ফাইনালের প্রস্তুতি শেষ। কোচ ও প্রেমিক প্যাট্রিকের সঙ্গে সেরেনা। শুক্রবার উইম্বলডনে। ছবি: রয়টার্স।
এই লেখা যখন পড়বেন ততক্ষণে আমরা জেনে যাব, এ বার উইম্বলডনে ‘দ্য ম্যাচ’ যেটাকে বলা হচ্ছে তার রেজাল্ট।
স্থানীয় নায়ক অ্যান্ডি মারে বনাম সর্বকালের সেরা টেনিস প্লেয়ার রজার ফেডেরার!
যদিও সেই মহাম্যাচের পরিণতি অবশ্যই আর এক জন চ্যাম্পিয়নকে আমাদের চোখের আড়াল করতে পারবে না। সে-ও হয়তো এখানে ইতিহাস গড়তে চলেছে। সেরেনা উইলিয়ামস এ বছর অতুলনীয়। মেয়েদের ট্যুরের এই সিনিয়র পেশাদার শনিবার একটা অনবদ্য কীর্তির অধিকারী হতে পারে— একই সঙ্গে চারটে গ্র্যান্ড স্ল্যামেই চ্যাম্পিয়ন! সঙ্গে এক ক্যালেন্ডার বর্ষে চারটে মেজর জেতার সুযোগও রয়েছে ওর। মানে ক্যালেন্ডার গ্র্যান্ড স্ল্যাম— টেনিসের সর্বোচ্চ কীর্তি!
শনিবার গারবিন মুগুরুজার চ্যালেঞ্জ যদি সেরেনা টপকায়, তা হলে প্রথম কীর্তিটা গড়ে ফেলবে। আর দ্বিতীয়টার দরজায় কড়া নাড়বে।
এক দশকেরও উপর হয়ে গেল মারিয়া শারাপোভার উপর সেরেনা কর্তৃত্ব করে চলেছে। আর সেই রেকর্ড বৃহস্পতিবার সেমিফাইনালে আরও এক ধাপ এগোল। রুশ মেয়েকে মার্কিন চ্যাম্পিয়ন একচুলও সুযোগ দেয়নি। সেরেনার সার্ভিস সব সময় ওকে কিছু বাড়তি পয়েন্ট এনে দেয়। কারণ, মেয়েদের টেনিসে এটাই এখন সেরা সার্ভিস— হয়তো সর্বকালের সেরাও!
শারাপোভার এখনই কিছু পর্যালোচনা করা দরকার। সেরেনার সার্ভের একটা যুতসই উত্তর ওকে বার করতেই হবে। সেন্টার কোর্টে শারাপোভার যাবতীয় চালকে টেক্কা মেরেছে সেরেনা। দু’জনের চূড়ান্ত একপেশে হেড-টু-হেড রেকর্ডের চেয়ে কিন্তু এমনিতে শারাপোভা অনেক ভাল প্লেয়ার। এবং এটাই সবচেয়ে বড় হতাশা যে, এই সেমিফাইনালটা যতটা রংদার, উত্তেজক হবে বলে মনে করা হচ্ছিল, তার ছিটেফোঁটাও হল না।
সেরেনার অসাধারণ যাত্রার সামনে প্রকৃত চ্যালেঞ্জ একটাই এসেছিল— ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কা। ও সব সময় সেরেনাকে কঠিন লড়াই দিয়ে থাকে। কোয়ার্টার ফাইনালে ওর খেলা খুব ভাল লাগল। ভিক্টোরিয়া দু’টো গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে খুব নিশ্চিত ভাবে শীর্ষে উঠছিল। যে এগনোটা একটা চোটে ওর ব্যাঘাতপ্রাপ্ত হয়। সেখান থেকে ওর সেই পুরনো ফর্মে ফেরার ইঙ্গিতটা খুব ভাল খবর। ফুল-ফিট ভিক্টোরিয়া এই মুহূর্তে মেয়েদের ট্যুরে একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর আমার মতে।
সব শেষে শনিবারের ফাইনালে সেরেনার প্রতিদ্বন্দ্বীর কথায় আসা যাক। গারবিন তরুণ প্লেয়ার। উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সব রসদ ওর টেনিসে আছে বলেই তো মনে হচ্ছে। খুব ভাল বিগ সার্ভ। স্বাভাবিক অ্যাথলেটিজম। ওর খেলার যে দুটো জিনিস ঘাসের কোর্টে ওকে বাড়তি ক্ষুরধার করে তুলেছে। সেমিফাইনালে অ্যাগনিয়েস্কা রাডওয়ানস্কার বিরুদ্ধে শুরু থেকেই মুগুরুজা আক্রমণাত্মক ছিল। আরান্থা সাঞ্চেজ-ভিকারিওর পরে কোনও স্প্যানিশ মেয়ে এত দিন উইম্বলডন ফাইনালে উঠতে পারেনি। সে জন্য আরওই মুগুরুজা টেনিস-পণ্ডিতদের বোকা বানানোয় খুব ভাল লাগছে।
ফাইনালের লাইন-আপে দৃশত একটু ভারসাম্যের অভাব রয়েছে মনে হলেও মুগুরুজা নিশ্চয়ই খোলা মনে খেলবে। পরিস্থিতি, আবহ আর নজির গড়ার যাবতীয় চাপ বরং সেরেনার ঘাড়ে। ইতিহাস কারও অপেক্ষায় রয়েছে—এটা কি সেই মনুষ্যটির উপর কম বড় চাপ! এ রকম অবস্থায় এক জন ভাল প্লেয়ারের ক্ষেত্রে স্নায়ুর ব্যাপারটা এসে পড়ে। কিন্তু এখানে আমরা কথা বলছি মানসিক ভাবে এক জন সুপার-টাফ চ্যাম্পিয়নকে নিয়ে।
খেলাধুলোর একটা বিশেষত্বই হল অঘটন ঘটানো। তবু আজ কাউকে সেরেনার বিরুদ্ধে বাজি ধরতে হলে তাকে আমার চেয়েও অনেক বেশি সাহসী হতে হবে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy