মলিনায় টিম মালিক খুশি। (ডানদিকে) সঞ্জীব গোয়েন্কা: গোটা মরসুমে এক জার্সি,এক জিনস্।
প্রশ্ন: পুণের সঙ্গে শেষ ম্যাচে কিক অফের ঠিক আগের সেকেন্ডে দেখা গেল তিরুপতির ছবি খুলে আপনি প্রণাম করলেন। এটা কি আইএসএলের সংস্কার?
সঞ্জীব: না না। আমি রোজ করে থাকি। ছবিটা সব সময় সঙ্গে থাকে (ডান পকেট থেকে বের করলেন)। প্রথম সিজন থেকেই এটা করি। বেশ গোপনে করি। অবাক লাগছে। দেখলেন কী করে?
প্র: ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের নানা রকম সংস্কার থাকে। কেউ লাকি রুমাল পকেটে রাখে। কেউ আয়না দিয়ে বিপক্ষ ড্রেসিংরুম ভরিয়ে তুকতাক করে। আপনার কুসংস্কার কী?
সঞ্জীব: আমি একই জার্সি গোটা সিজন পরি। সেম জিনস্ ব্যবহার করি। সেম জুতো। সেম মোজা।
প্র: আইএসএলের প্রথম সিজন থেকে করে আসছেন?
সঞ্জীব: হ্যাঁ তাই করছি। আমাদের জার্সিটা অবশ্য চেঞ্জ হয়েছে।
প্র: ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকরা বাধ্যতামূলক ভাবে জ্যোতিষীর কাছে যান। আপনার জ্যোতিষী এ বারের আইএসএল নিয়ে কী বলেছেন?
সঞ্জীব: আমি অ্যাস্ট্রোলজিতে বিশ্বাস করি। জ্যোতিষী কনসাল্ট করি। তবে স্পোর্টসের জন্য নয়। গত বার আইপিএলে শুধু আমাদের ওপেনিং ম্যাচের আগে জ্যোতিষীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম টিম কেমন খেলবে? উনি বলেছিলেন, বহোত বুরা হোগা। তাই হয়েছিল।
প্র: আপনার টিম আইএসএলে সবচেয়ে ধারাবাহিক। প্রথম বার চ্যাম্পিয়ন। গত বার সেমিফাইনাল। এ বারও সেমিফাইনাল। এটা এক রকম দেখার ধরন।
আর এক রকম ধরন হল এ বার এটিকে মোটেই ভাল খেলছে না। হোমে মাত্র একটা ম্যাচ জিতেছে। তাও পেনাল্টিতে।
সঞ্জীব: এটাকে এ ভাবেও দেখতে পারি যে আমরা এমন টিম যাদের সহজে হারানো যায় না। চোদ্দোটা ম্যাচে মাত্র দুটোতে আমরা হেরেছি।
প্র: কিন্তু আপনাদের তো এ বার লক্ষ্যই ছিল বেশি গোল করা। যার জন্য স্ট্রাইকার ভর্তি করেছিলেন। সেটা হচ্ছে কোথায়?
সঞ্জীব: একটা কথা টিম বারবার করে বলছে যে রবীন্দ্র সরোবরে কিছুতেই ওরা সল্টলেকের মাদকতাটা পাচ্ছে না। গ্রিন বেঞ্চের নিষেধের জন্য আমরা লাইভ ব্যান্ড জাতীয় অনেক কিছু করতে পারছি না। যেগুলো হয়তো করলে পরিবেশ তৈরি করা যেত। আর প্লেয়াররাও বলছে, ওই যে সল্টলেক গ্যালারি চিৎকার তুলত, কাম অন হিউম, কাম অন এটিকে। এখানে সেটা হচ্ছে না।
প্র: প্লেয়ারদের মনে হচ্ছে না হোমে খেলছে বলে!
সঞ্জীব: একেবারেই মনে হচ্ছে না। রবীন্দ্র সরোবরে খেলা একটা হিউজ নেগেটিভ হয়ে গিয়েছে।
প্র: দেবজিৎ মজুমদার ম্যাচের পর ম্যাচ গোল না বাঁচালে মলিনা কি ‘মলিন’ হয়ে দেখা দিতেন না?
সঞ্জীব: দেবজিৎ খুব ভাল খেলেছে ঠিক কথা। তবে অনেকেই ভাল খেলছে। আমার মনে হচ্ছে আমরা ক্রমশ উন্নতি করছি।
প্র: বলছেন মলিনাকে নিয়ে আপনি খুশি?
সঞ্জীব: নিশ্চয়ই খুশি।
প্র: কিন্তু হাবাস যেমন ডিফেন্সকে মোটামুটি অপরিবর্তিত রাখতেন। ইনি তো প্রচুর পরিবর্তন করে যাচ্ছেন।
সঞ্জীব: হাবাস ইন্ডিয়ান প্লেয়ারদের আগে থেকে চিনত। মলিনা সদ্য এসে ওদের দেখছে। তবে কোচকে নিয়ে আমি খুশি।
প্র: শনিবারের সেমিফাইনালে সবাই বলছে মুম্বই পরিষ্কার ফেভারিট।
সঞ্জীব: কেন?
প্র: কারণ ও দিকে ফোরলান, সুনীল ছেত্রী আর সনি নর্ডি। আর মলিনার ওপর এখনও ততটা ভরসা তৈরি হয়নি।
সঞ্জীব: শুনুন আমি আপনাকে একটা কথা বলি। আমি যা খবর পাই আমাদের ড্রেসিংরুম এখন অনেক শান্তিপূর্ণ, প্রাণবন্ত আর হাসিঠাট্টায় ভরা। এর কৃতিত্বটা অবশ্যই আমি কোচকে দিতে চাই।
প্র: আপনি বলছেন হাবাসের আমলে ড্রেসিংরুম শান্তিপূর্ণ ছিল না। তা হলে টিম ট্রফি জিতল কী করে?
সঞ্জীব: আমি কোনও তুলনায় যেতে চাই না। তবে এটুকু বলতে পারি, এটিকের আদর্শ হচ্ছে, আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে দর্শকদের মন জয় করা। স্পনসরকে খুশি করা। লোকে ফুটবল মাঠে গোল দেখতে আসে। আমি কোনও ফুটবল এক্সপার্ট নই। আমার সাধারণ বুদ্ধিতে যেটুকু বুঝি হাবাসের ব্র্যান্ড অব ফুটবল হচ্ছে ডিফেন্সিভ। ডিফেন্সিভ থেকে জেতার চেষ্টা করা। মলিনা চায় আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে জিততে। আমরাও ঠিক তাই চাই। দু’গোল খেতে আপত্তি নেই যদি তিন গোল দিতে পারি।
প্র: কিন্তু এ বার এটিকে মাত্র ১৬ গোল করেছে। ১৪ ম্যাচে ১৬ গোল হলে আর মলিনার স্টাইলে কাজ হচ্ছে কোথায়?
সঞ্জীব: এই স্টাইলের ফুটবল খেলতে চাওয়াটা একটা প্রসেস। এক বছরে হবে না। হয়তো পরের বছরে হবে। দরকার হলে তার পরের বছরে পারফেক্ট হবে। এক কথায় আপনি যেটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে জানতে চাইছেন সেটা বলি, মলিনার কাজে আমি খুশি।
প্র: দুটোতেই আপনি মালিক। আইএসএল না আইপিএল, কোথায় বেশি টেনশন?
সঞ্জীব: আইএসএলে আমার আবেগটা বেশি।
প্র: হারলে সেটা কতটা মর্মবিদারক হয়? বিজনেস ডিলে হেরে যাওয়ার মতো?
সঞ্জীব: না না। দিনের শেষে এটা স্পোর্টস। একটা টিমই জিততে পারে। তবু আইপিএলের একটা ম্যাচে খুব খারাপ লেগেছিল। যখন সৌরভ তিওয়ারির পায়ের ফাঁক দিয়ে চার গলানোয় আমরা আরসিবি ম্যাচটা হেরে গিয়েছিলাম।
প্র: আইপিএল শুরু হতে চার মাস। গোটা ক্রিকেটবিশ্ব আপনার একটা সিদ্ধান্তের দিকে আপাতত তাকিয়ে আছে। কাকে ক্যাপ্টেন করবেন। ধোনিকে রাখবেন, না সরাবেন?
সঞ্জীব: আর কিছু বলবেন?
প্র: ক্যান্ডিডেট তো তিনজন। ধোনি, অশ্বিন, স্টিভ স্মিথ।
সঞ্জীব: ফাফ দু’প্লেসির নামটা বাদ দিলেন কেন? সাউথ আফ্রিকান ক্যাপ্টেন (হাসি)!
প্র: ওকে। ফাফ নিয়ে চার। কে হবে?
সঞ্জীব: কথাবার্তা চলছে। জানতে পারবেন।
প্র: আইপিএলের রমরমা নিয়ে যেমন কোনও প্রশ্ন নেই। আইএসএল নিয়ে প্রচুর জিজ্ঞাসা। আদৌ এটা চলবে কি না?
সঞ্জীব: আইএসএল ইজ আ গ্রেট ব্র্যান্ড। অবশ্যই চলবে।
প্র: কিন্তু আপনার মতো একজন বড় বিজনেসম্যান এর জন্য বছরে বারবার করে দশ-পনেরো কোটি টাকা লস করতে যাবে কেন? সে তো একটা সময় হাল ছেড়ে দেবে।
সঞ্জীব: এ বার বেশি লস হচ্ছে রবীন্দ্র সরোবর নতুন করে তৈরি করার জন্য। পরের বার আশা করি আমরা বেটার করব। আমি আইএসএল ব্র্যান্ড নিয়ে খুব আশাবাদী।
প্র: ফুটবল ময়দানের আপনার বিরুদ্ধে নীরব অভিযোগ যে আই লিগে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের স্বার্থ আপনি একেবারেই দেখছেন না।
সঞ্জীব: আমি মনে করি একটা শহর থেকে একটাই টিম আই লিগে খেলা উচিত। আর সেটা এটিকে।
প্র: কিন্তু মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের তো দীর্ঘ পরম্পরা রয়েছে। এত বছরের ঐতিহ্য রয়েছে।
সঞ্জীব: আমি সেই ঐতিহ্যকে সম্মান করি (মৃদু হাসি)।
প্র: বোঝা গেল আপনি এই ব্যাপারে অনড়।
সঞ্জীব: আমি যা বললাম এর বাইরে একটাও কথা বলতে চাই না।
প্র: ওকে। লাস্ট একটা প্রশ্নের উত্তর দিন। সবাই যে শনিবার হোম ম্যাচেও মুম্বইকে ফেভারিট বলছে সেটা কেমন লাগছে?
সঞ্জীব: ভাল তো। আমরা আন্ডারডগ থেকে খুশি।
- ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy