Advertisement
E-Paper

আয়াখ্‌‌সের স্বপ্নের দৌড় থেমে গেল মৌরার হ্যাটট্রিকে

একদিনের ব্যবধানে ফুটবল ইতিহাসে আর এক অবিশ্বাস্য প্রত্যাঘাত সম্ভব করেছে। ইয়েরিক তেন হেগের তরুণ ব্রিগেড আয়াখ‌্সকে ৩-২ হারিয়েছে। তাও আমস্টারডামে, কিংবদন্তি ইয়োহান ক্রুয়েফের নামাঙ্কিত স্টেডিয়ামে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৯ ০৩:২৯
উল্লাস: অবিশ্বাস্য প্রত্যাঘাত! হ্যাটট্রিকের গোল করে টটেনহ্যামের জয়ের নায়ক লুকাস মৌরা (২৭ নম্বর)।

উল্লাস: অবিশ্বাস্য প্রত্যাঘাত! হ্যাটট্রিকের গোল করে টটেনহ্যামের জয়ের নায়ক লুকাস মৌরা (২৭ নম্বর)।

আয়াখ‌্স ২ • টটেনহ্যাম ৩

(অ্যাওয়ে গোলে জয়ী টটেনহ্যাম)

যখন মনে হয়েছিল সব আশা শেষ। টানা খেলার ধকল নিংড়ে নিয়েছে ক্লাবটাকে। প্রথম লেগ ০-১ হারা। দ্বিতীয় লেগে প্রথম ৪৫ মিনিটে ০-২ পিছিয়ে। দুই ম্যাচ মিলে ০-৩ অবস্থা। ঠিক তখনই যেন আধুনিক ফুটবলের আর এক মারকাটারি ম্যাচে বেজে উঠেছিল বব মার্লের বিখ্যাত ‘থ্রি লিটল বার্ডস’। টটেনহ্যাম হটস্পারের জন্য। যার বার্তা খুবই সরল। জীবনের ভয়ঙ্কর সন্ধিক্ষণেও মন থেকে ঝেড়ে ফেলো ‘উদ্বেগ’!

‘উদ্বেগ’ জয় করতেও দরকার প্রেরণা। ইংল্যান্ডের ১৩৬ বছরের পুরনো ক্লাব টটেনহ্যাম সেটাই পেয়ে গেল ২৪ ঘণ্টা আগে। বার্সেলোনা নামক বিশ্বফুটবলের ‘টাইটানিক’-এর মহাপতন ঘটিয়েছিল লিভারপুল। প্রথম লেগে ০-৩ হেরেও অ্যানফিল্ডের ফিরতি ম্যাচে লিয়োনেল মেসিদের ৪-০ হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠেছিল। স্পার্সের ম্যানেজার মউরিসিয়ো পচেতিনো ম্যাচের আগে ফুটবলারদের বলেছিলেন, ‘‘লিভারপুল পেরেছে। তোমরাই বা পারবে না কেন? আমি চাই ওদের জয়টা তোমাদেরও হৃদয় ছুঁয়ে থাক।’’

সত্যিই পেরেছে টটেনহ্যাম।

একদিনের ব্যবধানে ফুটবল ইতিহাসে আর এক অবিশ্বাস্য প্রত্যাঘাত সম্ভব করেছে। ইয়েরিক তেন হেগের তরুণ ব্রিগেড আয়াখ‌্সকে ৩-২ হারিয়েছে। তাও আমস্টারডামে, কিংবদন্তি ইয়োহান ক্রুয়েফের নামাঙ্কিত স্টেডিয়ামে। আরও গুরুত্বপূর্ণ, খেলার ৫ ও ৩৫ মিনিটে মাতিস দে লিখ‌্ত ও হাকিম জিয়েখের গোলে ০-২ পিছিয়ে পড়েও। তার পরেও কী করে প্রত্যাবর্তন সম্ভব হল?

নতুন রূপকথার জন্মরহস্য উদ্ঘাটন করতে বসে ফুটবল পণ্ডিতেরা টানলেন টেকনিক্যাল কচকচানি। দ্বিতীয়ার্ধে ফার্নান্দো লরিয়েন্তেকে নামিয়ে দেওয়া। বাঁ দিকে সরিয়ে আনা সন হিউ মিনকে। ডেলে আলিকে আরও আগ্রাসী ভূমিকায় খেলতে বলা— ইত্যাদি কত প্রসঙ্গ।

কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে একজনই রূপকথার নায়ক। তাঁর দুর্ভাগ্য ব্রাজিলে নেমার দা সিলভা স্যান্টোস জুনিয়রকে নিয়ে যত হইচই, তার ছিটেফোঁটা হয় না তাঁকে নিয়ে। বুধবারের পরে মনে হতে পারে, কেন হয় না সেটাই বিস্ময়!

উইঙ্গারে খেলেও রকেটের গতিতে প্রান্ত বদল (বুধবার পচেতিনো অবশ্য তাঁকে স্ট্রাইকার পজিশনে খেলালেন)। আক্রমণ সৃষ্টিশীল করতে প্রাণপাত। হঠাৎ-হঠাৎ অসম্ভব গতি বাড়িয়ে ফেলা। সঙ্গে দুরন্ত ড্রিবলিং। এ সবই আমস্টারডামের রাতকে মায়াবী করে তুলল। একটা অর্ধেই হ্যাটট্রিক করে ফেললেন সাও পাওলোর ছাব্বিশে পা রাখা তরুণ। পচেতিনো দ্বিতীয়ার্ধে সন হিউ মিনকে বাঁ-দিকে সরিয়ে দেওয়ায় অনেকটা ফাঁকা জায়গা পেয়ে গেলেন মৌরা। ব্রাজিলীয় তারকা যার ফায়দা তুললেন। হয়ে গেল হ্যাটট্রিকও। যার সৌজন্যে শতাব্দীপ্রাচীন স্পার্স প্রথম বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে। ১ জুন মাদ্রিদে প্রতিপক্ষ লিভারপুল। মানে এ বারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ‘অল-ইংল্যান্ড ফাইনাল’। দু’হাজার আটের মতো। সে বার ফাইনালিস্ট ছিল চেলসি আর ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড।

স্পার্সের বিপ্লব ঘিরে ব্রিটিশ ফুটবল উল্লসিত হলেও সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইট উপচে পড়ল বিষণ্ণতাতেও। আয়াখ‌্‌সের জন্য। রিয়াল মাদ্রিদ, জুভেন্তাসকে ছিটকে দিয়ে, প্রথম সেমিফাইনাল ১-০ জেতার পরে ডাচ ক্লাবকে ষষ্ঠবার ইউরোপ সেরা হওয়ার শক্তিশালী দাবিদার ভেবেছিলেন অনেকে। অথচ এই দলে তারুণ্যই শক্তি। বার্সেলোনার এক-এক জন মহাতারকার জন্য যে খরচ হয়, গোটা আয়াখ‌্স ক্লাবটার বাজেট তার সমতুল্য। বুধবার রাতে লুকাস মৌরা ৯৬ মিনিটে হ্যাটট্রিকের গোলটা করতে ইয়োহান ক্রুয়েফ এরিনায় নেমে এল সমাধিক্ষেত্রের নিস্তব্ধতা, ইয়েরিক তেন হেগের শোকস্তব্ধ এগারো যোদ্ধা নিথর মূর্তিতে পরিণত হলেন। পাশাপাশি রাতারাতি বিশ্বফুটবলের অবিশ্বাস্য দ্বিতীয় প্রত্যাঘাত সম্পূর্ণ করে মাঠেই হাঁটু মুড়ে কাঁদতে শুরু করলেন দিয়েগো মারোদোনার প্রাক্তন সতীর্থ, টটেনহ্যাম ম্যানেজার পচেতিনো।

ইপিএলের ক্লাবে ঘনঘন কোচ বরখাস্তের ঐতিহ্য ভেঙে মরসুমের পর মরসুম পচেতিনোর উপর ভরসা রেখেছে স্পার্স। এত দিনে যার সেরা পুরস্কারটা এল। আপ্লুত ম্যানেজারও, ‘‘নিজেই বুঝতে পারছি না, কী ভাবে মনের অবস্থা বোঝাব। আমার উপর এত বছর ক্লাব ভরসা করছে। বোর্ডের কাছে কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনের পরে সব ফুটবলারকেই নায়ক বলব। তবে মহানায়ক একজনই। হ্যাঁ, লুকাস মৌরার কথা বলছি।’’ হ্যাটট্রিকের আনন্দে পচেতিনোর মতো কেঁদে ফেললেও মৌরা নিজে অবশ্য অসম্ভব বিনয়ী, ‘‘মোটেই আমার একার জন্য ক্লাব ফাইনাল খেলবে না। সবার কৃতিত্ব সমান। তবে এটা বলতে পারি, আজকের দিনটা জীবনের সেরা।’’ স্পার্স মিডিয়ো ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন যে কথা শুনে হেসে ফেললেন, ‘‘আশা করি ব্রাজিলে না হোক, ইংল্যান্ডে ওর একটা মূর্তি বসবে।’’

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল: লিভারপুল বনাম টটেনহ্যাম। ১ জুন। রাত ১২-৩০। মাদ্রিদ।

Football UCL UEFA Champions League Ajax Amsterdam Tottenham Hotspurs Lucas Moura
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy