Advertisement
E-Paper

জীবন বাজি রেখে ভারোত্তোলনে সোনা জয় আর এক চানুর

চার বছর আগে গ্লাসগো গেমসে ৪৮ কেজি বিভাগে সোনা জিতেছিলেন। সেই আলো  হঠাৎ-ই নিভে গিয়েছিল সঞ্জিতার জীবনে। পাতিয়ালার শিবিরে অনুশীলনের সময় পিঠে এবং কোমরে ব্যথা শুরু হয় তাঁর। ‘

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:৪২
সেরা: কমনওয়েলথ গেমসে ভারতকে ফের সোনা এনে দিলেন সঞ্জিতাও। শুক্রবার গোল্ড কোস্টে। ছবি: পিটিআই

সেরা: কমনওয়েলথ গেমসে ভারতকে ফের সোনা এনে দিলেন সঞ্জিতাও। শুক্রবার গোল্ড কোস্টে। ছবি: পিটিআই

ক্লিন অ্যান্ড জার্ক বিভাগে লিফট (ওজন তোলা) করতে গিয়ে হঠাৎ-ই যন্ত্রণায় কুকড়ে গিয়েছিল সঞ্জিতা চানু-র শরীর। ‘স্ন্যাচ’ বিভাগে রেকর্ড গড়ে সোনা জয়ের যখন হাতছানি, তখন যে এ ভাবে পিঠের ব্যথা বেড়ে যাবে ভাবতেই পারেননি মণিপুরী মেয়ে। তবুও সংকল্পে অটল থাকলেন শেষ তিনটে লিফট করার সময়। কার্যত জীবন বাজি রাখলেন সোনা জিততে। শুধু মনের জোরে তুলে ফেললেন মোট ১৯২ কেজি ওজন। রেকর্ড হল না ঠিক। কিন্তু সোনা গলায় ৫৩ কেজি বিভাগে বিজয় স্তম্ভে দাঁড়াতে অসুবিধা হল না তাঁর।

‘‘যন্ত্রণা প্রচণ্ড বেড়ে গিয়েছিল ওই সময়। তা সত্ত্বেও জেদ চেপে গিয়েছিল সমালোচকদের জবাব দেওয়ার কথা ভেবে। ঠিক করেছিলাম, সোনা জিততেই হবে। তাতে সারা জীবনের মতো পোডিয়াম থেকে যদি দূরে সরে যেতে হয়, সরে যাব,’’ ভারতীয় সময় শুক্রবার সকাল দশটায় অস্ট্রেলিয়ার গোল্ড কোস্ট থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় তাঁর পদক জেতার নেপথ্যের কথা এ ভাবেই শোনাচ্ছিলেন ভারোত্তোলনের আর এক সোনার মেয়ে। মীরাবাঈ চানুর প্রায় সম বয়সী আর এক চানু—সঞ্জিতা। দুই চানুর গ্রামের দূরত্ব অবশ্য বাসে সাড়ে চার ঘণ্টার। মেরি কমের পর দু’দিনে দুই মণিপুরি মেয়ের উত্থান নতুন এক ভাবনার জন্ম দিয়ে গেল ভারতীয় খেলায়। তা হল, শক্তির খেলায় পাহাড়ের মেয়েরাই এখন দেশের মুখ।

চার বছর আগে গ্লাসগো গেমসে ৪৮ কেজি বিভাগে সোনা জিতেছিলেন। সেই আলো হঠাৎ-ই নিভে গিয়েছিল সঞ্জিতার জীবনে। পাতিয়ালার শিবিরে অনুশীলনের সময় পিঠে এবং কোমরে ব্যথা শুরু হয় তাঁর। ‘‘গত দু’বছর আমি শুধুই ডাক্তার আর ফিজিও-র কাছে সময় কাটিয়েছি। অনুশীলন করতে গেলেই ব্যথা হত। কাঁদতে কাঁদতে বসে পড়তাম। এ বারের কমনওয়েলথের জন্য প্রস্তুতি নিতে পেরেছি তিন মাস,’’ গোল্ড কোস্টের স্টেডিয়ামে তাঁকে নিয়ে উচ্ছ্বাসের মধ্যেই অনর্গল সঞ্জিতা।

রিও-তে যোগ্যতামাণ পাননি। গত বছর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপেও ব্যর্থ। কেন এরপরও তাঁকে জাতীয় শিবিরে রাখা হবে তা নিয়ে সমালোচনায় ঝড় উঠেছে সাইয়ের অন্দরে। সেটা ভোলেননি পাহাড় ঘেরা গ্রামের মেয়ে। ইম্ফল থেকে কাকচিং খুনোও গ্রাম প্রায় তিনশো কিলোমিটার। সঞ্জিতার বাবা এখনও চাষ করেন জমিতে। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে তিনি তিন নম্বর। ‘‘কর্ণম মালেশ্বরী আমার আইডল। ছোটবেলায় ওঁর ছবি কেটে কেটে দেওয়ালে আটকে রাখতাম। তখন তো মালেশ্বরীদিদিই ছিলেন আমার প্রেরণা।’’ এর পরের কথাগুলো সঞ্জিতা বলে চলেন কিছুটা গল্পের মতো। ‘‘এক দিন মাম্মির কাছে আবদার করলাম আমাকে সাই সেন্টারে ভর্তি করে দাও। আমি মালেশ্বরী হব! মা নিয়ে গেলেন ইম্ফলে। ট্রায়াল দিয়ে ভর্তি হয়ে গেলাম। এরপর জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়ে পাতিয়ালা শিবিরে।’’ বিদ্যুৎ-হীন প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে গোল্ড কোস্টের আলোর নীচে দুই চানুর চমকপ্রদ প্রত্যাবর্তন এবং সোনা জয়। তাদের এই উত্থানের রসায়ন অবশ্য ফাঁস করলেন চিফ কোচ বিজয় শর্মা।

মণিপুরের পাহাড়ে যে নিয়মিত ‘শক্তি’-র এই ফুল ফুটছে, এর পিছনে আছে চরম দারিদ্র আর আর্থ সামাজিক অবস্থা। ছাত্রীদের পদক জেতানোর মূল কারিগর বিজয় ফোনে বলছিলেন, ‘‘বাড়িতে অনেক ছেলে মেয়ে। তাদের পেট পুরে খেতে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই মণিপুরের প্রায় সব পরিবারের বাবা-মা চেষ্টা করেন বয়স দশ-এগারো হলে সাইতে ভর্তি করতে। এখানে থাকা-খাওয়ার পয়সা লাগে না। সফল হলে চাকরি বাধা। বক্সিং, ভারোত্তোলনের ট্রেনিং সেন্টার আছে ওখানে। কোচেরা সেটা দারুণভাবে কাজে লাগাচ্ছে। তার সুফল পাচ্ছে দেশ।’’

Khumukcham Sanjita Chanu সঞ্জিতা চানু Commonwealth Games 2018
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy