Advertisement
০২ মে ২০২৪
Child Labour

পায়ে বলের বদলে হাতে ন্যাতা, বালতি, ঝাঁটা! বাংলার ১০ ফুটবলারকে দিয়ে শিশু শ্রম, উদ্ধার ভিন্‌রাজ্য থেকে

চার মাসের বিশেষ প্রশিক্ষণের জন্য বেঙ্গালুরুর একটি অ্যাকাডেমিতে পাঠানো হয়েছিল ১০ খুদেকে। সেখানে তাদের ফুটবল প্রশিক্ষণ না দিয়ে কার্যত শিশু শ্রমিকে পরিণত করা হয়েছিল।

—প্রতীকী চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৪:২৭
Share: Save:

ভাল ফুটবলার হয়ে ওঠার স্বপ্ন নিয়ে বেঙ্গালুরু গিয়েছিল এক দল খুদে। যাদের বয়স আট থেকে ১৪। কিন্তু সেখানে পৌঁছে অন্য অভিজ্ঞতা হয়েছিল তাদের। ফুটবলের বদলে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় বাসন, ন্যাতা-বালতি, ঝাঁটা, ময়লা জামাকাপড়। সকলকেই সেখান থেকে উদ্ধার করে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

বাংলার ১০ খুদে ফুটবলারকে কার্যত শিশু শ্রমিকে পরিণত করা হয়েছিল। বল নিয়ে মাঠ দাপানোর বদলে কেউ আনাজ কেটেছে, কেউ বাসন ধোয়ার কাজ করেছে, কেউ ঘর পরিষ্কার করেছে। আরও নানা কাজ করানো হয়েছে খুদে ফুটবলারদের দিয়ে। এমনই অভিযোগ বেঙ্গালুরুর একটি ফুটবল অ্যাকাডেমির বিরুদ্ধে।

চার মাসের একটি প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগ দিতে কলকাতা থেকে বেঙ্গালুরু গিয়েছিল তারা। এক মাসের মধ্যেই তাদের ভাল ফুটবলার হয়ে ওঠার স্বপ্ন ধাক্কা খায় দক্ষিণের রাজ্যে। কর্নাটকের যুব লিগে খেলার সুযোগ করে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল ১০ ফুটবলারকে। সে সব যে শুধুই কথার কথা, তা এক মাসেই বুঝে যায় তারা। শুধু নিজেদের রান্না, জামাকাপড় কাচা, ঘর পরিষ্কার, বাসন ধোয়া বা অন্য কাজ করতে হয়নি। অ্যাকাডেমির কোচ, কর্তা এবং অন্যদের সব কাজও করানো হয়েছে তাদের দিয়ে।

কয়েক দিন এমন চলার পর নিজেদের বাড়িতে ফোন করে খুদে ফুটবলারেরা সব কিছু জানায়। তারা জানায়, অত্যন্ত নিম্ন মানের খাবার দেওয়ার কথা। ঠিক মতো কাজ না করলে মারধর করার কথা। তাদেরই এক জন শুভদীপ কুন্ডু বলেছে, ‘‘খেলার সুযোগ ওখানে খুবই কম পেয়েছি আমরা। দিনের বেশির ভাগ সময় বিভিন্ন কাজ করেই কেটে যেত। আমাদের দিয়ে রান্না, জামাকাপড় কাচা বা ঘর পরিষ্কার করানো হয়েছে। বাথরুমও পরিষ্কার করতে হয়েছে আমাদের।’’ আর এক খুদে ফুটবলার ইশান লস্কর বলেছে, ‘‘আমার ওখানে বেশ ভয় করছিল। বাড়ি ফিরতে চাইলে প্রত্যেকের কাছে ২০ হাজার টাকা করে চাওয়া হয়েছিল। আমাদের মারধর করা হয়েছে। খুব কম এবং খারাপ খাবার দেওয়া হত আমাদের।’’

যে সংস্থা ১০ জনকে ফুটবল প্রশিক্ষণের জন্য বেঙ্গালুরুর ওই অ্যাকাডেমিতে পাঠিয়েছিল, তারা বিষয়টি জানতে পেরেই কলকাতা পুলিশের দ্বারস্থ হয়। ১০ খুদে ফুটবলারকে বাড়ি ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয় রাজ্যের ফুটবল সংস্থা আইএফএ। সচিব অনির্বাণ দত্ত এবং সহ-সভাপতি সৌরভ পাল সব কিছু তদারকি করেছেন।

বাড়ি ফিরে আসার পর ক্রমশ স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছে শুভদীপ, ইশানেরা। সোনারপুরের একটি অ্যাকাডেমির শিক্ষার্থী তারা। সেই অ্যাকাডেমি থেকেই উন্নত প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে চার মাসের জন্য বেঙ্গালুরু পাঠানো হয়েছিল ১০ খুদেকে। বাড়ি ফিরে নিজেদের চেনা অ্যাকাডেমিতেই আবার অনুশীলন শুরু করেছে তারা। অ্যাকাডেমির সভাপতি তন্ময় বোস বলেছেন, ‘‘অত্যন্ত খারাপ পরিবেশ থেকে ছেলেগুলোকে উদ্ধার করে আনা গিয়েছে। আমরা খবর পাওয়ার পরেই কলকাতা পুলিশ, আইএফএ-সহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছিলাম। সকলেই অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে আমাদের সাহায্য করেছেন। ছেলেগুলোর সঙ্গে শিশুশ্রমিকের মতো আচরণ করায়, ওদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল। এখন অনেকটা স্বাভাবিক হতে পেরেছে ওরা। আবার আমাদের অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন শুরু করেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE