—প্রতীকী চিত্র।
বাইশ জন ফুটবলারের জন্য কোচ ১৬ জন! বার্সোলোনার লা মাসিয়া, বায়ার্ন মিউনিখ বা ম্যা়ঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের অ্যাকাডেমিতে তো নেই-ই। ভারতীয় ফুটবলের সেরা সাপ্লাই লাইন টাটা ফুটবল অ্যাকাডেমির আধুনিক কর্পোরেট কর্তারাও যা শুনে আঁতকে উঠছেন। খড়দহে রাজ্য ফুটবল অ্যাকাডেমিতে সেটাই এখন দস্তুর।
ক্রীড়া পর্ষদের এই ফুটবল অ্যাকাডেমির জন্য গত সাড়ে তিন বছরে রাজ্য সরকারের খরচ হয়েছে প্রচুর টাকা। কিন্তু আজ পর্যন্ত একজন সফল ফুটবলারও বেরোয়নি খড়দহের এই অ্যাকাডেমি থেকে। একদল কোচের-ই অভিযোগ, এ বারের বাংলার যুব দলে যে তিন জন ফুটবলার সুযোগ পেয়েছে তাদের দু’জনই বয়স ভাঁড়িয়ে ঢুকেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, অ্যাকাডেমির টেকনিক্যাল ডিরেক্টর এবং চিফ কোচের মুখ দেখাদেখি নেই। সেটা তাঁরা স্বীকারও করছেন। টিডি গৌতম সরকার এবং চিফ কোচ প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁরা নিয়মিত আসেন না বলেও অভিযোগ করছে ফুটবলাররা। সেটা মেনে নিয়ে প্রশান্ত বলছিলেন, ‘‘আমি সকালে আসি। ঘণ্টা দু’য়েক থাকি। বিকেলে অফিসের পর আসতে পারি না। এটা আমি জানিয়ে রেখেছি দায়িত্ব নেওয়ার আগেই।’’ আর গৌতমের অভিযোগ, ‘‘প্রশান্ত তো আমার সঙ্গে কথাই বলে না। কোনও পরামর্শ নেয় না। আমি মাঝেমধ্যে বিকেলে গিয়ে ঘুরে আসি। কী করব?’’
গোলকিপার কোচ দেবাশিস মুখোপাধ্যায় আবার নথিভুক্তি ছাড়াই দু’জনকে এনে ট্রেনিং করাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন সেখানকার কিছু কোচ। অথচ তিন প্রধান কোচ গৌতম-প্রশান্ত-দেবাশিসকে রাখতে সরকারের খরচ দেড় লক্ষ টাকা। তিন কোচকে সহযোগিতা করার জন্য যাঁরা আছেন সেই ক্রীড়া পর্যদের ১৩ কোচের কী কাজ, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। স্টেডিয়ামে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এদের অনেক আসেন আর চলেও যান। কী করেন, কেউ জানে না। খুঁজলেও অনেককে পাওয়া যায় না। অথচ সবাই মাইনে নিয়ে চলে যাচ্ছেন মাসের পর মাস।
রাজ্য ফুটবল অ্যাকাডেমির বেশিরভাগ ছাত্রের বয়স ২০ পেরিয়েছে। প্রশান্ত বলছিলেন, ‘‘এই বয়সে সবাই লিগ, জাতীয় দলে খেলে। এদের কি শেখাব? ওদের ছেঁটে ফেলে নতুন ফুটবলার নিতে চাইছি। কিন্তু একে-ওকে ধরে ওই ফুটবলাররাই থেকে যাচ্ছে।’’
অ্যাকাডেমি ঘুরতে গিয়ে দেখা গেল, একের পর এক ঘর ফাঁকা। বেশিরভাগ ফুটবলারই ঘরে নেই। এয়ার কন্ডিশনার, পাখা চলছে। ফুটবলারদের কয়েক জনের কাছ থেকে জানা গেল, সকালে ঘণ্টা দেড়েক অনুশীলন হয়। বিকেলে হয় না। ‘‘সব দিন সকালে প্রশান্ত স্যার আসেন না। গৌতম স্যারও আগের মতো আসেন না। কিছুক্ষণ ফিজিক্যাল ট্রেনিং করার পর ম্যাচ খেলা হয়। সব মিলিয়ে ঘণ্টা দেড়েক,’’ বলছিলেন দুই ফুটবলার।
কেন এমন অবস্থা? চিফ কোচ প্রশান্ত বললেন, ‘‘এখানে যে যার মতো চলে। কেউ কিছু বলে না। কোনও শৃঙ্খলাই নেই অ্যাকাডেমিতে। সব আমাকে করতে হয়। টিডি-র সঙ্গে আমার দেখা হয় না। কখন আসে, কখন যায় জানি না।’’ তাঁর আরও মারাত্মক অভিযোগ, ‘‘ক্রীড়া পর্যদ থেকে আসা বেশির ভাগ কোচই অকর্মণ্য। টিম মাঠে খেললেও ওঁদের অনেকেই ঘুমোন এরকম প্রমানও আছে। ছেলেদের খোঁজখবরও রাখেন না। কেউ কেউ মদ্যপান করেও আসে।’’ যা শুনে ক্রীড়া পর্যদের এক কোচের পাল্টা মন্তব্য, ‘‘প্রশান্তবাবু তো নিজেই নিয়মিত আসেন না। এলেও সকালে দেড় ঘণ্টা থেকে চলে যান। সেটা নিয়ে প্রতিবাদ করলেই আমাদের অকর্মন্য বলেন। মদ্যপ সাজানোর চেষ্টা করেন। সিবিআই হোক সব ধরা পড়ে যাবে।’’
এই সব কাজিয়ার মধ্যেই আজ থেকে রবীন্দ্রসরোবরে শুরু হচ্ছে অ্যাকাডেমির প্রতিভা অন্বেষণের জন্য ট্রায়াল। খেলোয়াড় বাছার জন্য জনা পনেরো প্রাক্তন তারকা ফুটবলার থাকবেন বলে খবর। প্রচুর নির্বাচক। মতান্তর অনিবার্য। প্রতি বছরই বাছাই নিয়ে সমস্যা হয়। তা-ও রীতি বদলায়নি। এ বার কী হয় সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy