Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Poulami Adhikary

ফুটবলের স্বপ্ন ভুলে খাবার বিলি পেশা পৌলমীর

অনূর্ধ্ব-১৬ ও ১৯ ভারতের হয়ে খেলা প্রতিশ্রুতিমান ডিফেন্ডারের শুরু হল নতুন জীবনসংগ্রাম। অন্যের খিদে মেটাতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তিনি ছুটে চলেছেন।

লড়াকু: এ ভাবেই জীবনের সংগ্রাম চলছে পৌলমীর। নিজস্ব চিত্র

লড়াকু: এ ভাবেই জীবনের সংগ্রাম চলছে পৌলমীর। নিজস্ব চিত্র

শুভজিৎ মজুমদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৩ ০৭:১০
Share: Save:

স্বপ্ন দেখতেন পেশাদার ফুটবলার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবেন। ভারতীয় দলের হয়ে নিয়মিত খেলবেন। অভাবের সংসারে স্বাচ্ছন্দ্য ফেরাবেন। গাড়ি চালক বাবাকে বিশ্রাম দেবেন। কিন্তু হাঁটুর চোট বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খেলা পৌলমী অধিকারীর স্বপ্ন চুরমার করে দেয় বছর সাতেক আগে।

সুস্থ হয়ে উঠে যখন মাঠে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখনই বাধা হয়ে দাঁড়াল সাংসারিক অনটন। শৈশবে মাকে হারানো বেহালার শিবরামপুরের শ্রীগুরু সঙ্ঘ আশ্রমের পৌলমীকে নিজের সন্তানের মতো বড় করেছেন মাসি। তাঁরও অভাবের সংসার। বাধ্য হয়েই ফুটবলের বুট খুলে রেখে কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন খাবারের বোঝা।

অনূর্ধ্ব-১৬ ও ১৯ ভারতের হয়ে খেলা প্রতিশ্রুতিমান ডিফেন্ডারের শুরু হল নতুন জীবনসংগ্রাম। অন্যের খিদে মেটাতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তিনি ছুটে চলেছেন। কখনও আয় ৪০০ টাকা। কখনও দেড়শো টাকাও জোটে না। অথচ বাংলার ফুটবল নিয়ামক সংস্থার কর্তারা জানেনই না, কী ভাবে দিন কাটাচ্ছেন বাংলার এই প্রতিশ্রুতিমান। পৌলমীর জীবন সংগ্রামের খবর গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে তাঁরা বলছেন, ‘‘ও তো কলকাতায় ক্লাব ফুটবলই ঠিক মতো খেলেনি। আমাদের কখনও নিজের সমস্যার কথাও বলেনি।’’

পৌলমীর জীবনে লড়াই নতুন নয়। মাকে হারানো মেয়েকে টানত শুধু ফুটবল। সঙ্গী ছিল পাড়ার ছেলেরা। তা নিয়ে বিদ্রুপের শিকারও হয়েছেন। যাবতীয় প্রতিকূলতাকে হারিয়ে চার বছর খেলেন দিল্লির ক্লাব ফুটবলে। ভাবতেও পারেননি প্রিয় ফুটবল তাঁর পা থেকে হারিয়ে যাবে।

পৌলমীকে আবিষ্কার করেন শিবরামপুরে দেবাশিস নন্দী। পাড়ার মাঠে তাঁর কাছেই শুরু হয় প্রশিক্ষণ। আনন্দবাজারকে পৌলমী বলছিলেন, ‘‘কাকুর কাছেই ফুটবলের প্রথম পাঠ নেওয়া। শুরুতে অনেকে বুঝতেন না, কেন মেয়ে হয়েও ছেলেদের সঙ্গে ফুটবল খেলছি। কিন্তু দেবাশিস কাকু পাশে ছিলেন।’’

পৌলমী আরও বললেন, ‘‘কলকাতা লিগে ইনভেনশন ক্লাবের হয়ে বছর দু’য়েক খেলে ২০১৩ সালে ভারতীয় দলের ট্রায়ালে গিয়েছিলাম। নির্বাচিত হয়ে অনূর্ধ্ব-১৬ এএফসি এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে খেলি। তিন বছর পরে ভারতের হয়ে গৃহহীনদের বিশ্বকাপে খেলি স্কটল্যান্ডে।’’ তার পরেই বিপর্যয়। পৌলমীর কথায়, ‘‘২০১৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে জাতীয় প্রতিযোগিতায় খেলার সময় হাঁটুতে চোট পাই। ভেবেছিলাম আঘাত গুরুতর নয়। পাড়ার মাঠেও খেলা চালাচ্ছিলাম। চোট আরও বেড়ে যায়। অস্ত্রোপচার করা ছাড়া কোনও উপায় ছিল না।’’

পৌলমী বলে চললেন, ‘‘এর পরে সংসারে প্রচণ্ড অনটন শুরু হল। বাবা গাড়ি চালিয়ে সামান্য যা উপার্জন করেন, তাতে সংসার চলে না। মাসির আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। বাধ্য হয়েই খাবার সরবরাহের কাজ শুরু করি।’’ যোগ করলেন, ‘‘নাম নথিভুক্ত করার জন্য ৫০০ টাকা প্রয়োজন ছিল। তা দেওয়ার সামর্থ ছিল না। অনেকের কাছে হাত পেতেছিলাম।’’ জাতীয় যুব দলের হয়ে খেলা সত্ত্বেও চাকরি পাননি? বললেন, ‘‘মাস দু’য়েক আগে আয়কর বিভাগে একটা ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম। ওরা এখনও কিছু আমাকে জানায়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Poulami Adhikary football
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE