Advertisement
E-Paper

আমার সলমন খানের মতো সিক্স প্যাক নেই, হাতে শুধু একটা ক্রিকেট বল আছে

ইন্টারভিউটা হওয়ার কথা ছিল আরও আগে পাকিস্তান যখন ঢাকায় এশিয়া কাপ খেলছে। কিন্তু মহম্মদ আমের সম্পর্কে পাকিস্তান বোর্ড এবং টিম ম্যানেজমেন্ট এতই স্পর্শকাতর যে, রাজি করাতে পারাই মস্ত ঝকমারি। তাঁকে মিডিয়া থেকে সরিয়ে কার্যত অসূর্যম্পশ্যা করে রেখে দেওয়া হয়েছে। আনন্দবাজারের জন্য অবশ্য সফরকারী পাকিস্তান ব্যতিক্রম করল। নির্বাসনের পর ফিরে আসা বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর বোলার শুক্রবার দুপুরে ফোনে এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউ দিলেন। কথা হল আগাগোড়া হিন্দিতে। শাস্তি ওঠার পর ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া আমেরের প্রথম ইন্টারভিউ...ইন্টারভিউটা হওয়ার কথা ছিল আরও আগে পাকিস্তান যখন ঢাকায় এশিয়া কাপ খেলছে। কিন্তু মহম্মদ আমের সম্পর্কে পাকিস্তান বোর্ড এবং টিম ম্যানেজমেন্ট এতই স্পর্শকাতর যে, রাজি করাতে পারাই মস্ত ঝকমারি। তাঁকে মিডিয়া থেকে সরিয়ে কার্যত অসূর্যম্পশ্যা করে রেখে দেওয়া হয়েছে। আনন্দবাজারের জন্য অবশ্য সফরকারী পাকিস্তান ব্যতিক্রম করল। নির্বাসনের পর ফিরে আসা বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর বোলার শুক্রবার দুপুরে ফোনে এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউ দিলেন। কথা হল আগাগোড়া হিন্দিতে। শাস্তি ওঠার পর ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া আমেরের প্রথম ইন্টারভিউ...

গৌতম ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৬ ০৩:৫০

প্রশ্ন: একই হোটেলে আপনারা আছেন। লিফ্টে যদি হঠাৎ রোহিত শর্মার সঙ্গে দেখা হয়ে যায় কী বলবেন?

আমের: হা হা, ওর দিকে তাকিয়ে হাসব। দেখুন আমরা মাঠে একে অন্যের দুশমন হতে পারি। ম্যাচ জেতার জন্য একে অন্যের সঙ্গে লড়াই করতে পারি কিন্তু সেটা তো বাইশ গজের জীবন। তার বাইরে আমাদের মধ্যে কোনও শত্রুতা নেই। আমরা নর্ম্যাল পেশাদারদের মতোই।

প্র: এই ক’দিন যে কলকাতায় আছেন কী কিনলেনটিনলেন? আজই তো আমাদের কাগজে ছবি বেরিয়েছে আপনাদের মহম্মদ হাফিজ পার্ক স্ট্রিটের দোকানে শাড়ি কিনছেন!

আমের: আমি কিছুই কিনে উঠতে পারিনি। হোটেলের মধ্যেই মোটামুটি কেটে গিয়েছে। দেখি কী কিনি।

প্র: বলছেন কী! আপনি প্রথম ইন্ডিয়া এলেন আর আপনাকে বাড়ি থেকে কেউ শপিং লিস্ট দেয়নি যে অমুকটা অবশ্যই আনবি?

আমের: বলেছে গার্মেন্টসের কিছু ভাল পেলে আনবি। কিন্তু শপিং লিস্ট নিয়ে তখনই ভাবা যায় যখন চাপটা কমে। এখন ভাবার মানসিকতা নেই।

প্র: কালকের ম্যাচে অমিতাভ বচ্চন জাতীয় সঙ্গীত গাইতে আসছেন শুনেছেন?

আমের: শুনলাম। দারুণ লাগল শুনে। ওঁর কিছু ফিল্ম দেখেওছি। এই পর্যায়ের মানুষরা যদি ক্রিকেট প্রোমোট করেন, তা হলে তো ক্রেজ বাড়তে বাড়তে কোথায় যাবে কে জানে।

প্র: বাট আপনি নিশ্চয়ই অমিতাভের ফ্যান নন? উনি অনেক আগের প্রজন্মের।

আমের: সত্যি বলতে না। আমি সলমন খানের খুব ফ্যান।

প্র: তাই?

আমের: ইয়েস। সলমনকে দারুণ লাগে আমার। প্লাস উনি যে টপে থেকেও চ্যারিটির জন্য এত সময় দেন এটা আমার কাছে খুব আকর্ষণীয়।

প্র: সলমনের সিক্স প্যাক। আপনার?

আমের: হা হা। না না সলমনের মতো ওই বডি আমার কোথায়? আমার সিক্স প্যাকট্যাক নেই, হাতে শুধু একটা ক্রিকেট বল আছে।

প্র: বাহ্ দারুণ উত্তর। এ বার বলুন ভারতীয় ব্যাটিংয়ের সলমন খান কে?

আমের: হা হা বিরাট কোহালি।

প্র: এই যে ঢাকা ম্যাচটা কোহালি আপনার হাত থেকে বাঁচিয়ে দিলেন তার পর খেলা শেষ করে কী মনে হচ্ছিল?

আমের: মনে হচ্ছিল যে শুধু টেকনিক থাকলে এই সব ম্যাচে রান করা যায় না, আন্ডার প্রেসার আপনার দম চাই। তাগড়া হতে হয় মনে। বিপক্ষ হয়েও সে দিন মনে মনে হাততালি দিই ওর জন্য।

প্র: কাল ম্যাচের আগে ইমরান আর আক্রম নাকি আপনাদের পেপ টক দেবেন? তা কী জিজ্ঞেস করবেন ওঁদের?

আমের: ওই মাপের শিক্ষক যখন কথা বলেন তখন ছাত্ররা চুপ করে শোনে। আমি কিছু জিজ্ঞেসই করব না। ওঁদের কাছে শুনব এই সব বড় ম্যাচে কী করে থাকতে হয়।

প্র: কী করে থাকতে হয় তো এত দিনে আপনার মতো করে আপনিও জেনে গিয়েছেন। এটা আপনার কত নম্বর ইন্ডিয়া-পাক ম্যাচ?

আমের: এটা ফোর্থ হবে (সামান্য লজ্জার সঙ্গে)।

প্র: ইন্ডিয়া-পাক ম্যাচের আগে কি ডায়েট চার্ট বদলে যায় আপনার? এত চাপ আপনার ওপর, নিশ্চয়ই সলিড কমিয়ে লিকুইড আর গ্রিলড ফুড অর্ডার করেন?

আমের: ডায়েট চার্ট যে বিরাট বদলায় তা নয় (প্রচণ্ড হাসি)। কিন্তু প্রিপারেশনের ধরনটা বদলায়। এই ম্যাচের আগে নিজেকে বারবার বলতে হয় এটা শুধু স্কিল নয়, সাহসীদের মঞ্চ। ম্যাচে গিয়ে তাগড়া থাকবে। দাপুটে থাকবে। অ্যালার্ট থাকবে।

প্র: এই যে ঢাকায় মাত্র ৮৩ রান হাতে নিয়েও ভারতকে প্রায় হারিয়ে দিচ্ছিলেন দেশে গিয়ে কেমন সংবর্ধনা পেলেন?

আমের: প্রচুর প্রশংসা পেলাম। ইন্ডিয়া ম্যাচটা আসলে এমন একটা ম্যাচ যে ভাল খেললে রাতারাতি আমাদের মুলুকে আপনার ভ্যালু বেড়ে যায়।

প্র: কাল খেলা চলার সময় আপনার বাড়িতে কী পরিস্থিতি থাকবে?

আমের: উফ! উত্তেজনায় সবাই ফুটবে। আম্মি তো প্রতিনিয়ত দোয়া করে যায় আল্লাহর কাছে।

প্র: বাড়িতে সবচেয়ে ক্লোজ কি আম্মা?

আমের: মার আমি ক্লোজ। বাট সবচেয়ে ক্লোজ বড় দিদির সঙ্গে।

প্র: ওঁরা কি খুব চিন্তা করছেন এত বিতর্ককে হারিয়ে আপনি ঢাকায় ভাল করার পর হিন্দুস্থানে সবচেয়ে বড় পরীক্ষা?

আমের: ওঁদের আমি বললাম যে চিন্তার কোনও কারণ নেই। আমি দারুণ আনন্দে আছি। এখানে আমাদের টিম যা অভ্যর্থনা পাচ্ছে ভাবাই যায় না।

প্র: পাকিস্তানের আগের ম্যাচে তো প্রচুর সাপোর্ট পেলেন আপনারা?

আমের: ওয়ার্ম আপ ম্যাচেও পেয়েছিলাম। কিন্তু বাংলাদেশের দিন যা হল ভাবাই যায় না। আমার তো মনে হচ্ছিল যেন...

প্র: যেন গদ্দাফিতে খেলছি?

আমের: গদ্দাফি শুধু নয়। যেন পাকিস্তানের যে কোনও ক্রিকেট মাঠে খেলছি। উরি বাবা। ভাবা যায় না।

প্র: অবাক লেগেছে খুব?

আমের: আমি সবচেয়ে অবাক হয়ে গেছি শাহিদভাই ব্যাট করতে যাওয়ার সময় চিৎকার শুনে। শাহিদ আফ্রিদি পৃথিবীর যে কোনও মাঠেই ওর এন্টারটেনিং ক্রিকেটের জন্য পপুলার। কিন্তু সে দিন যা আওয়াজ উঠল যেন ওর নিজের শহরে খেলছে।

প্র: উইকেট পাওয়ার পর আপনার দু’হাত ছড়িয়ে সেলিব্রেট করার ভঙ্গিটা বেশ জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছে। দু’হাত পাখির মতো ছড়িয়ে। ভারতীয় সমর্থকেরা যদিও চাইবে না ওই ভঙ্গিটা কালকের ম্যাচে দেখতে।

আমের: ওই পোজটাতে বলতে পারেন কিছুটা শোয়েব আখতারের ছায়া আছে। শোয়েবভাই উইকেট পাওয়ার পর এই ভাবে দুটো হাত ছড়াত। ওর অবশ্য দুটো হাত পুরো ওপরে থাকত। আমারটা নীচে নামে।

প্র: শোয়েবের সঙ্গে আলাপ আছে নিশ্চয়ই?

আমের: হা হা, খুব ভাল আলাপ। উনি সিনিয়র দাদার মতো। ঢাকাতেও তো কত আড্ডা হল।

প্র: আর আক্রম, যাঁর ছায়া সবাই আপনার মধ্যে পায়?

আমের: ওয়াসিমভাইয়ের কাছে কোনও প্রবলেমে পড়লেই যাই। বোলিং সংক্রান্ত যে কোনও প্রবলেম সলভের ব্যাপারে উনি হলেন দুর্ধর্ষ। পিএসএলের সময় আমার একটা টেকনিক্যাল প্রবলেম হচ্ছিল, ওটা তো উনিই শুধরে দিলেন।

প্র: শেষ প্রশ্ন, বলুন ভেতরটা কেমন গমগমে হয়ে থাকছে কালকের সন্ধে সাড়ে সাতটার কথা ভেবে?

আমের: মিডিয়া যত লিখে এটাকে একটা যুদ্ধের পর্যায়ে নিয়ে যায় সে সব ভাবতে গেলে তো আপনি খেলতেই পারবেন না। আমাদের কাজ মাঠে নেমে খেলা। পুরো ফোকাসটা খেলাতেই ধরে রাখা। হাইপকে দূরে রেখে। একই সঙ্গে এই সত্যিটার সঙ্গেও লড়তে হয় যে, নর্ম্যাল পাকিস্তান ম্যাচ যদি টিভিতে দশ লাখ লোক আমাদের দেশে দেখে তো কালকেরটা দেখবে কয়েক কোটি। কী করে পুরো অস্বীকার করি, চাপ তো একটা বটেই!

প্র: শেষ বিশ্বকাপে অ্যাডিলেডে যখন পাকিস্তান হারছিল তখন আপনি কী করছিলেন?

আমের: তখন পাকিস্তানে বাড়িতে বসে টিভি দেখছিলাম। খুব অসহায় লাগছিল।

প্র: তখন ভেবেছিলেন এক বছরের মধ্যে অদৃষ্ট আপনাকে বদলা নেওয়ার সুযোগ করে দেবে?

আমের: সত্যি কথা বলতে কী, একদম ভাবিনি।

wt20 Amir exclusive interview MostReadStories
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy