Advertisement
০৬ মে ২০২৪
সবচেয়ে বেশি নজর থাকবে র‌্যান্টির দিকে

ডংয়ের ভরসায় আই লিগ জেতা যাবে না

করুণাময়ীর যে ফ্ল্যাটে থাকেন, তার দরজায় ভারতের জাতীয় পতাকা লাগানো। ড্রয়িংরুমে আবার লাগানো লাল-হলুদ পতাকা। পনেরো বছর বাদে কলকাতায় ফিরে ঐতিহাসিক হেক্সা লিগ জেতার অন্যতম নেপথ্য কারিগর হলেও ইস্টবেঙ্গল আর ভারত নিয়ে আক্ষেপ এখনও পুষে রেখেছেন স্যামি ওমোলো। যা আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বারবার বেরিয়ে আসছিল।

প্রীতম সাহা
শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৪:২৩
Share: Save:

করুণাময়ীর যে ফ্ল্যাটে থাকেন, তার দরজায় ভারতের জাতীয় পতাকা লাগানো। ড্রয়িংরুমে আবার লাগানো লাল-হলুদ পতাকা। পনেরো বছর বাদে কলকাতায় ফিরে ঐতিহাসিক হেক্সা লিগ জেতার অন্যতম নেপথ্য কারিগর হলেও ইস্টবেঙ্গল আর ভারত নিয়ে আক্ষেপ এখনও পুষে রেখেছেন স্যামি ওমোলো। যা আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বারবার বেরিয়ে আসছিল।
প্রশ্ন: এত বছর বাদে আবার ইস্টবেঙ্গল কেন?
ওমোলো: ইস্টবেঙ্গলে মাত্র দু’বছর খেললেও লাল-হলুদ রংটা আমার রক্তে মিশে গিয়েছে। এই ক্লাবে খেলে আমি যে সম্মান, জনপ্রিয়তা পেয়েছি, সেটা আর কোথাও পাইনি। ষোলো-সতেরো বছর আগে যখন ইস্টবেঙ্গল ছেড়েছিলাম, তখনই ভেবে রেখেছিলাম এই ক্লাবকে একদিন না একদিন কিছু ফিরিয়ে দিতে হবে। এই ক্লাবে এ বার কোচিং করানোটা আমার কাছে তাই স্বপ্নপূরণের মতো।
প্র: আপনি তো আগেও লাল-হলুদে কোচ হতে পারতেন?
ওমোলো: হয়তো পারতাম! কিন্তু আমি ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে প্রতারণা করতে চাইনি। ভাল ফুটবলার যে ভাল কোচ হবে, কোথাও লেখা নেই। তা হলে মারাদোনারও মোরিনহো-ফার্গুসনের মতো কোচিংয়ে সাফল্য থাকত। এর আগে ইস্টবেঙ্গলে কোচিং করাতে এলে ক্লাবকে ঠকানো হত।
প্র: তা হলে এখন আপনি তৈরি কোচ বলছেন?
ওমোলো: সেটা আপনারা বিচার করবেন। আমি শুধু বলতে পারি, কেনিয়ায় কোচিং করিয়েছি। ট্রফিও আছে। তাই কোচ হওয়ার জন্য প্রথম বিদেশি ক্লাবে আবেদনপত্র পাঠিয়েছিলাম। ইস্টবেঙ্গল গ্রহণ করেছে।
প্র: দু’বছর মোহনবাগানেও তো খেলেছেন।
ওমোলো: আমার ভারত ছাড়াটাও ওই ক্লাবের জন্যই। এখনও আক্ষেপ করি। ওই সময় অভিমান করে চলে না গেলে আরও দু’-তিন বছর অনায়াসে ভারতে খেলতে পারতাম।
প্র: কীসের অভিমান?
ওমোলো: ম্যাচটা মনে নেই। তবে আমাকে সেই ম্যাচে ইচ্ছে করে খেলাননি কোচ। কারণ তখনই আমি কেনিয়ায় জাতীয় দলে ডাক পেয়েছিলাম। তার পরে অবশ্য একটা ম্যাচ খেলিয়েছিলেন তখনকার মোহনবাগান কোচ। কিন্তু নিজেকে আর মোটিভেট করতে পারিনি। তিক্ততা নিয়ে ভারত ছেড়েছিলাম। ওই ক্লাবের কিছু কর্তার ব্যবহার আর কোচের সিদ্ধান্তে কষ্ট পেয়েছিলাম।

প্র: রাগটাকে সরিয়ে রেখে বলবেন, দুই ক্লাবের পাথর্ক্য কোথায়?

ওমোলো: আবেগটাই আলাদা। ইস্টবেঙ্গল ড্রেসিংরুম সব সময় চার্জড। পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেলেও, লড়াকু মানসিকতা বদলায় না। বরং কঠিন সময়ে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। সমর্থকরাও খুব ভোকাল। ষোলো-সতেরো বছর আগেও যা দেখেছি, এখনও তাই। ছিটেফোঁটা বদলায়নি।

প্র: আই লিগ নিয়ে কতটা আশাবাদী আপনি?

ওমোলো: কলকাতা লিগ আর আই লিগ এক নয়। আই লিগে বিপক্ষের সব তাবড় কোচের স্ট্র্যাটেজি সামলাতে হবে আমাদের। মনস্তাত্ত্বিক লড়াই করতে হবে। তবে আমাদের শক্তি আমাদের একতা। টিমগেম। বিশ্বজিৎ এমন একজন চিফ কোচ যাকে ‘ইয়েস স্যার, ইয়েস স্যার’ করতে হয় না। নিজস্ব মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আছে। ইস্টবেঙ্গল কোচিং স্টাফে কেউ ছোট, কেউ বড় নয়। বিশ্বজিৎ, দেবজিৎ, সঞ্জয়, স্যামি— নাম অনেক কিন্তু আত্মা একটাই।

প্র: তা হলে কী বাড়তি প্রয়োজন আই লিগ জিততে হলে?

ওমোলো: র‌্যান্টি মার্টিন্সই আমাদের আই লিগ দিতে পারে। অনেকেই হয়তো আমার সঙ্গে এক মত হবেন না। কিন্তু একা ডংয়ের ভরসায় চ্যাম্পিয়ন হওয়া যাবে না। পরের সপ্তাহেই এফসি পুণে সিটির বিরুদ্ধে ম্যাচ। তার পরে বাংলাদেশ সফর। র‌্যান্টির পারফরম্যান্সের দিকেই আমাদের সবচেয়ে বেশি নজর থাকবে। তিন মাসের মধ্যে আমাদের একটা শক্তিশালী রিজার্ভ বেঞ্চও তৈরি করতে হবে। কলকাতা লিগে দু’টো ম্যাচে ০-২ পিছিয়ে থেকেও জিতেছি। আই লিগে সেটা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

প্র: কী বলছেন, ডু ডং তো ইস্টবেঙ্গলের নায়ক এখন!

ওমোলো: ডং ভাল ফুটবলার। তবে বেশ কিছু জায়গায় ওকে অনেক উন্নতি করতে হবে। যেমন ‘উইদাউট বল’ ও প্রায় অন্ধ। সেই সময় ওর প্রথম ডিফেন্ডারের ভূমিকাটা কী সেটা বুঝতে পারে না। শুধু অন্যের পাস থেকে গোল করলেই স্ট্রাইকার হওয়া যায় না। গোলের বলও তৈরি করতে হয়।

প্র: তা হলে বলছেন ডং থাকলেও র‌্যান্টি জ্বললেই মশাল জ্বলবে আই লিগে?

ওমোলো: আই লিগ জিততে হলে র‌্যান্টিকে সেরা ফর্মে খেলতেই হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sammy Omelo Exclusive interview
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE