Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
ইস্টবেঙ্গলের ডাকে স্কুল ছাড়েন ডুডু

লাজং ম্যাচের প্রস্তুতি শুরু লাল-হলুদে

যুবভারতীতে চব্বিশ ঘণ্টা আগে চেন্নাই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে একাই চার গোল করে শুধু দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনই ঘটাননি, জবাব দিলেন সমালোচকদেরও। তিনি— ডুডু ওমাগবেমি।

অস্ত্র: খালিদকে এখন ভরসা জোগাচ্ছেন ডুডু। ফাইল চিত্র

অস্ত্র: খালিদকে এখন ভরসা জোগাচ্ছেন ডুডু। ফাইল চিত্র

শুভজিৎ মজুমদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৫:১১
Share: Save:

কয়েক দিন আগেও তাঁর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল।

চার ম্যাচে মাত্র এক গোল করায় ক্রমাগত বিদ্ধ হয়েছেন সমালোচনার তিরে। কটাক্ষ শুনেছেন বয়স নিয়েও।

যুবভারতীতে চব্বিশ ঘণ্টা আগে চেন্নাই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে একাই চার গোল করে শুধু দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনই ঘটাননি, জবাব দিলেন সমালোচকদেরও। তিনি— ডুডু ওমাগবেমি।

লাল-হলুদ জার্সিতে নাইজিরীয় স্ট্রাইকারের অভিষেক হয়েছিল বছর চারেক আগে। সে বারও ব্যর্থতার যন্ত্রণা নিয়ে ক্লাব ছেড়েছিলেন তিনি। জবাব দেওয়ার জন্য যোগ দিয়েছিলেন মোহনবাগানে। অভিষেক ম্যাচে হ্যাটট্রিক করা সত্ত্বেও আই লিগের আগে তাঁকে ছেঁটে ফেলেছিলেন সবুজ-মেরুন কর্তারা। হতাশ হয়ে ফিনল্যান্ডে ফিরে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ভারতীয় ফুটবলে ফের নিজেকে প্রমাণ করতে মরিয়া ডুডু যোগ দেন আইএসএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি চেন্নাইয়িন এফসি-তে। ২০১৬-তে ১৩ ম্যাচে পাঁচ গোল করলেও পরের বছর ডুডুকে রাখেনি চেন্নাই। হঠাৎ করেই যেন অন্ধকার নেমে এসেছিল ডু়ডুর জীবনে। যন্ত্রণা ভুলতে ফিনিশ ভাষা শিখতে ভর্তি হন ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিঙ্কির একটি স্কুলে। তবুও ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে ভারত ছাড়ার যন্ত্রণা ভুলতে পারেননি। স্বপ্ন দেখতেন ফের ভারতীয় ফুটবলে প্রত্যাবর্তনের। মরসুমের অর্ধেক পেরিয়ে গেলেও কোনও ভারতীয় ক্লাব আগ্রহ দেখায়নি তাঁকে নেওয়ার জন্য। আশা যখন কার্যত ছেড়ে দিয়েছেন ডুডু, তখনই অপ্রত্যাশিত ভাবে ইস্টবেঙ্গলে খেলার প্রস্তাব পেলেন।

কিন্তু এ বার অন্য সমস্যা। স্কুল কর্তৃপক্ষ ডুডুকে ক্লাস বন্ধ করে ভারতে খেলতে যাওয়ার অনুমতি দিতে রাজি নন। তা হলে? স্কুলই ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন নাইজিরীয় তারকা! ডুডু বলছিলেন, ‘‘ফিনিশ ভাষা শিখতে শুরু করেছিলাম। সেই সময় অনেক ক্লাবই আমাকে খেলার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু লেখাপড়ার ক্ষতি হবে বলে রাজি হইনি। কিন্তু ইস্টবেঙ্গলের প্রস্তাব পাওয়ার পরে দু’বার ভাবিনি। সোজা গিয়ে স্কুলের শিক্ষকদের বললাম— আমার পক্ষে আগামী কয়েক মাস ক্লাস করা সম্ভব নয়। আমি কলকাতায় যাচ্ছি ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলতে। ফিরে এসে আবার ক্লাস শুরু করব।’’ স্বাভাবিক ভাবেই ডুডুর কথা শুনে বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলেন শিক্ষকরা। নাইজিরীয় স্ট্রাইকারকে তাঁরা বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন— ক্লাস না করলে অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে পড়তে হবে। একটা বছরও নষ্ট হবে। কিন্তু বহু চেষ্টা করেও ডুডুকে আটকাতে পারেননি শিক্ষকরা। লাল-হলুদ তারকার কথায়, ‘‘শিক্ষকরা প্রথমে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন। এমনকী ভয়ও দেখিয়েছিলেন বছর নষ্ট হয়ে যাবে বলেও। কিন্তু আমি ইস্টবেঙ্গলে ফেরার সিদ্ধান্ত ততক্ষণে নিয়ে নিয়েছিলাম।’’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘আমি কখনও আই লিগ জিততে পারিনি। তাই ভীষণ ভাবেই ভারতে ফিরতে চেয়েছিলাম। তাই ইস্টবেঙ্গলের প্রস্তাব পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাজি হয়ে যাই।’’

ইস্টবেঙ্গলে দ্বিতীয় পর্বের শুরুটাও অবশ্য ভাল হয়নি। প্রথম ম্যাচেই প্রতিপক্ষ মোহনবাগান। যুবভারতীতে আই লিগের সেই ডার্বিতে সনি নর্দে-হীন মোহনবাগান কার্যত খেলতেই দেয়নি ইস্টবেঙ্গলকে। লাল-হলুদ জার্সিতে দ্বিতীয় পর্বের শুরুতেই সমর্থকদের কটাক্ষের শিকার হয়েছিলেন ডুডু। কিন্তু কোনও জবাব দেননি তিনি। নীরবে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিলেন নাইজিরীয় তারকা। ডুডু বারবারই বলেন, ‘‘বেশি কথা বলতে আমি পছন্দ করি না। মাঠে পারফর্ম করেই বারবার জবাব দিয়েছি। আশা করছি, এ বারও তার ব্যতিক্রম হবে না।’’ লাল-হলুদে ডুডুর সতীর্থ মহম্মদ আল আমনা বলছিলেন, ‘‘ডুডুর যোগ্যতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন উঠতেই পারে না। দুর্দান্ত স্ট্রাইকার। দারুণ টিমম্যান।’’

আই লিগে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে ডুডু প্রথম গোল করলেন তৃতীয় ম্যাচে। বারাসত স্টেডিয়ামে ইন্ডিয়ান অ্যারোজের বিরুদ্ধে ম্যাচের ইনজুরি টাইমে গোল করে বাঁচিয়ে রাখলেন ইস্টবেঙ্গলের আই লিগ জয়ের আশা। যে লাল-হলুদ সমর্থকরা সে দিন ম্যাচ চলাকালীন কটাক্ষ করেছিলেন, তাঁরাই খেলা শেষ হওয়ার পর ডুডুর নামে জয়ধ্বনি দিলেন! লাল-হলুদ তারকা অবশ্য আশ্চর্য রকম নির্লিপ্ত ছিলেন। ঘনিষ্ঠ মহলে ডু়ডু মাঝেমধ্যেই বলেন, ‘‘একটা ম্যাচে গোল না পেলেই ছবিটা বদলে যাবে। যে সমর্থকরা জয়ধ্বনি দিচ্ছিল, তারাই কাঠগড়ায় তুলবে। তাই পেশাদার ফুটবলারদের কখনও আবেগে ভেসে যাওয়া উচিত নয়।’’

একা ডুডু নন, লাল-হলুদের ফুটবলাররা কেউ-ই আবেগে ভাসছেন না। চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে ৭-১ গোলে জয়ের উচ্ছ্বাস ভুলে রবিবার থেকেই লাজং এফসি ম্যাচের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন কোচ খালিদ জামিল। তবে প্রথম দলের ফুটবলারদের জন্য এ দিন ছিল রিকভারি সেশন। অনুশীলনের পরে আমনা বললেন, ‘‘চেন্নাই ম্যাচ এখন অতীত। সবে একটা বাধা পেরিয়েছি। আরও দু’টো ম্যাচ বাকি আছে।’’

ইস্টবেঙ্গলের পরের ম্যাচ লাজং এফসি-র বিরুদ্ধে শিলংয়ে ৫ মার্চ। শেষ ম্যাচ ডুডু-রা খেলবেন যুবভারতীতে ৮ মার্চ নেরোকা এফসি-র বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচেই স্বপ্নপূরণের অপেক্ষায় ডুডু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE