Advertisement
০৮ মে ২০২৪
ফোর্থ আম্পায়ার

আট বছর আগের ওই দিনটা নিশ্চয়ই ধোনি ভুলে যায়নি

৩২ বছর আগে কপিল’স ডেভিলসের বিশ্বজয়ী টিমে তিনিও ছিলেন। এ বার ধোনিদের মিশন নিয়ে আনন্দবাজারে এক্সক্লুসিভ কাপ আড্ডায় দিলীপ বেঙ্গসরকর১৭ মার্চ, ২০০৭ আজ, মঙ্গলবার থেকে ঠিক আট বছর আগের ওই সন্ধের কথা বারবার মনে পড়ছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপে ভারতের প্রথম ম্যাচ। আর তখন আমি দেশের প্রধান নির্বাচক। দারুণ আগ্রহ নিয়ে বাড়ির টিভিতে বাংলাদেশ ম্যাচটা দেখতে বসেছিলাম। টস জিতে যখন ভারত আগে ব্যাট করতে নামল, তখনও বুঝতে পারিনি কী বিপর্যয় অপেক্ষা করে আছে দেশের ক্রিকেটের জন্য।

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৫ ০৪:৫৫
Share: Save:

১৭ মার্চ, ২০০৭ আজ, মঙ্গলবার থেকে ঠিক আট বছর আগের ওই সন্ধের কথা বারবার মনে পড়ছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপে ভারতের প্রথম ম্যাচ। আর তখন আমি দেশের প্রধান নির্বাচক। দারুণ আগ্রহ নিয়ে বাড়ির টিভিতে বাংলাদেশ ম্যাচটা দেখতে বসেছিলাম। টস জিতে যখন ভারত আগে ব্যাট করতে নামল, তখনও বুঝতে পারিনি কী বিপর্যয় অপেক্ষা করে আছে দেশের ক্রিকেটের জন্য।

ম্যাচ শেষে আমার অনুভূতি কী ছিল, সেটা বোঝাতে একটা শব্দই যথেষ্ট শক্। আর শুধু আমি কেন। ভারতীয় ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত সবাই তখন বিধ্বস্ত। দেশ জুড়ে জ্বলছে প্রচণ্ড ক্ষোভের দাবানল। যেটা আরও উস্কে দিল কয়েক দিন পরেই শ্রীলঙ্কার কাছে হার। আমাদের দেশে ক্রিকেট একটা ধর্ম। সেখানে বিশ্বকাপের মতো একটা টুর্নামেন্ট ঘিরে আবেগ কোন উচ্চতায় পৌঁছতে পারে, আপনাদের নতুন করে বলার দরকার নেই। শুধু বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে যাওয়ার দুঃখ তো নয়। তার সঙ্গে ছিল বাংলাদেশ আর শ্রীলঙ্কার মতো টিমের কাছে হেরে ছিটকে যাওয়ার জ্বালা। পড়শি দেশের যে দুটো টিমকে খেলে খেলে ইন্ডিয়ান টিম অভ্যস্ত ছিল। আসলে ওই বিশ্বকাপের ফর্ম্যাটটাই এমন ছিল যে, মাত্র দুটো ম্যাচ হারা মানেই একেবারে দেশে ফেরার টিকিট কাটা।

যাই হোক, পুরনো বিপর্যয়ের প্রসঙ্গটা আর টানব না। আর সত্যি বলতে কী, বৃহস্পতিবারের কোয়ার্টার ফাইনালের সঙ্গে আট বছর আগেকার ওই ম্যাচটার তুলনা করার জায়গাও নেই। ওটা ছিল সে বারের বিশ্বকাপে সচিন-সৌরভদের প্রথম ম্যাচ। এখানে বিশ্বকাপের সাত নম্বর ম্যাচ খেলতে নামবে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিরা। তা-ও আবার পরপর ছ’টা ম্যাচ জিতে উঠে। বিশ্বকাপের মতো সর্বোচ্চ পর্যায়ের টুর্নামেন্টে অপরাজেয় থেকে। ধোনির টিমটাকে যত দেখছি তত মনে হচ্ছে, এদের থামানো ভীষণ কঠিন। এদের কাছে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ সামলে দেওয়া কোনও সমস্যাই নয়।

