Advertisement
২২ মে ২০২৪

দিন্দার ধাক্কায় রেল উল্টে ছুটছে বাংলা

রঞ্জি ট্রফিতে এই ম্যাচটা বরাবরই একটু আলাদা হয়। বঙ্গ ক্রিকেট-ইতিহাসের সঙ্গে পরিচিত যাঁরা, নিঃসন্দেহে তাঁদের মনে থাকবে বাংলা বনাম রেলওয়েজ ম্যাচ ঘিরে কী ধুন্ধুমার বেঁধে গিয়েছিল ইডেনে।

অমিত কুইলা ও সায়ন ঘোষের সঙ্গে দিনের নায়ক। শুক্রবার ধর্মশালায়।-টুইটার

অমিত কুইলা ও সায়ন ঘোষের সঙ্গে দিনের নায়ক। শুক্রবার ধর্মশালায়।-টুইটার

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:০৩
Share: Save:

রঞ্জি ট্রফিতে এই ম্যাচটা বরাবরই একটু আলাদা হয়। বঙ্গ ক্রিকেট-ইতিহাসের সঙ্গে পরিচিত যাঁরা, নিঃসন্দেহে তাঁদের মনে থাকবে বাংলা বনাম রেলওয়েজ ম্যাচ ঘিরে কী ধুন্ধুমার বেঁধে গিয়েছিল ইডেনে। তৎকালীন রেল অধিনায়ক মুরলী কার্তিককে ‘ব্যারাকিং’য়ের মুখে পড়তে হয়েছিল বল বিকৃতির অভিযোগে, হিংস্র ‘গো ব্যাক’ গর্জন তুলেছিল ইডেন, রেল পেসার অনুরীত সিংহ তীব্র ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছিলেন এক ক্রিকেটপ্রেমীর সঙ্গে।

অশোক দিন্দাকে সেই রেল-প্রসঙ্গ মনে পড়িয়ে দিতে হেসে ফেললেন। বাংলা বনাম রেলকে ঘিরে শুক্রবার ধর্মশালায় মাঠের বাইরে কিছু ঘটেনি। কিন্তু মাঠে তো আবার ধুন্ধমার ফেলে দিল বাংলা! বলা ভাল, আবার অশোক দিন্দা! যাঁর শুক্রবারের হিসেব বেশ ঈর্ষণীয়।

১৪-৪-৪৫-৫!

এক কথায়, বিধ্বংসী বোলিং। রেলওয়েজের প্রথম ইনিংসকে যে বোলিং ছারখার করে দিয়ে চলে গেল। রেল উল্টে পড়ল মাত্র ১০৫-এ। বাংলার দ্বিতীয় ইনিংসেও ন’টা চলে গিয়েছে। কিন্তু এটাও ঘটনা যে, মনোজ তিওয়ারিদের লিডটা তিনশো পেরিয়ে গিয়েছে। আপাতত ৩০৮। শনিবার লিডের অঙ্ক যত বাড়বে, ততই বাড়বে পরিপূর্ণ রেল অবরোধের সম্ভাবনা।

দিন্দাও টার্গেট করছেন কালীপুজোর দিনই খেলা শেষ করে দিতে। ধর্মশালা থেকে ফোনে এ দিন বলছিলেন, ‘‘আসলে রিদমটা ঠিকঠাক পাচ্ছি। সাধারণত গ্রিন টপ পেলে পেসাররা বেশি আগ্রাসী হয়ে যায়। কিন্তু লাইন-লেংথে সমস্যা হয় অনেক সময়। ব্যাপারটা মাথায় রেখেছিলাম। ঠিক করেছিলাম, যতই সবুজ উইকেট পাই নিয়ন্ত্রণটা ঠিকঠাক রাখতে হবে।’’ দিন্দাকে জিজ্ঞেস করা হল, সামনে রেলওয়েজকে দেখে বাড়তি তেতে গেলেন কি না? দু’টো টিমের ইতিহাস তো তাতিয়ে দেওয়ারই মতো। উত্তরে বেঙ্গল এক্সপ্রেস বললেন, ‘‘না, না। ও সব চুকেবুকে গিয়েছে। তবে রেলের বিরুদ্ধে আমার রেকর্ড বরাবরই ভাল। প্রচুর উইকেট পেয়েছি। ভাল লড়াই চলে।’’

তবে একা দিন্দা নন, বাংলার গোটা পেসারকুল এ দিন দারুণ করেছে। সায়নশেখর মণ্ডল তিনটে উইকেট পেয়েছেন। নবাগত অমিত কুইলা দু’টো তুলেছেন। প্রভাবে যদিও দিন্দাই সবচেয়ে এগিয়ে। যাঁর মোটামুটি এখন স্বপ্নের দৌড় চলছে। পঞ্জাবের বিরুদ্ধে গত ম্যাচেই পাঁচ উইকেট তুলে রণদেব বসুর রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিলেন। বাংলা পেসারদের মধ্যে উইকেটসংখ্যায় সর্বকালের সেরা এখন দিন্দা-ই। সেই রেকর্ডের পর সাত দিনও পেরোল না, আবার পাঁচ উইকেট!

এমন টানা সাফল্যের কারণ কী?

‘‘আমার মন্ত্র। যে মন্ত্র বলে, শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে হবে। আমি জানি, এই মরসুমে বাংলা খুব কঠিন গ্রুপে আছে। ঠিক আছে, বিপক্ষ যত কঠিন হবে, আমার বোলিংও তত ভাল হবে,’’ ফোনে প্রায় গর্জন ছা়ড়লেন দিন্দা। যাঁকে সায়ন-অমিতের মতো তরুণ সতীর্থদের বোলিং মুগ্ধ করছে। বলছেন, ‘‘ওদের সবচেয়ে বড় গুণ, শেখার ইচ্ছে। যা বলি, শোনে, করে।’’

তবে দিন্দার বোলিং ছাড়াও আর একটা নাটকীয় ঘটনা ঘটল ধর্মশালায়। প্রথম দিন ১৪ উইকেট পড়ার পর দ্বিতীয় দিন ১৫ উইকেট পড়ল এই পিচে। মানে, দু’দিনে ২৯ উইকেট! যার মধ্যে ২৮-টাই পেসারদের! এবং ঠিক যে কারণে, মনোজ তিওয়ারি-ঋদ্ধিমান সাহাদের ইনিংসেরও সমান গুরুত্ব আছে। মূলত, দ্বিতীয় ইনিংসে মনোজের ৪৮ এবং ঋদ্ধিমানের ৪৪-এর জন্যই বাংলার লিড এখনই তিনশো পেরিয়ে গিয়েছে। মনোজ চাইছেন, লিড যথাসম্ভব বাড়িয়ে রাখতে। বললেনও যে, ‘‘ক্রিকেটের কথা কেউ বলতে পারে না। তাই যত পারি লিডটা বাড়িয়ে নিতে হবে। মাথায় রাখতে হবে ওদের প্রায় দু’দিন হাতে থাকবে। আর উইকেটটা যে ভাবে বদলাচ্ছে, তাতে ওরা দ্বিতীয় ইনিংসে ভাল ব্যাট করে দিতে পারে। যদিও সেই চান্স খুব কম। আমাদের বোলাররা যা বল করছে!’’

ঠিকই। যতটা সম্ভব বাংলা লিড বাড়িয়ে নিক। তিনশো পঁচিশ-তিরিশ হোক। তার পর তো ছ’পয়েন্টের জন্য একটা অশোক দিন্দা থাকলেনই!

সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলা ২০৫ ও ২০৮-৯ (মনোজ ৪৮, ঋদ্ধি ৪৪) রেল ১০৫ (দিন্দা ৫-৪৫, সায়ন ৩-৩১)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ashok Dinda Ranji Trophy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE