Advertisement
১১ মে ২০২৪

‘নেকড়ে’র জোড়া কামড়ে ইস্টবেঙ্গল সেই তিমিরেই

গোয়া থেকে কলকাতা—বদলায় না ইস্টবেঙ্গল। কোচ যায় কোচ আসে—পাল্টায় না লাল হলুদ। কষ্ট করে গোল করেন স্ট্রাইকাররা, পাল্টা গোল হজম করে ডোবায় রক্ষণ। ফেড কাপে যা হয়েছিল, আই লিগের প্রথম পর্বেও তাই। দ্বিতীয় পর্বে এসেও চাকা উল্টো দিকে ঘোরার নামগন্ধ নেই। ভিক্টোরিনো ফার্নান্ডেজের স্পোর্টিং ক্লুব ‘আশার মশাল’ জোড়া গোলের ‘জলে’ নিভিয়ে দিল শেষ মুহূর্তে। বিশাল যুবভারতীতে মাত্র তিন-চার হাজারের লাল-হলুদ গ্যালারিতে তখন শুধুই দীর্ঘশ্বাস।

বিধ্বস্ত ইস্টবেঙ্গল কোচ। শনিবার যুবভারতীতে। ছবি: উৎপল সরকার

বিধ্বস্ত ইস্টবেঙ্গল কোচ। শনিবার যুবভারতীতে। ছবি: উৎপল সরকার

রতন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৫ ০৩:০৯
Share: Save:

ইস্টবেঙ্গল-২ (র‌্যান্টি-২)
স্পোর্টিং ক্লুব-২ (উলফ-২)

গোয়া থেকে কলকাতা—বদলায় না ইস্টবেঙ্গল।

কোচ যায় কোচ আসে—পাল্টায় না লাল হলুদ।

কষ্ট করে গোল করেন স্ট্রাইকাররা, পাল্টা গোল হজম করে ডোবায় রক্ষণ।

ফেড কাপে যা হয়েছিল, আই লিগের প্রথম পর্বেও তাই। দ্বিতীয় পর্বে এসেও চাকা উল্টো দিকে ঘোরার নামগন্ধ নেই। ভিক্টোরিনো ফার্নান্ডেজের স্পোর্টিং ক্লুব ‘আশার মশাল’ জোড়া গোলের ‘জলে’ নিভিয়ে দিল শেষ মুহূর্তে। বিশাল যুবভারতীতে মাত্র তিন-চার হাজারের লাল-হলুদ গ্যালারিতে তখন শুধুই দীর্ঘশ্বাস।

মরশুমের শুরু থেকে চলা সেই ট্র্যাডিশন বজায় রয়েছে দেখে হতাশ ইস্টবেঙ্গল সহকারী কোচ সুজিত চক্রবর্তীর গলা থেকে শনিবার বেরিয়ে এল বিস্ফোরক কিছু লাইন। “আমাদের টিম একেবারেই চ্যাম্পিয়নের মতো খেলছে না। আজও খুব খারাপ খেলেছে। কোনও ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছি না। মোহনবাগান খুব ভাল খেলছে। ওরা চ্যাম্পিয়ন হতেই পারে। কাল ডেম্পোকে ওরা হয়তো হারিয়ে দেবে। ডার্বির আগে আমরা চাপে পড়ে গেলাম। বারবার কোচ বদল হলে টিমের উপর প্রভাব পড়বেই।”

ভিসা সমস্যায় এলকো সতৌরি এ দিন ম্যাচ শেষেই দিন তিনেকের জন্য ওমান রওনা হয়ে গেলেন। ডাচ কোচের জায়গায় সুজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এসে যে ভাবে হঠাৎ-ই পর্দার পিছনের সত্যটা ফাঁস করে নিজের দলের সমালোচনায় মুখর হলেন, তাতে তাঁর মুখে অদূর ভবিষ্যতেই হয়তো সেলোটেপ লাগিয়ে দেবেন লাল-হলুদ কর্তারা। কিন্তু তাতেও স্পষ্ট বক্তা হিসাবে সুজিতের সমাদর বৃদ্ধি আটকানো যাবে কি ইস্টবেঙ্গল সমর্থক মহলে?

ফেড কাপে সুসাক-দীপকরা দেখিয়ে ছিলেন কী ভাবে ৩-০ এগিয়ে থাকা ম্যাচ ৩-৪ হারতে হয়। ছিটকে যেতে হয় টুর্নামেন্ট থেকে। শনিবাসরীয় আই লিগ ফিরতি ম্যাচে ফের তাঁরাই দেখালেন ২-০ এগিয়ে থাকা ম্যাচ কী ভাবে ২-২ রেখে আসা যায় মাঠে?

গোয়ায় যখন র‌্যান্টি আর ওডাফা দু’দলে খেলতেন তখন তাঁদের মুখ দেখাদেখি ছিল না। দুই নাইজিরিয়ান গোলমেশিন একে অপরকে পিষে ফেলতে চাইতেন গোল করার লড়াইয়ে নেমে। সেই ‘যুদ্ধ’ যে এখনও জারি সেটা টের পাওয়া যাচ্ছিল এ দিন শুরু থেকেই। ম্যাচ শেষে র‌্যান্টির জন্য লিখতে হচ্ছেই, “আমি এসেছি, আমি এসেছি, দূর থেকে বহু দূরে...” গানের লাইনগুলো। আর ওডাফার জন্য, “এ তুমি কেমন তুমি...”

আই লিগের লাস্ট বয়ের কাছে গুরুত্বপূর্ণ দু’পয়েন্ট নষ্টের দিনেও র‌্যান্টির নামের পাশে দু’গোল। তাঁর দ্বিতীয় গোলটা তো চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার মতো। বিপক্ষ টিমের তৈরি সাত জনের মানব দেওয়াল টপকে ফ্রিকিকে। টিমের জঘন্য পারফরম্যান্সের বাজারেও ১২ গোল করে টুর্নামেন্টে সবার উপরে র‌্যান্টি। ফের সোনার বুটের সন্ধানে।

ওডাফা সমাচার? প্রথম শট ম্যাচের আঠারো মিনিটে। বিশ্বকাপার অ্যান্টনি উলফের দু’টো গোলের পিছনেই অবদান থাকলেও সেটা মেরেকেটে তিরিশ শতাংশ। মেদ ঝরালেও পুরো ফিট নন। সেই পুরনো ঝাঁঝও নেই। বল ধরে টার্ন করতে কষ্ট হচ্ছে। গোল লক্ষ করে দু’টো শট নিলেন যা পোস্টের দশ হাত বাইরে গিয়ে চলে গেল। একটা ফ্রিকিক সটান মেহতাবের মাথায় মেরে বসলেন। এই ওডাফাকে আমরা চিনি না। স্পোর্টিং ক্লুব স্ট্রাইকার টিম বাসে ওঠার আগে অবশ্য স্বীকার করে গেলেন , “সবে তো শুরু করলাম। অনেক দিন পর খেলছি। একটু সময় লাগবে।”

ইস্টবেঙ্গল টিমটার আবার আর্মান্দো-জমানায় এমনিতেই বারোটা বেজে গিয়েছে। পাড়ার ক্লাবের কোচ ‘নতুদা’, ‘গজাদা’র ঢঙে অনুশীলন হত তখন। ফলে ফিটনেস নেমে গিয়েছিল শূন্যে। এলকো আবার পূর্বসূরির রেখে যাওয়া রোগ না সারিয়েই নতুন ফর্মেশনে খেলতে গিয়ে ডুবছেন। ৪-৪-২ দুমড়ে ‘ডায়মন্ড’ করতে গিয়ে তাঁর মাঝমাঠ ওলট-পালট হয়ে যাচ্ছে। দলে সত্তর ভাগ ফুটবলারের বয়স তিরিশ ছুঁই ছুঁই। এলকোর ফর্মেশন মতো খেলতে হলে প্রচুর দৌড়তে হয়। ফলে ‘নতুন যৌবনের দূত’ হতে গিয়ে ষাট-সত্তর মিনিটের পরই হাঁফিয়ে পড়ছেন দীপক, তুলুঙ্গা, ডুডুরা।

স্পোর্টিংয়ের ‘বেআইনি’ কোচ চুকুয়ামা সেই সুযোগটাই নিলেন রিজার্ভ বেঞ্চে বসে। ০-২ পিছিয়ে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই তিনি নামিয়ে দিলেন আগুনে মেজাজের ভিক্টোরিনোকে। নামালেন আর এক যুবক—মার্কাসকেও। গোয়ার ক্লাবটির দুটো উইং ঝাপটা মারতেই এলকোর টিম আছড়ে পড়ল মাটিতে। চাপের মুখে দীপক যে ভাবে উলফের গড়ানে নিরীহ শট বাঁচাতে দিয়ে হুড়মুড় করে নিজের গোলেই ঢুকিয়ে দিলেন তাঁর জন্য একটা শব্দই প্রযোজ্য— কলঙ্ক। ২-২ হওয়ার সময়ও ওডাফার ক্রস গ্রিপ করতে পারেননি লাল-হলুদ কিপার অভিজিৎ মণ্ডল। দীপক এবং অভিজিৎ বহু বছর খেলছেন। ওঁদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। দেহ পট সনে নট যে সকলই হারায়—এটা বরং ওঁদের যাঁরা সই করিয়েছেন সেই লাল-হলুদ প্রশাসন যত তাড়াতাড়ি বোঝে ততই মঙ্গল ময়দানের ঐতিহাসিক ক্লাবের!

ইস্টবেঙ্গল: অভিজিৎ, দীপক (সুখবিন্দর), সুসাক, রাজু (অর্ণব), রবার্ট, তুলুঙ্গা, মেহতাব, রফিক (খাবরা), লালরিন্দিকা, র‌্যান্টি, ডুডু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE