Advertisement
২৫ মার্চ ২০২৩
লাল হলুদে আর ঝলকাবে না এমএস১৪ জার্সি!
Sports News

ব্যর্থতার দায়টা না হয় আমিই নিলাম: মেহতাব

দু’বছর আগে অভিমানে খুলে রেখেছিলেন জাতীয় দলের জার্সি! এ বার প্রায় তেমন ভাবেই প্রিয় ক্লাব ইস্টবেঙ্গল থেকে সরে দাঁড়ালেন। তবে এ বার অভিমানে নয়, যন্ত্রণায়। ক্লাবকে আই লিগ দিতে না পারার হতাশা এবং বিষাদেই বিদায় নিলেন। ভারতীয় ফুটবলের সর্বকালের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার মেহতাব হোসেনের সঙ্গে কথা বললেন সুচরিতা সেন চৌধুরী।দু’বছর আগে অভিমানে খুলে রেখেছিলেন জাতীয় দলের জার্সি! এ বার প্রায় তেমন ভাবেই প্রিয় ক্লাব ইস্টবেঙ্গল থেকে সরে দাঁড়ালেন। তবে এ বার অভিমানে নয়, যন্ত্রণায়। ক্লাবকে আই লিগ দিতে না পারার হতাশা এবং বিষাদেই বিদায় নিলেন। ভারতীয় ফুটবলের সর্বকালের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার মেহতাব হোসেনের সঙ্গে কথা বললেন সুচরিতা সেন চৌধুরী।

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৭ ১৭:৪৯
Share: Save:

শেষ হয়ে গেল ইস্টবেঙ্গলের একটা অধ্যায়। ফুটবলার মেহতাবের কেরিয়ারে সেরা অধ্যায়েরও ইতি। লাল-হলুদ জার্সিটা খুলে রাখলেন তিনি। ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার আজ, বুধবার, বিদায় নিলেন ইস্টবেঙ্গল থেকে। তাঁর হাত ধরে ইস্টবেঙ্গলের সাফল্যের খতিয়ান দেখতে বসলে, হিসাব মেলানো যাবে না। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে দলের একের পর এক ব্যর্থতা হতাশায় মুড়ে দিচ্ছিল তাঁকে। দলকে আই লিগ না-দিতে পারার বেদনাও ছিল। সেই ব্যর্থতার দায় নিজের মাথায় নিয়ে এ ভাবে নিজেই সরে গেলেন তিনি। আগেই জানিয়েছিলেন, ক্লাবকে এ বার আই লিগ দিতে না-পারলে খুলে রাখবেন লাল-হলুদ জার্সি। ঠিক যে ভাবে দু’বছর আগে অভিমানে খুলে রেখেছিলেন জাতীয় দলের জার্সি! তেমনই সরে গেলেন এ বার, প্রিয় ক্লাব ইস্টবেঙ্গল থেকেও।

Advertisement

আরও খবর: ‘লাখ লাখ টাকা রোজগার করে ওরা, বিমানে ফিরতে পারত না কি?’

টালিগঞ্জ অগ্রগামী দিয়ে শুরু। তার পরে মোহনবাগানের সঙ্গে বছর তিনেকের সফর। দুই ক্লাবেই শেষের দিকটা যে খুব ভাল ছিল এমনটা নয়। অভিমান তো ছিলই! তার পরটা তো লাল-হলুদের ১৪ নম্বর জার্সি। সে তো এক ইতিহাস। মাঝে এক বছর ওএনজিসি-তে। ১০টা বছর তো নেহাৎ কম নয়। এক দিন সবাইকে সরে যেতে হয়। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল থেকে এখনই কি সরে যাওয়াটা ঠিক সময় হল? ক্লাব চেয়েছিল মেহেতাব থাকুক। কিন্তু নিজের কথা থেকে সরতে চান না তিনি। মন খারাপ তো লাগছেই। এ দিন আনন্দবাজারের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বার বার ধরে আসছিল তাঁর গলা।

শেষ পর্যন্ত ছেড়েই দিলেন?

Advertisement

মেহতাব: হ্যাঁ। সবাইকে এক দিন যেতে হয়। আমার জন্য এটাই সঠিক সময় বলে মনে হল। ব্যর্থতার দায় তো কাউকে নিতেই হত। সেটা আমি-ই নিলাম।

১০ বছর তো নেহাৎ কম নয়! কষ্ট হচ্ছে না?

মেহতাব: প্রায় একটা যুগ। খারাপ লাগছে। কিন্তু, এটাই বাস্তব। মিস করব। কিন্তু আবারও বলছি, সবাইকে এক দিন জায়গা ছেড়ে সরে যেতে হয়। আমিও ছেড়ে দিলাম।

প্রথম কবে ভেবেছিলেন, আই লিগ না পেলে আর ইস্টবেঙ্গলের জার্সি পরবেন না?

মেহতাব: মরসুমের শুরুতেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম। সে কথা প্রকাশ্যে জানিয়েও দিয়েছিলাম।

সেই রাতে ঘুমোতে পেরেছিলেন?

মেহতাব: খারাপ লাগা ছিল। কিন্তু, ইস্টবেঙ্গল ছাড়ার থেকেও বেশি কষ্ট ছিল ক্লাবকে আই লিগ দিতে না পারা। ফুটবল কেরিয়ারে এই একটাই না-পাওয়া থেকে গেল। সার্কলটা পুরো হল না।

আর আজ? যখন সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেললেন, সে দিনের সঙ্গে অনুভূতির পার্থক্য আছে কোনও?

মেহতাব: যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, তখন থেকেই মানসিক প্রস্তুতিটা চলছিল। খারাপ তো লাগছেই। কিন্তু পেশাদারিত্বের জায়গা থেকে সঠিক সময়ে সরে যাওয়াটাও বড় ব্যাপার। সবার ভালবাসা নিয়েই সরে যাওয়া ভাল।

ক্লাবকে জানালেন? সেখানে কী বক্তব্য?

মেহতাব: ক্লাবকে আলাদা করে জানানোর কিছু নেই। আমার চুক্তি শেষ। এর পর আমি সিদ্ধান্ত নেব কোথায় যাব, কী করব। নতুন করে আর ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে চুক্তি করছি না।

পরিবার কী ভাবে পাশে দাঁড়াল? বিশেষ করে স্ত্রী?

মেহতাব: পরিবার আমার পাশে ছিল, আছে। সবাই চায় আমি আরও কয়েক বছর খেলি।

আর আপনি কী চান?

মেহতাব: আমিও চাই আরও বছর চারেক খেলতে। নিজেকে যত দিন ফিট রাখতে পারব খেলার ইচ্ছে আছে। সঙ্গে আইএসএল-এ তো ক্লাব আছেই (কেরালা ব্লাস্টার্স)। আই লিগ খেলব কি না পরে ভাবব। আপাতত পরিবারকে সময় দিই। যেটা এত বছরে পারিনি।

সেই সময়টা পরিবারের জন্য কঠিন ছিল?

মেহতাব: আমার জন্যও কঠিন ছিল। বড় ছেলে যখন ছোট, তখন আমি জাতীয় শিবিরে। যখন ফিরেছিলাম, ছেলে আমাকে চিনতে পারেনি। খুব খারাপ লেগেছিল। এমনও হয়েছে, যখন রাতে বাড়িতে ফিরেছি তখন ছেলে ঘুমিয়ে পড়েছে আবার সকালে উঠে ফ্লাইট ধরেছি, ছেলে তখনও ঘুমিয়ে।

এ বার কী পরিকল্পনা? কোথায় খেলবেন?

মেহতাব: পরিকল্পনা নেই কোনও। তবে খেলব। ফুটবল আমার ভালবাসা। এত দিন তো শুধু পয়সার জন্য খেলিনি। জ্বর নিয়ে, মাথাফাটা নিয়ে খেলেছি। টাকার কথা ভাবিনি। ব্ল্যাঙ্ক পেপারে সই করে দিয়েছি ক্লাবের কাছে। তার জন্য প্রচুর মানুষের ভালবাসাও পেয়েছি। প্রত্যাশাটা আমিই সবার কাছে বাড়িয়ে তুলেছি। তাই ফল ভাল না হলে শুনতে হয়েছে।

সময় দিতে চান পরিবারকে।

কেউ আপনার থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল?

মেহতাব: প্রশ্ন তো ওঠেই। বোঝা হতে চাইনি। যাঁরা সমালোচনা করেছেন, তাঁরাও ভালর কথা ভেবেছেন।

মোহনবাগান যদি ডাকে?

মেহতাব: কোনও প্রশ্নই নেই। ওখানেও ভালবাসা পেয়েছি। সেটাই রাখতে চাই। ফেরার কোনও প্রশ্নই নেই।

ইস্টবেঙ্গলে আপনার সেরা স্মৃতি কিছু মনে পড়ছে?

মেহতাব: ক্লাব যখন সেরা প্লেয়ার বেছে নিল, সেটা একটা সেরা স্মৃতি আমার জীবনে। আর একটা সেরা মুহূর্ত, যখন ইস্টবেঙ্গলে প্রথম এলাম। এসেই বড় চোট হয়ে গিয়েছিল। প্রথম মরসুমটা প্রায় খেলতেই পারিনি। ক্লাব আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল। সেটা ভুলতে পারব না কখনও।

১৪ নম্বর জার্সিতেই আপনার সাফল্য, এই নম্বর বেছে নেওয়ার পিছনে কোনও কারণ ছিল?

মেহতাব: ওটা নিতুদা জানেন (দেবব্রত সরকার, ইস্টবেঙ্গল কর্তা)। কেন আমার ২৩ নম্বর পরিবর্তন করে ১৪ করে দিয়েছিলেন। মোহনবাগানে ২৩ নম্বরেই খেলেছি। ইস্টবেঙ্গলে প্রথম বছর ২৩-ই ছিল। তার পর নিতুদা বললেন, ২৩টা ঠিক নয়। ১৪ করে দিলেন। ১৪ নম্বর জার্সি পরে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ভারতীয় দলেও ১৪ পরেছি। আমার গাড়ির নম্বরেও ১৪ আছে।

যুবভারতীতে মেহতাব।—নিজস্ব চিত্র।

ভাল সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খারাপ সময়ও কেটেছে ১৬ বছরের এই ফুটবল জীবনে। সে রকম কিছু মনে পড়ছে?

মেহতাব: সব থেকে খারাপ লেগেছে যখন, ইস্টবেঙ্গলে যোগ দিয়েই চোটের জন্য খেলতে পারলাম না। খেলতে না পারাটা খুব কষ্টের। ক্লাব যখন আমার উপর ভরসা করছে আর আমি খেলতে পারছি না, তখন খুবই খারাপ লাগত।

কোচদের সঙ্গে একটা অদ্ভুত ভাল সম্পর্ক হয়ে যায় আপনার, সব সময়েই। কিন্তু, আপনার জীবনের সেরা কোচ কে?

মেহতাব: অমল স্যরের (অমল দত্ত) অনেকটা ভূমিকা রয়েছে আমার জীবনে। কিন্তু আমার ফুটবল জীবনের টার্নিং পয়েন্ট রাইডারের হাত ধরে। সেই সময়েই রাইডার এসেছিলেন। তখন থেকেই আমার উত্থানের শুরু। ট্রেভর জেমস মর্গ্যান তো ‘তৈরি’ আর ‘সফল’ মেহতাবকে পেয়েছিলেন। রাইডার সেখানে এমন এক জন মেহতাবকে পেয়েছিলেন যে চোটের জন্য এক বছর মাঠের বাইরে ছিল।

ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে কোনও ভাবে যুক্ত থাকবেন ভবিষ্যতে?

মেহতাব: আমি ইস্টবেঙ্গলের ওয়েল উইশার। যে দিন ক্লাব আই লিগ জিতবে, আমার থেকে বেশি কেউ খুশি হবে না। আমার মন থেকে ইস্টবেঙ্গলকে কেউ সরিয়ে দিতে পারবে না। বাইরে থেকে ইস্টবেঙ্গলকে সমর্থন করব। মাঠে গিয়েও খেলা দেখব।

কোচিং-এ আসার কোনও পরিকল্পনা আছে?

মেহতাব: আমি ছোটদের নিয়ে কাজ করতে চাই। অ্যাকাডেমি করারও ইচ্ছে আছে। তবে আগামী দু’বছরে নয়। আপাতত খেলব। ফিটনেস ধরে রাখব। তা হলেই সব হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.