এ বারের বিশ্বকাপে ফ্রান্সের ভরসা কিলিয়ান এমবাপে। ছবি: রয়টার্স
এক বার বিশ্বকাপ জেতা হয়ে গিয়েছে। ৪ বছর আগে রাশিয়াতে কিলিয়ান এমবাপেরা ট্রফি ছুঁয়েছিলেন। বুঝে গিয়েছিলেন কী ভাবে বিশ্বকাপ জিততে হয়। বিশ্বকাপ জিতলে দেশে ফিরলে মানুষ কী ভাবে গ্রহণ করে। এমবাপেরা চাইবেন আরও এক বার সেই স্বাদ পেতে। ২৩ বছরের এমবাপে তারুণ্য এবং অভিজ্ঞতার মিশেল। সেটাই ফ্রান্সের মূল শক্তি। কোচ দিদিয়ের দেশঁও চাইবেন সেই শক্তিটাকেই ব্যবহার করতে।
কিন্তু শক্তি ব্যবহারের কাজটা সহজ ছিল না। ফরাসি ফুটবল সংস্থার সঙ্গে লড়াই শুরু হয়ে গিয়েছিল কিলিয়ান এমবাপের, যাঁকে ঘিরেই বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখছে ফ্রান্স। তাঁর মাথা ঠান্ডা করেছিলেন দেশঁই। সেই সময় কোনও কথা বলেননি। কোনও বিতর্কেই তিনি মুখ খোলেন না। বিতর্ক ফ্রান্স দলের পিছুও ছাড়ে না। একের পর এক কাণ্ড ঘটে দলে। কখনও শোনা যায় এমবাপের খারাপ চাইছেন পোগবা। কখনও দেশের ফুটবল প্রেসিডেন্টের যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনা সামনে আসে। একাধিক ফুটবলারের চোট এবং এই সব বিতর্ক নিয়েই বিশ্বকাপে এসেছিল গত বারের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে যখন লুকাস হের্নান্দেস চোট পেয়ে বেরিয়ে গেলেন মনে হচ্ছিল হয়তো অবসর ভেঙে ৫৬ বছরের দেশঁকেই মাঠে নামতে হবে। কিন্তু এই এত জটিলতার মাঝেও শান্ত ছিলেন দেশঁ। তিনি বলেন, “আবহাওয়া চঞ্চল, কোথাও স্থিরতা নেই। কিন্তু সব ঠিক আছে।”
গত বারের বিশ্বকাপেও ফ্রান্স দলের দায়িত্ব ছিল দেশঁর হাতে। দলের সারথী তিনি, জানেন তারুণ্য এবং অভিজ্ঞতার মিশেলে তৈরি হওয়া ফ্রান্স দলকে কী ভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়। সেই অভিজ্ঞতা এ বারও কাজে লাগাতে চাইবেন তিনি। দেশঁ বলেন, “আমাদের দলে প্রচুর প্রতিভা। সেই সঙ্গে রয়েছে অভিজ্ঞতা এবং মানসিক জোর। দলে বেশ কিছু তরুণ ফুটবলারও আছে। এই মিশেলটাই দলের শক্তি।” ফাইনালের মতো কঠিন ম্যাচে সেটাই অন্য দলের সঙ্গে ফ্রান্সের তফাত গড়ে দেয় বলে মনে করেন দেশঁ।
মনে রাখতে হবে এই ফ্রান্স দলে নেই পল পোগবা, এনগোলো কঁতে এবং করিম বেঞ্জেমা। যে তিন ফুটবলার একার ক্ষমতায় ম্যাচের ফলাফল বদলে দিতে পারেন। এমন ফুটবলারদের ছাড়াও বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছে যাওয়ার ক্ষমতা রাখেন দেশঁ। কারণ তাঁর দলে রয়েছেন এমবাপের মতো ফুটবলাররা। এ বারের বিশ্বকাপে পাঁচটি গোল করে ফেলেছেন এমবাপে। সোনার বুট জেতার লড়াইয়ে রয়েছেন লিয়োনেল মেসির সঙ্গে। প্যারিস সঁ জরমঁতে এক সঙ্গে খেলেন তাঁরা। রবিবার নামবেন একে অপরের বিপক্ষে। এমবাপে চাইবেন এই ম্যাচে মেসিকে ছাপিয়ে যেতে। আর সেটার জন্য তাঁকে তৈরি করবেন দেশঁ।
এটাই দেশঁ। অনেকে বলেন এটা দেশঁ-বাদ। সব চঞ্চলতার মধ্যেও শান্ত থাকতে জানেন তিনি। জানেন তাঁর দলে একজন এমবাপে আছেন। যিনি একের পর এক রেকর্ড গড়েন আর তুলনা হয় পেলের সঙ্গে। এমবাপে এবং পেলে বিশ্বকাপে গোল করেছেন বয়স ২০ পেরোনোর আগেই। বিশ্বকাপের ফাইনালেও ২০ বছর বয়স হওয়ার আগে গোল করার কৃতিত্ব রয়েছে শুধু পেলে এবং এমবাপের। এ বারের বিশ্বকাপে বয়স ২৪ পেরোনোর আগেই ৯টি গোল করে পেলের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন এমবাপে। তার পরেই ফরাসি তরুণ সম্পর্কে পেলে বলেছিলেন, “আমার ভাল লাগছে এটা দেখে যে তুমি আমার রেকর্ড ভেঙেছ।” এমন একজন ফুটবলার দলে থাকলে দেশঁ তো শান্ত থাকবেনই।
ইটালি (১৯৩৪, ১৯৩৮), ব্রাজিলের (১৯৫৮, ১৯৬২) পর ফ্রান্সই প্রথম দেশ যারা পর পর দু’বার বিশ্বকাপ জিততে পারে। উল্লেখ্য, ভিটোরিয়ো কোজ়ো পর পর দু’বার বিশ্বকাপ জিতেছিলেন ইটালির হয়ে। সেই পালক এ বার দেশঁর মাথাতেও উঠতে পারে। দেশঁর পালকটি যদিও আরও সুন্দর কারণ ফুটবলার হিসাবেও বিশ্বকাপ জিতেছিলেন তিনি। সেই পালক তাঁর মুকুটে তোলার জন্য রয়েছেন এমবাপে। উল্লেখ্য, যে বছর দেশঁ ফুটবলার হিসাবে বিশ্বকাপ জিতেছিলেন সেই ১৯৯৮ সালেই জন্ম হয় এমবাপের।
রাশিয়া বিশ্বকাপে ফ্রান্স যে ভাবে প্রতি ম্যাচেই দাপট দেখাচ্ছিল, এ বারে সেটা দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু এমবাপেরা সঠিক সময় গোল করে কাজের কাজটা করে দিচ্ছেন। যে ইংল্যান্ড ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিল এ বারের বিশ্বকাপে তাদেরকে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছিল ফ্রান্স। হারিয়েছে এ বারের বিশ্বকাপের কালো ঘোড়া হয়ে ওঠা মরক্কোকেও। এমবাপেরা নকআউট পর্বে এখনও কোনও ম্যাচ ৯০ মিনিটের বেশি গড়াতে দেননি। খেলা শেষ করেছেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই। অতিরিক্ত সময় বা পেনাল্টিতে এখনও পরীক্ষিত নন এমবাপেরা। ফাইনালে মেসিদের বিরুদ্ধে নামার আগে সেটাই হতে পারে তাঁদের একমাত্র চিন্তার কারণ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy