সব স্বপ্ন তো সাফল্যের মুখ দেখে না! জীবনের এই সারসত্যটা যেন ইদানীং বুঝতে শিখছিলেন তিনি। আর তাই ভেবেই বসেছিলেন, সব আশা শেষ। ভাবছিলেন, স্বপ্নকে অন্য পথে ঘোরানোর কথাও। ঠিক তখনই এল সুখবরটা। জাতীয় দলের জার্সি পরে দেশের হয়ে মাঠে নামবেন ফয়েজ ফজল! স্বপ্নই তো ছিল এত দিন। সেই স্বপ্ন আচমকা এমন ভাবে বাস্তবের মুখ দেখবে, ভাবনাতেই ছিল না। জীবনই হঠাত্ তাঁর হাতে তুলে দিল সেই সুযোগ, যার আশা তিনি প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন।
কিন্তু, বাবা যখন ফোন করে তাঁকে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার খবরটা দিলেন, সেই মুহূর্ত থেকেই যেন পাল্টে গেল দুনিয়াটা! আনন্দে ভাসতে থাকা গলা বলছিল, ‘‘বাবা যখন আমাকে ফোন করে জানাল, গোটা পৃথিবীটাই যেন বদলে গেল। সব কিছুকে এত্ত সুন্দর লাগছিল, যে কী বলব! দারুণ লাগছে। আশাটাই তো ছেড়ে দিয়েছিলাম।’’ একটা সময়ের পর সত্যিই সব আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন ফজল। অনেক দিন ধরে জমিয়ে রাখা সেই হতাশা কাটিয়ে ফের ভাবনার অন্য স্রোতে ঘুরতে শুরু করছিলেন তিনি। আসলে, জাতীয় দলের জার্সি গায়ে দেশের হয়ে খেলার স্বপ্ন অনেকেই দেখে। কেউ সাফল্য পায়, কারও স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। নিজেকে ইদানীং দ্বিতীয় দলেই ফেলে রেখেছিলেন তিনি। বিদর্ভের এই বাঁ হাতি কয়েক বছর আগে যখন ক্রিকেট ফিল্ডে নিজেকে চেনাচ্ছেন, তখন তাঁর দিকে কেউ ফিরেও তাকায়নি। ঘরোয়া ক্রিকেটে সেই সময় সাতশোর উপর রান করেছিলেন ফজল। হতাশার সুর তাঁর গলায়, ‘‘কয়েক বছর আগে আমি যখন রঞ্জিতে ৭০০-র উপর রান করেছিলাম, তখনই ভেবেছিলাম দেশের হয়ে খেলার সুযোগ আসবে। কিন্তু তা হয়নি। হতাশ লেগেছিল খুব।’’ এর পর অনেকটা সময় কেটে গিয়েছে। আর তখনই বাবার ফোনটাই জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিল!
এ বার সামনে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। আছে টিকে থাকার লড়াই। এমন সুযোগ তো আর বার বার আসে না! ফজল বলছিলেন, ‘‘সকলেই দেশের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু, সুযোগ পান না। আমি খুশি, আমার কাছে দেশের হয়ে খেলার সুযোগ এসেছে। গোটা দেশে এমন অনেকেই আছেন যাঁদের ঝুলিতে ঘরোয়া ক্রিকেটে ১০০-র উপরে ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু, তাঁরা কখনও সুযোগ পাননি। দেরিতে হলেও আমার সুযোগ এসেছে। নিজের সেরার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব।’’
বয়স এখন ৩০। অনেকটাই অভিজ্ঞ। খেলতে হবে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মতো অধিনায়কের নেতৃত্বে। সেটাও একটা বড় প্রাপ্তি নবাগত ফজলের। এক ঝাঁক জুনিয়রকে নিয়ে তৈরি হয়েছে জিম্বাবোয়ে সফরের জন্য একদিনের এবং টি২০ দল। সেই দলেই জায়গা করে নিয়েছেন ফজল। যাঁর ঝুলিতে রয়েছে ৭৯টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা। রয়েছে ৫৩৪১ রান। সে দিক থেকে দেখতে গেলে অনেক অভিজ্ঞতা নিয়েই জাতীয় দলে ঢুকলেন ফজল।
তাঁর বিশ্বাস, মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে ইরানি ট্রফিতে ম্যাচ উইনিং ১২৭ রানের ইনিংসটাই তাঁকে নির্বাচকদের নজরে এনে দিয়েছিল। তাঁর কথায়, ‘‘আমার বিশ্বাস ওই সেঞ্চুরিটাই আমাকে নির্বাচকদের নজরে এনে দিয়েছে। সাত ঘণ্টা ব্যাট করেছিলাম!’’ হতাশা আরও ছিল। আইপিএলে সুযোগ না পাওয়া। জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পর ফজল বলেন, ‘‘আইপিএলে সুযোগ না পাওয়াটা সত্যি হতাশাজনক। কিন্তু জানতাম, আমাকে আমার কাজ করে যেতে হবে। সে কারণেই যখন ক্লাব ক্রিকেটে খেলার সুযোগ পেয়েছি, নিজেকে উজাড় করে দিয়েছি। যেটা আমাকে ম্যাচ ফিট রেখেছে। এটাই আমার মন্ত্র— হার্ড ওয়ার্ক।’’
এ বছরে এর পর আর কোনও লিমিটেড ওভারের টুর্নামেন্ট নেই। যে কারণে এই সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগাতে চাইছেন ফজল। এক জন ৩০ বছর বয়সী ক্রিকেটার যখন সব আশা ছেড়ে দিয়েছেন, তখন সেই তাঁর সামনেই নতুন করে স্বপ্নকে হাতের মুঠোয় ফিরে পাওয়াটাই বড় প্রাপ্তি। জাতীয় দলের ড্রেসিংরুম ভাগাভাগি করে নেওয়ার উচ্ছ্বাস, অনুভূতিটাই তো আলাদা। সেটা জানেন ফজল। আর সবটাই তাই এখনও স্বপ্নের মতো লাগছে তাঁর কাছে। বলছেন, ‘‘আমি আর কিছু নিয়ে ভাবতে চাই না। নিজের সেরাটা দেওয়ার পাশাপাশি ধোনির থেকে অনেক কিছু শিখতে চাই। ধোনির নেতৃত্বে কে না খেলতে চায়।’’
আরও খবর
অধিনায়ক ধোনি, দলে নতুন মুখ ফজল
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy