আগরতলার বাড়িতে দীপার মা-বাবা।-নিজস্ব চিত্র
ভোরবেলা ফোন বাজতেই লাফিয়ে উঠেছিলেন দুলাল কর্মকার। ফোন ধরতেই ও-পার থেকে ভেসে এসেছিল তাঁর বড় মেয়ের গলা, ‘‘বাবা, দীপা পেরেছে!’’
ওই তিনটে শব্দই যথেষ্ট ছিল স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার ভারোত্তোলন কোচ দুলাল কর্মকারের কাছে। তিনি বুঝতে পারেন, রিও অলিম্পিক্সে যা-ই হোক না কেন, ভারতের প্রথম মেয়ে জিমন্যাস্ট হিসেবে অলিম্পিক্সের টিকিট তাঁর মেয়েই পেয়েছে। এ দিন পরে তিনি বলছিলেন, ‘‘রিওতেই জিমন্যাস্টিক্সের এই অলিম্পিক্স কোয়ালিফাইং টুর্নামেন্টটা নিয়ে আমরা পরিবারের সবাই খুব চিন্তায় ছিলাম। বুক থেকে একটা পাথর আপাতত যেন সরল। এ বার আমরা তাকিয়ে থাকব অগস্টের রিও অলিম্পিক্সের দিকে।’’
আগরতলার অভয়নগরে দীপা কর্মকারের বাড়িতে এ দিন সকালে তখন খুশির হাওয়া। দীপার মা গৌরী দেবী মন দিয়ে মেয়ের সব মেডেল, ট্রফি মুছছেন। আর সঙ্গে বারবার মুছছেন নিজের চোখ। আনন্দাশ্রু। বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন, পড়শিদের অনেকে ততক্ষণে এসে পড়েছেন। সবাই খুশি। অলিম্পিক্সে তাঁদের ‘সোনার মেয়ে’ লড়বে। লড়বে দেশের জন্য, পদকের জন্য।
দু’দিন আগে শনিবার রাতেই মেয়ের সঙ্গে ফোনে বাবার কথা হয়েছিল। দুলালবাবুর কথায়, ‘‘রিও থেকে সে দিন দিপা বলছিল, ও খুব টেনশনে আছে। তখন থেকেই অস্বাভাবিক ভয় ছিলাম আমি, ওর মা-ও। কিন্তু ফোনে কিছু বুঝতে দিইনি ওকে। বলেছিলাম, তুই কেবল প্র্যাকটিস চালিয়ে যা। রেজাল্ট আসবেই।’’ সোমবার সকালেই খবর পাওয়ার পরে এখন কর্মকার পরিবারে শান্তি। তবে তা সাময়িক। এ বার টেনশন তো আরও সাংঘাতিক! একেবারে খোদ অলিম্পিক্স এরিনায় নামবেন দীপা!
ত্রিপুরায় ফোম ম্যাট না থাকায় শেষ তিন মাস দীপা খুব একটা ভাল ভাবে অনুশীলন করতে পারেননি দেশের প্রথম মেয়ে অলিম্পিয়ান জিমন্যাস্ট। তার সঙ্গে ভারতীয় জিমন্যাস্ট ফেডারেশনের অভ্যন্তরীণ ঝামেলার একটা চাপ তো প্লেয়ারের মনের উপর ছিলই। দীপার বাবা এ দিনও সাফ বলে দিলেন, ‘‘দুই ফেডারেশনই চাইছিল দীপাকে নিজেদের ব্যানারে রিওর কোয়ালিফাইং টুর্নামেন্টে পাঠাতে। আর দীপার তো সঙ্গীন অবস্থা। শেষ পর্যন্ত সাই মধ্যস্থতা করে। ঠিক হয়, সাইয়ের ব্যানারেই দীপা যাবে।’’ রিও যাওয়া নিয়ে জটিলতা এতটাই ছিল যে, একটা সময় তীব্র মানসিক দ্বন্দ্বে ভুগছিল দীপা। তাঁর মা-র কথায়, ‘‘ও কান্নাকাটি করত। শুধু বলত, আমার কেরিয়ারই বোধহয় শেষ হয়ে গেল!’’
এমনিতে দীপা ছোটবেলা থেকেই জেদি। গৌরী দেবী বললেন, ‘‘যেটা করবে ভাবে, করেই তবে শান্তি।’’ একটা ঘটনা শোনালেন; গুয়াহাটি ন্যাশনাল গেমসে দীপা গিয়েছিল প্লেয়ার হিসেবে আর তাঁর বাবা কোচ হিসেবে। দীপা সে বার কোনও মেডেল পাননি। তার পরে বাবার সঙ্গে দেখা করেননি। সোজা ফিরে এসেছিলেন আগরতলায়। ‘‘বাড়ি ফিরে আমাকে শুধু বলেছিল, ন্যাশনাল গেমসের মেডেল আমি আনবই,’’ বললেন গৌরী দেবী। পরের বারই পাঁচটা সোনার পদক জিতেছিলেন দীপা।
দীপার বাবা আবার মেয়ের ঐতিহাসিক সাফল্যের জন্য কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দীর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন। ‘‘উনি গত কয়েক বছর ধরে নিজের সংসার ফেলে আমার মেয়েকে যে ভাবে ট্রেনিং দিচ্ছেন সেই ঋণ কোনও ভাবে শোধ করতে পারব না।’’ এ বার রিও যাওয়ার আগে দুলালবাবু মেয়েকে নিয়ে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের কাছেও যান। মুখ্যমন্ত্রী দীপাকে বলেছিলেন, ‘‘তোমাকে কিন্তু অলিম্পিক্সে যেতেই হবে।’’ কথা রেখেছেন দীপা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy