Advertisement
E-Paper

ফ্লিনটফ যদি মুম্বইয়ে করতে পারে তা হলে আমিও লর্ডসে পারি

কড়া ভাইস চ্যান্সেলরের সামনে পড়লে তাঁর নিজেরই সমস্যা হত। কবুল করছেন অকপটে। গ্রেগ চ্যাপেল যদি প্রেসিডেন্সিতে ভাইস চ্যান্সেলর পদে আবেদন করতেন? এ বার মুচকি হাসি খেলে যায় তাঁর মুখে।

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৬ ০৪:২৯
শ্রীযুক্ত সেন্ট জেভিয়ার্সের প্রথম পা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে। মঙ্গলবার। ছবি-উৎপল সরকার

শ্রীযুক্ত সেন্ট জেভিয়ার্সের প্রথম পা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে। মঙ্গলবার। ছবি-উৎপল সরকার

কড়া ভাইস চ্যান্সেলরের সামনে পড়লে তাঁর নিজেরই সমস্যা হত। কবুল করছেন অকপটে।

গ্রেগ চ্যাপেল যদি প্রেসিডেন্সিতে ভাইস চ্যান্সেলর পদে আবেদন করতেন? এ বার মুচকি হাসি খেলে যায় তাঁর মুখে। ‘‘তা হলে তো অনেক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় দেখতে পেতেন। মনে হয়, ভারতে গ্রেগের চাকরি হত না।’’

বিরাট কোহালি বনাম সচিন? চোখ-কান বুজে তাঁর ভোট সচিনের দিকে। প্রথমে বললেন, ‘‘বিরাট ভাল খেলছে। কিন্তু সচিন ইজ সচিন।’’ পরে মনে করিয়ে দিলেন, ‘‘২০০৩ বিশ্বকাপে আমি ক্যাপ্টেন। সচিন সে বার নেটে ব্যাটই করত না। আমি টেনশন করলে বলত, নো চিন্তা! আর তার পর গোটা টুর্নামেন্টে ছ’শোর বেশি রান! পারফেকশনটা দেখো।’’

আর টসের জন্য স্টিভ ওয়কে দাঁড় করিয়ে রাখা? ‘‘মাঠের মধ্যে অজিদের মতো অসভ্যতা যদি কেউ করে তা হলে তো ও রকম করতেই হয়। আর ওটা করার পর স্টিভ রান পায়নি।’’

একটু থেমে এ বার গেলেন বাদশায়। ‘‘মুম্বইয়ে রাস্তার ধারে বেঞ্চে শুতো ছেলেটা। সে ভাবে কোনও পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। অথচ রোজ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলতো, হৃতিকদের মতো নাচতে পারি না। খান বা কপূরদের মতো বংশ পরিচয় নেই, বচ্চনের মতো জনপ্রিয়তা নেই। কিন্তু উল্টোদিকের বাংলোটা একদিন কিনে নেব। আজ সেখানেই কিন্তু থাকে শাহরুখ খান। তোমরাও চেষ্টা করলে এ রকম ম্যাজিক দেখাতে পারো।’’

বক্তা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। স্থান প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিরোজিও হল। সামনের শ্রোতারা অবশ্যই প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। সেই প্রেসিডেন্সি! যা কয়েক মাস আগেও উত্তাল হয়ে উঠেছিল ছাত্র আন্দোলনে। এ দিন সামনের মাঠ পেরিয়ে ডিরোজিও হলের দিকে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যখন এগোচ্ছিলেন তখন থেমে গেল চলতে থাকা ক্রিকেট ম্যাচ। কেউটে কালো স্যুট পরা পাঁচ ফুট এগারোর ‘মিস্টার সেন্ট জেভিয়ার্স’কে ঘিরে তখন প্রেসিডেন্সিতে সেলফি তোলার হুড়োহুড়ি! কাঁধের উপর উপচে পড়ছে ভিড়!

আর প্রথম বার প্রেসিডেন্সিতে পা দিয়ে মিস্টার সেন্ট জেভিয়ার্স সৌরভও জিতে নিলেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের হৃদয়। সুপারম্যানের বিখ্যাত ক্যাচলাইনটা অদলবদল করে লেখা যেতেই পারে—জীবন দর্শনের মেড ইজি? গ্রেট মোটিভেটর? নাকি অনুপ্রেরণার ব্যাটারি?

পাশের বাড়ির দাদার মতোই মঙ্গলবার বিকেলে সৌরভ সেই ঝকঝকে মুখের শ্রোতাদের কখনও হাসালেন। কখনও দিলেন জীবন-দর্শনের পেপ টক। আবার কখনও বললেন, ‘‘একটু দুষ্টুমি তো করবেই। তবে এতে যেন কারও ক্ষতি না হয়।’’ যে আড্ডার আয়োজক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টস ইউনিয়ন কাউন্সিল।

আর প্রেসিডেন্সি সম্পর্কে তাঁর মূল্যায়ন? ‘‘দারুণ পরিবেশ! প্রেসিডেন্সির ঐতিহ্যটাই আলাদা। এখানকার করিডরে পা রেখেই বুঝতে পারলাম প্রেসিডেন্সি এগিয়ে।’’ কিন্তু তিনি তো সেন্ট জেভিয়ার্সের প্রাক্তনী। এই সেন্ট জেভিয়ার্স-প্রেসিডেন্সি নিয়েই তো হ্যারো-ইটন, ল্যাঙ্কাশায়ার-ইয়র্কশায়ারের মতো চিরকালীন ‘গোলাপের যুদ্ধ’ আলোকপ্রাপ্ত বাঙালির মননে। বিখ্যাত জ্যাভেরিয়ান যে আজ সিংহের গুহায় ঢুকে পড়েছেন! সৌরভের পাল্টা—সিংহরা সব গুহাতেই থাকতে পারে। সভাঘরে তখন হাততালির ফোয়ারা। থামতেই চায় না।

শুনে কারও চোয়াল শক্ত। কেউ কেউ আত্মবিশ্বাসে ফুটছেন। বাংলা বিভাগের অনমিত্রা চক্রবর্তী, সার্থক দাসরা বলছিল, ‘‘মানুষটা কী অসাধারণ চার্জ করে দিয়ে গেল!’’ আরও এক ধাপ এগিয়ে জীববিদ্যা বিভাগের ইপ্সিতা দাসের প্রতিক্রিয়া, ‘‘পাস করে ভাল চাকরি পাব তাঁর নিশ্চয়তা নেই। ‘দাদা’-র কথাগুলো তখন ফোকাসড রাখবে।’’

শুরুটা হয়েছিল হাল্কা মেজাজেই। যদি সৌরভ হতেন উপাচার্য আর হরভজন সিংহ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র? সৌরভ প্রথমে মজা করে বললেন, ‘‘ভাজ্জি আই কিউ টেস্টে পেরোতো কি!’’ গোটা হল শুনে হো হো করে হাসতে লাগল। এ বার একটু সামলে, ‘‘না, না। বলতাম, তুমি ভাল খেলো। অনেক ভাল কলেজ রয়েছে। সেখানে জায়গা দেখে নাও।’’

উঠল ন্যাটওয়েস্ট জয়ের পর সেই ঐতিহাসিক জামা ঘোরানোর প্রসঙ্গ। চটজলদি জবাব ‘‘ফ্লিনটফ যদি মুম্বইতে করতে পারে তা হলে আমিও লর্ডসে করতে পারি।’’ স়ঞ্চালকের প্রশ্ন বিড়বিড় করে কী বলছিলেন তখন? ‘‘বয়স কম ছিল। কিছু একটা বলেছিলাম।’’ পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘মেরা ভারত মহান কি?’’ হাসতে হাসতে প্রাক্তন ভারত অধিনায়কের জবাব, ‘‘হ্যাঁ, এটাই হবে হয়তো।’’

আর তাঁর সেই স্বপ্নের প্রত্যাবর্তন? হারতে হারতে ফিরে আসা। এটা তো কোনও প্রতিষ্ঠান হাতে ধরে শিখিয়ে দেয় না। প্রসঙ্গ উঠতেই সাফ জবাব—নিজের প্রতি বিশ্বাস না হারালে তুমি পারবেই। গোটা দুনিয়া বলবে তুমি পারবে না। কিন্তু নিজের প্রতি বিশ্বাস থাকলে তুমি পারবেই।’’ বলছিলেন, ‘‘খারাপ সময়ে রোজ আয়নার সামনে বলতাম, হয়তো আমার অনেক খামতি আছে। কিন্তু গুণগুলো শান দিলে আমিও পারব। তোমরাও এটা রোজ করো। ফল পাবেই পাবে। কাম ব্যাক পর্যায়ে হয় ফিনিশ। না হলে ট্রাই করা। এ ছাড়া রাস্তা নেই।’’

বলতে ভুললেন না, ‘‘সম্পত্তির চেয়েও বড় ব্যাঙ্ক ব্যালান্স যখন দেশের হয়ে খেলতে নেমে ম্যাকগ্রার লাফিয়ে ওঠা বল বাউন্ডারিতে পার করে দিতাম।’’ শুনে চকচক করে ওঠে তরুণ ছাত্রের চোখমুখ। হাততালি শেষ হতে চায় না।

ছুটে এল ছাত্রদের প্রশ্ন, ‘‘ঢাকায় এশিয়া কাপ ফাইনাল বৃষ্টি বিঘ্নিত হয়েও শেষ হয়। আর ইডেনে কয়েক মাস আগে সামান্য বৃষ্টিতে দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ ভেস্তে গিয়েছিল।’’ এ বার হাসেন সিএবি প্রেসিডেন্ট। ‘‘বিশ্বকাপে ইডেনের পিচ নতুন করে তৈরি হচ্ছে। আশা করি এ বার তোমার মন খারাপ হবে না।’’

এ বার আসরে সঞ্চালক। যুবরাজ সিংহ আর শোয়েব আখতারের বাবা তাঁদের ছেলেকে নিয়ে যদি আপনার কাছে আসতেন এক জনকে সেন্ট জেভিয়ার্স আর এক জনকে প্রেসিডেন্সিতে ভর্তি করানোর জন্য!

দাদার উত্তর, ‘‘শোয়েব আখতার প্রেসিডেন্সিতে ফিজিক্সের ক্লাস করছে তা আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারি না!’’

ganguly presidency MostReadStories
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy