। প্রথম বছরে কোনও নিলাম করা হচ্ছে না। ক্রিকেটারদের নির্দিষ্ট মূল্য বেঁধে দেওয়া হচ্ছে যাতে আকাশছোঁয়া দর-টর পেয়ে কোনও উঠতি প্রতিভার দুম করে মাথা ঘুরে না যায়। ড্রাফ্টিংয়ের মাধ্যমে ক্রিকেটারদের নিতে পারবে আটটি দল। ড্রাফ্টিংয়ে পালা করে ভাল ক্রিকেটার নেওয়ার সুযোগ পায় ফ্র্যাঞ্চাইজ়িরা। অর্থাৎ, যদি ‘এ’ ওপেনার বিভাগে প্রথমে বেছে নেওয়ার সুযোগ পায়, তা হলে ‘বি’ মিডল অর্ডারে প্রথম ডাকবে। এ রকম করে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে সকলেই সমান ভাবে পছন্দ অনুযায়ী ভাল ক্রিকেটার নিতে পারবে, যাতে কোনও দলই খুব শক্তিশালী বা দুর্বল না হয়ে যায়।

প্রত্যেক দলে এক জন করে ‘মার্কি প্লেয়ার’ থাকবে। রাজ্যের সেরা তারকাদের মধ্যে থেকে আট জনকে বেছে নেওয়া হবে। কতগুলি নাম লিখেই দেওয়া যায়, যেমন এই মুহূর্তে ভারতীয় দলের সদস্য দুই বোলার মুকেশ কুমার ও আকাশ দীপ, বাঁ হাতি অলরাউন্ডার শাহবাজ় আহমেদ, অভিমন্যু ঈশ্বরন। অভিজ্ঞদের মধ্যে মনোজ তিওয়ারি,
অনুষ্টুপ মজুমদার। তেমনই কোচ হিসেবে দেখা যেতে পারে লক্ষ্মীরতন শুক্ল-কে। অথবা কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি মনে করতে পারে অরুণ লালকে কোচ করে আনবে। সম্পূর্ণ ভাবে তাদের ব্যাপার। তবে প্রত্যেক দলে কোচ, সহকারী কোচ, ফিজ়িয়ো ও ট্রেনার বাধ্যতামূলক। বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞ আনায় বিধিনিষেধ থাকলেও সিএবি ভেবে রেখেছে নামীদের এনে ওয়ার্কশপ করাবে। যেমন জন্টি রোডস হয়তো কোনও দলের সঙ্গে পাকাপাকি ভাবে যুক্ত হতে পারবেন না, কিন্তু তিনি এসে ফিল্ডিংয়ের পাঠ তো দিয়ে
যেতেই পারেন।

প্রত্যেক দলের প্রথম একাদশে এক জন করে জেলার ক্রিকেটার ও এক জন অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটার বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হচ্ছে যাতে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত ও বয়সভিত্তিক স্তর থেকে নতুন নতুন প্রতিভা তুলে আনার উপরে জোর দেওয়া যায়। তেমনই পরিষ্কার করে দেওয়া হবে, প্রত্যেক দলে কত জন বাংলার হয়ে খেলা ক্রিকেটার থাকবে, কত জন প্রথম ডিভিশন থেকে থাকতে পারে। সেই অনুযায়ী মূল্যও ধার্য
করে দেওয়া হবে।

কাছাকাছি অবস্থিত তিন-চারটি জেলাকে বেছে নিয়ে তৈরি করা হবে একটি অঞ্চল। দলগুলি বাছা হবে সেই অঞ্চল ভিত্তিক। ‘মার্কি প্লেয়ার’ যেখানকার বাসিন্দা, সেই অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত হবেন। যে ভাবে শুরুর দিকে আইপিএলে ‘আইকন প্লেয়ার’ বাছা হয়েছিল। সৌরভ ছিলেন কলকাতার, সচিন মুম্বইয়ের, দ্রাবিড় বেঙ্গালুরুর বা লক্ষ্মণ হায়দরাবাদের। শোনা যাচ্ছে, আইপিএলের ঢংয়ে চিত্রজগতের তারকাদেরও যুক্ত করা হতে পারে ক্রিকেটের সঙ্গে বিনোদন মিশিয়ে আরও রঙিন মোড়ক উপহার দেওয়ার জন্য। কারও কারও পরামর্শ, টলিউডের নামী তারকাদের দিকে না এগিয়ে সিরিয়ালের জুটিদের কথা ভাবা হোক। যাতে তরুণ প্রজন্মকে আরও যুক্ত করা যায় লিগের সঙ্গে। টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার তো হবেই, রাখা হচ্ছে ডিআরএস প্রক্রিয়াও। শোনা গেল, লিগের গুণগত মানের সঙ্গে কোনও রকম আপস করতে চান না স্বয়ং সৌরভ।

সত্যিই কি বাংলা প্রিমিয়ার লিগ বা বিপিএল নতুন জোয়ার এনে দিতে পারবে বঙ্গ ক্রিকেটে? সময় বলবে। আপাতত এটুকু বলা যায় যে, দুবাইয়ে হওয়া সদ্য নিলাম চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে রাজ্য ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি লিগ কেমন সোনা ফলাচ্ছে। সদ্য চালু হওয়া উত্তরপ্রদেশ টি-টোয়েন্টি লিগ থেকে যেমন উত্থান ঘটল সমীর রিজ়ভির। মাত্র ২০ লক্ষের প্রাথমিক দর নিয়ে নিলামে ঢুকেছিলেন রিজ়ভি। তীব্র দরাদরির পরে চেন্নাই সুপার কিংস কিনল ৮.৪ কোটি টাকায়। শুভম দুবে বিক্রি হলেন ৫.৮০ কোটিতে। বাংলার গোকুলে বাড়ছে না কোনও রিজ়ভি বা দুবে, কে বলতে পারে! বঙ্গে নতুন লিগ এলে তাঁদের মঞ্চের অভাবে অবহেলায়, অনাদরে পড়ে থাকার দিন তো অন্তত শেষ হবে!

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Sourav Ganguly CAB Cricket

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy