ভারতীয় ফুটবলে আজ আর কাল আমার কাছে এমন দু’টো দিন, যার জন্য সব কাজ ফেলে আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করা যায়। আসলে শনি আর রবিবারই তো ভারতীয় ক্লাব ফুটবলের দু’টো ভীষণ ইন্টারেস্টিং ঘটনা ঘটছে!
দোহায় যদি আজ সুনীলদের বেঙ্গালুরু এএফসি কাপ চ্যাম্পিয়ন হতে পারে, তা হলে সেটা এ দেশের ক্লাব ফুটবলে শুধু ইতিহাস তৈরি নয়, চিরকাল স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। একইসঙ্গে আই লিগের গুরুত্ব চিরতরে প্রতিষ্ঠিত হবে।
আবার রবিবার পুণেয় দু’বছর কোচিং করিয়ে আসা দলের বিরুদ্ধে আন্তোনিও হাবাসের এখনকার টিমের স্ট্র্যাটেজি দেখার অপেক্ষায় টিভিতে চোখ রাখব। দেখতে চাইব প্রতিশোধস্পৃহা মেটাতে পুণে সিটির স্প্যানিশ কোচের মগজাস্ত্র কতটা তীক্ষ্ণ হয় তাঁর পুরনো দল এটিকের বিরুদ্ধে ম্যাচে।
প্রথমে বেঙ্গালুরুর কথা বলি। ইরাকের এয়ারফোর্স ক্লাবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামছে অ্যালবার্ট রোকার টিম। যে কোনও ভারতীয় ক্লাবের কাছে এই ম্যাচ খেলা গর্ব করার মতো ব্যাপার। বেঙ্গালুরুর ফিরতি সেমিফাইনালটা দেখেছি। সুনীলের দ্বিতীয় গোলটা দেখে সে দিন মুগ্ধ হয়েছি ঠিক, কিন্তু প্রতিপক্ষ জোহর দারুল তুলনায় দুর্বল হওয়ায় ম্যাচটা শেষ দিকে একপেশে হয়ে পড়েছিল। তবে এক গোল খেয়ে করে পাল্টা তিন গোল করাটা কিন্তু বিরাট ব্যাপার বেঙ্গালুরুর। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক ম্যাচে। বেঙ্গালুরুকে দেখে আমার মনে হয়েছে টিমগেমের উপর জোর দিতে চাইছেন ওদের কোচ। ওরা চ্যাম্পিয়ন হলে আমার যেমন দারুণ আনন্দ হবে, তেমন আফসোসও হবে।
আফসোসের কারণ, এটা আমরাও হয়তো পারতাম। মানে আমার মোহনবাগান। কিন্তু নানা সমস্যায় হয়নি। সনি নর্ডি নক আউটে চলে গেল ওর দেশে। কাতসুমি-প্রীতমরা চোট পেল। জাতীয় দলের হয়ে খেলতে চলে গেল আমাদের টিমের অনেকে। ফলে যে ট্যাম্পাইন্স রোভার্সকে তিন গোল দিয়েছিলাম, গুয়াহাটিতে তাদের কাছেই হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল এএফসি কাপ থেকে। কী আর করা যাবে? তবে এ বারও তো এএফসি কাপ খেলার সুযোগ আসবে। তখন প্রাণপণ চেষ্টা করব। তবে এটা ঘটনা, বেঙ্গালুরু এখনও পর্যন্ত যা করেছে সেটা আমার মতো যে কোনও ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীকে গর্বিত করছে। এত দিন শুনে এসেছি ইস্টবেঙ্গলের আসিয়ান কাপ জেতা বা ডেম্পোর এএফসি কাপের সেমিফাইনালে ওঠার কথা। সেই সাফল্য বেঙ্গালুরু ইতিমধ্যে টপকে গিয়েছে। এর পরে সুনীলরা চ্যাম্পিয়ন হলে ভারতের ক্লাব ফুটবলে জোয়ার আসবে। ক্লাব কর্তারা উন্নতির নতুন পথও দেখতে পাবেন।
আমার নিজের ধারণা, সুনীলরা আজ গোটা দেশের শুভেচ্ছা আর সমর্থন পেয়ে একটা বাড়তি উদ্যম নিয়ে খেলবে। ওরা এএফসি কাপ ফাইনালে হারাতেই পারে ইরাকের ক্লাবকে।
কিন্তু রবিবার হাবাস, না মলিনা—কার টিম আইএসএলের ম্যাচটা জিতবে, তা নিয়ে বাজি ধরছি না। ম্যাঞ্চেষ্টার সিটি বনাম বার্সেলোনা, দুটো ম্যাচের রেজাল্ট দেখার পর আমি এ ব্যাপারে আরও বেশি সতর্ক। গুয়ার্দিওলার মতোই তো হাবাসের অবস্থা। যে প্রিয় টিম ছেড়ে এসেছেন তাদের বিরুদ্ধেই লড়তে নামবেন। আর হিউম-অর্ণব-পস্তিগার অবস্থা মেসি-পিকে-ইনিয়েস্তার মতো। পুরনো গুরুর বিরুদ্ধে জেতার জন্য ঝাঁপাতে হবে। যিনি এককালের শিষ্যদের নাড়িনক্ষত্র জানেন।
এ রকম ম্যাচে হাবাসের অবস্থা কেমন থাকবে আমি অনেকটা টের পাচ্ছি। ইউনাইটেড বা মহমেডানে কোচিং করিয়ে আসার পর ওদের বিরুদ্ধে জেতার স্ট্র্যাটেজি তৈরি করতে হয়েছে আমাকে। মোহনবাগান কোচ হিসেবে। আর বিপক্ষ ফুটবলারদের গুণ-দোষ দু’টোই জানতাম বলে স্ট্র্যাটেজি কষতে খানিকটা সুবিধে হয়েছিল। যেটা হাবাসেরও হবে এটিকের বিরুদ্ধে। পুণে লিগ টেবলের নীচে। ওরা এমনিতেই ঝাঁপাবে বাঁচতে। সঙ্গে হাবাসের মগজ কাজ করবে পুরনো ছাত্রদের মাঠে থামাতে। অন্য দিকে পস্তিগারাও জানে ওদের প্রাক্তন কোচ কী ভাবে সেটা পিস মারতে বলেন। কী ভাবে ফ্রি কিক থামানোর ছক নেন। ফলে ম্যাচটা উত্তেজক হবে বলেই মনে হয়।
এটিকে লিগ টেবলে সবার আগে থাকলেও চাপটা কিন্তু ওদের উপরই বেশি। হাবাস-আতঙ্কে ওরা কিছুটা হলেও ভুগবে। সেটাই মলিনা কী ভাবে সামলান সেটা দেখার অপেক্ষায় থাকলাম। (৩৬০ কর্পোরেট রিলেশনস)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy