Advertisement
E-Paper

খেলার টানেই খেলোয়াড় গড়ে তোলার সঙ্কল্প ইতির

পরিকাঠামোহীন মাঠেই প্রশিক্ষণ নিয়ে রাজ্য ও জাতীয় স্তরে সাফল্যের স্বপ্নে বিভোর নয়াগ্রামের তন্ময় ঘোষ, লালগড়ের তুষ্ট মাহাতোরা।

সুমন ঘোষ

শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:১৪
প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন ইতি বর্মন। —নিজস্ব চিত্র।

প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন ইতি বর্মন। —নিজস্ব চিত্র।

পরিকাঠামোহীন মাঠেই প্রশিক্ষণ নিয়ে রাজ্য ও জাতীয় স্তরে সাফল্যের স্বপ্নে বিভোর নয়াগ্রামের তন্ময় ঘোষ, লালগড়ের তুষ্ট মাহাতোরা। তাঁদের এ স্বপ্ন সফল করতে উঠেপড়ে লেগেছেন মেদিনীপুরের দেশবন্ধুনগর এলাকার বাসিন্দা মাস্টার অ্যাথলিট ইতি বর্মন।

এবড়োখেবড়ো মাঠ আগাছা-ভরা। মাঝখান দিয়ে যাতায়াতের রাস্তা। তার মাঝে প্রশিক্ষণ চলছে শট পার্ট ও ডিসকাস ছোড়ার। এক কোণে বালি ফেলে লং জাম্প। মাঠের কোন দিক থেকে কে এসে পড়বে বোঝা কঠিন। চার দিক লক্ষ করে ডিসকাস ছুড়তে হয়। এতে অনুশীলনে ব্যাঘাত ঘটে। মনোনিবেশ নষ্ট হয়। আগাছা পরিষ্কার করে তৈরি হয়েছে লংজাম্পের বেড। ইতিদেবীর আন্তরিকতায় পরিকাঠামো প্রতিবন্ধকতা ভুলে সেখানে সাফল্যের স্বপ্নে মসগুল তুষ্টরা। সাফল্য মেলেনি এমন নয়। নয়াগ্রাম ব্লকের ধুমসাইয়ের তন্ময় ঘোষ ২০১৫ সালে রাজ্য স্তরের প্রতিযোগিতায় ১০০ মিটার দৌড়ে সোনা পান, ২০০ মিটার দৌড় ও লং জাম্পে তৃতীয় হয়েছিলেন। ২০১৪ সালে স্কুল ন্যাশনালে শট পার্টে অনূর্ধ্ব ১৪ বিভাগে চতুর্থ হয় বীরেশ্বর সাহা, ২০১৬ সালে অল ইন্ডিয়া ক্লাব অ্যাথলেটিক্স গেমসে ট্রায়াথালানে চতুর্থ হন কঙ্কন রায়। সামনেই রয়েছে রাজ্য অ্যাথলেটিক্সের ওপেন মিট।

নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে আর্থিক দিকেও। খেলার প্রতি টানে ও গরিব শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে দেশবন্ধুনগর আথলেটিক্স কোচিং সেন্টার খোলার কথা মাথায় আসে ইতি দেবীর। এখন সেখানে শিক্ষার্থী ২২ জন। খেলার সূত্রেই রেলে চাকরি করেন। ২০১১ সালে শ্রীলঙ্কায় বয়স্কদের এশিয়ান গেমসে শর্ট পাট, ডিসকাসে স্বর্ণপদক পান। ২০১২-তে আমেরিকায় নিজের পছন্দের বিভাগে নামতে পারেননি। তা সত্ত্বেও চতুর্থ হয়েছিলেন।

খেলার প্রতি ভালবাসার টানেই এখন খেলোয়াড় গড়েন ইতি দেবী। তাঁর তৈরি দেশবন্ধুনগর অ্যাথলেটিক্স কোচিং সেন্টারে নিখরচায় প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি জুতো, পোশাক এমনকী সরঞ্জামও কিনে দিতে হয় মাইনের টাকা থেকে। দূর থেকে আসা শিক্ষার্থীর থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে হয়। লালগড়ের ধরমপুর থেকে দৌড়ের প্রশিক্ষণ নিতে আসেন তুষ্ট মাহাতো। শুক্রবার এসে ইতিদেবীর বাড়িতে থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে রবিবার বিকেলে বাড়ি ফেরেন। ধুমসাইয়ের তন্ময় থাকেন সেখানেই। তন্ময়, তুষ্টের কথায়, “দিদি না থাকলে কিছুই হত না। প্রশিক্ষণে টাকা তো লাগেই না, উল্টে নানা সরঞ্জাম কিনে দেওয়া ও থাকা-খাওয়ার খরচ দেন দিদিই।”

ইতিদেবী বলেন, “এ ছাড়া উপায় বা কী। আমি খেলা ভালবাসি। একটি প্রতিভা হারিয়ে যাবে, তা দেখতে পারব না। যতটা সম্ভব চেষ্টা করি। টাকার অভাবে উন্নত সরঞ্জাম কিনতে পারি না। তা পেলে আরও ভাল ফল হত।” তিনি জানান, কিছু ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের যুব কল্যাণ দফতর খেলার সামগ্রী দিয়ে সাহায্য করেছে। হয়তো তা আরও মিলত। তবে তার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়ার নির্দিষ্ট মাঠ দেখাতে হয়। এখানে খোলা মাঠে প্রশিক্ষণ করানোয় তা মেলেনি।

তবু হাল ছাড়ার পাত্রী নন ইতি। নিজের খরচেই তিনি খেলোয়াড় গড়ে চলেছেন। আর স্বপ্ন দেখছেন আধুনিক ও উন্নত মানের অ্যাথলেটিক্স কোচিং সেন্টারের, যেখানে অনুশীলন করে নানা স্তরে সফল হচ্ছেন তাঁর ছাত্রেরা।

Sports Players
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy