Advertisement
২১ মার্চ ২০২৩
Women's T20 World Cup

ডাইনি অপবাদ সয়েছেন মা, তাঁরই কন্যা বিশ্বকাপ জয়ের সৈনিক, অর্চনা জীবনযুদ্ধেও অনন্যা

২০০৭ সালে অর্চনার বাবা শিবরাম মারা যান। শুধু স্বামী নয়, ছেলেকেও হারিয়েছেন সাবিত্রী। ছ’বছর আগে সাপের কামড়ে প্রাণ হারান অর্চনার ভাই বুদ্ধিমান। এর পরেই সাবিত্রীকে দেওয়া হত ডাইনি অপবাদ।

Indian U19 cricketer Archana Devi and her mother

২০০৭ সালে অর্চনার বাবা শিবরাম মারা যান। শুধু স্বামী নয়, ছেলেকেও হারিয়েছেন সাবিত্রী। ছবি: টুইটার

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২৩ ১৩:৪৫
Share: Save:

অনূর্ধ্ব-১৯ মেয়েদের বিশ্বকাপ জিতে নিয়েছেন অর্চনা দেবী। উত্তরপ্রদেশের মেয়ে এখন তাঁর গ্রাম উন্নাওয়ের মুখ। তাঁকে দেখে অনুপ্রাণিত হবে আরও মেয়ে। কিন্তু একটা সময় তাঁর মা সাবিত্রী দেবীকে দেওয়া হত ডাইনি অপবাদ। করা হয়েছে কটূক্তি। সেই সব সহ্য করেও মেয়েকে তৈরি করেছেন সাবিত্রী।

Advertisement

২০০৭ সালে অর্চনার বাবা শিবরাম মারা যান। শুধু স্বামী নয়, ছেলেকেও হারিয়েছেন সাবিত্রী। ছ’বছর আগে সাপের কামড়ে প্রাণ হারান অর্চনার ভাই বুদ্ধিমান। এর পরেই সাবিত্রীকে দেওয়া হত ডাইনি অপবাদ। বলা হত মেয়েকে ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সেই মেয়েই রবিবার ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দু’টি উইকেট তুলে নেন।

মেয়েকে মোরাদাবাদে কস্তুরবা গাঁধী গার্লস স্কুলে পাঠিয়েছিলেন সাবিত্রী। সেখানে হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করতেন অর্চনা। সাবিত্রী বলেন, “মেয়েকে যখন পড়াশোনার জন্য বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম, সেই সময় অনেকে আমাকে বলত যে, মেয়েকে বেচে দিয়েছে। খারাপ কাজে নামিয়ে দিয়েছে মেয়েকে। আমার মুখের উপর বলত সকলে।”

এখন পরিস্থিতি পাল্টে গিয়েছে। সাবিত্রীর বাড়ি বসে তাঁরা মেয়ের ফাইনাল ম্যাচ দেখেছে। সাবিত্রী বলেন, “আমার বাড়ি এখন অতিথিতে ভর্তি থাকে। সকলকে বসতে দেওয়ার জায়গা নেই আমার। যে প্রতিবেশীরা আমার বাড়িতে এক গ্লাস জল খেত না, তারা আমাকে কাজে সাহায্য করছে।” অর্চনার দাদা রোহিত কুমার বলেন, “মাকে প্রতিবেশীরা ডাইনি বলত। বলত বাবাকে খেয়েছে, ছেলেকে খেয়েছে। অপয়া মনে করত। মাকে দেখে রাস্তা পাল্টে নিত। আমাদের বাড়িটাকে ডাইনি বাড়ি বলত।” লকডাউনের সময় কাজ হারান রোহিত। তিনি বলেন, “প্রতি বছর আমাদের এখানে বন্যা হয়। বেশির ভাগ সময়ে আমাদের চাষের জমি ভর্তি থাকে গঙ্গার জলে। আমাদের একটা গরু আর একটা মোষ রয়েছে। সেই দুধ বিক্রি করেই দিন চলত। মা না থাকলে আমরা বাঁচতেই পারতাম না। মা জোর করে আমাকে স্নাতক পাশ করিয়েছে। এখন চায় যাতে আমি সরকারি চাকরির জন্য পড়াশোনা করি।”

Advertisement

প্রচুর বাধা থাকলেও এগিয়ে গিয়েছেন সাবিত্রী। তিনি শুধু একটি কথাই মাথায় রেখেছিলেন। সাপের কামড়ে মারা যাওয়া তাঁর আরেক ছেলে বুদ্ধিমানের শেষ ক’টা কথা। বুদ্ধিমান মারা যাওয়ার আগে বলেছিলেন, “অর্চনা যেন ওর স্বপ্ন সত্যি করতে পারে।” বুদ্ধিমানের সঙ্গেই ক্রিকেট খেলতেন অর্চনা। এক বছরের বড় ছিলেন বুদ্ধিমান। অর্চনার মারা বল একটি নির্মীয়মাণ বাড়ির মধ্যে ঢুকে যায়। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে যা ওই অবস্থাতেই পড়ে ছিল। প্রতি বার সেখান থেকে ব্যাট ঢুকিয়ে বল নিয়ে আসত বুদ্ধিমান। কিন্তু সে বার হাত ঢোকায়। কোবরার ছোবল খায় হাতে। রোহিত বলেন, “আমার কোলের উপর শুয়ে ভাই মারা যায়। ও বলেছিল অর্চনাকে ক্রিকেট খেলাও। বুদ্ধিমান মারা যাওয়ার পর থেকে অর্চনা ক্রিকেট নিয়ে অনেক বেশি ভাবতে থাকে। সারা দিন ক্রিকেট নিয়েই থাকত। মা কখনও বাধা দেয়নি।”

অর্চনার বিশ্বজয়ের দিনে সাবিত্রী দেবীর ঘর ভড়ে গিয়েছিল অতিথিতে। সকলে বলছিল, “তোমাদের কপাল খুলে গেল।” এর মাঝেই মা এবং ছেলে মিলে ২০-২৫ জনের খাওয়ার ব্যবস্থা করতে ব্যস্ত রইলেন। ২১ বছরের রোহিত বলেন, “আমার মায়ের মন খুব বড়। যারা মাকে এক পয়সা দিয়ে সাহায্য করেনি, তারাই আজ অতিথি হয়ে এসেছে। আর সকলকে মা চা খাওয়াচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.