তার মানে কিন্তু আমি মোটেই বলছি না যে বাংলাদেশ খারাপ টিম। ওদের ব্যাটিং লাইন আপ বেশ ভাল। মাহমুদউল্লাহ বলে ছেলেটা পরপর দুটো সেঞ্চুরি করে দুর্দান্ত ফর্মে আছে। তার উপর ওদের বোলিংটাও খারাপ না। বিশেষ করে ইনিংসের শুরুর দিকে ওরা দ্রুত উইকেট ফেলে দিতে পারে। তা ছাড়া টিমটার মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাস দেখতে পাচ্ছি। ইংল্যান্ডের মতো টিমকে হারানো, ঘরের মাঠে অন্যতম ফেভারিট নিউজিল্যান্ডকে কোণঠাসা করে ফেলা, তিনশোর কাছাকাছি রান তুলে দেওয়া দারুণ ছন্দে আছে মাশরফির টিম। আর ওরা এখন প্রচুর ওয়ান ডে খেলে খেলে যথেষ্ট অভিজ্ঞও। স্মার্ট ক্রিকেট খেলতে পারে তরুণ টিমটা।

১৭ মার্চ ২০০৭, পোর্ট অব স্পেন।

তাই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে খেলব, এই ভাবনাটা থেকে যেন ধোনিদের মধ্যে একটুও আত্মতুষ্টি না থাকে। খুব সতর্ক থাকতে হবে ভারতকে। আসলে কী জানেন, অস্ট্রেলিয়ার মতো টিমের মোকাবিলা করতে নামলে সবার মধ্যে একটা চিন্তা ঢুকে যায় যে, নিজেদের খেলাটাকে আজ অন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে হবে। যে চিন্তাটা আপনাআপনি একটা বাড়তি মোটিভেশনের কাজ করে। সবাইকে তাতিয়ে রাখে। কিন্তু র্যাঙ্কিংয়ে হেভিওয়েট নয় এমন টিমের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে সে রকম চিন্তা আসার চেয়ে না আসার সম্ভাবনাই বেশি। আর সে জন্য বারবার করে ধোনিদের বলতে চাই, আত্মতুষ্টি থেকে সাত হাত দূরে থেকো।

আমাদের টিমও ১৯৮৩ আর ১৯৮৭ বিশ্বকাপে জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটা ম্যাচ খেলেছে। তখনকার ক্রিকেট পৃথিবীতে যাদের দুর্বল টিম হিসেবে ধরা হত। কিন্তু ওই ম্যাচগুলোর আগে টিম মিটিং বা এমনি সাধারণ আলোচনায় আমরা কখনও অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়িনি। বরং সবাইকে বলা হত বাড়তি সতর্ক থাকতে। বিপক্ষ টিমকে হালকা ভাবে না নিয়ে নিজেদের একশো শতাংশটাই দিতে।

তাই বৃহস্পতিবারের কোয়ার্টার ফাইনাল নিয়ে ধোনিকে যদি কোনও পরামর্শ দিতে হয় তা হলে এটাই বলব যে, ড্রেসিংরুমে আত্মতুষ্টিকে একদম ঢুকতে দিও না। তবে এই ব্যাপারটা যে ধোনি ভাবেনি, সেটা হতে পারে না। ভুলে যাবেন না, ২০০৭ বিশ্বকাপের ওই ম্যাচটা কিন্তু ধোনিও খেলেছিল। সেই স্মৃতি ভুলে যেতে পেরেছে বলে মনে হয় না। তাই আত্মতুষ্টি বা গা-ছাড়া ভাব নিয়ে বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল খেলতে ও কখনওই নামবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE