Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Cheteswar Pujara scored century

‘জানতাম আমার ছেলে নিরানব্বইয়ে যাবে না’

রাজকোট প্রেসবক্সের ঠিক উল্টো দিকে বসে আছেন যে ভদ্রলোক, তিনি নড়ছেনও না, চড়ছেনও না। আধ-এক ঘণ্টা নয়, প্রায় পাঁচ ঘণ্টা হয়ে গেল। ক্যামেরা ধরছে বারবার, তুলে আনছে মুখের প্রতিচ্ছবি।

ডিআরএসে ‘নট আউট’ পূজারা। গ্যালারিতে উচ্ছ্বাস ব্যাটসম্যানের বাবা অরবিন্দ। ছবি: টুইটার।

ডিআরএসে ‘নট আউট’ পূজারা। গ্যালারিতে উচ্ছ্বাস ব্যাটসম্যানের বাবা অরবিন্দ। ছবি: টুইটার।

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়
রাজকোট শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৬ ০৪:১৫
Share: Save:

রাজকোট প্রেসবক্সের ঠিক উল্টো দিকে বসে আছেন যে ভদ্রলোক, তিনি নড়ছেনও না, চড়ছেনও না। আধ-এক ঘণ্টা নয়, প্রায় পাঁচ ঘণ্টা হয়ে গেল। ক্যামেরা ধরছে বারবার, তুলে আনছে মুখের প্রতিচ্ছবি। কিন্তু নীল-সাদা স্ট্রাইপ টি-শার্ট বসে আছেন ঠায়, হাতের মধ্যে অদ্ভুত ভাবে হাত গুঁজে। মোবাইল কল ধরছেন না। কথা বলতে চাইছেন না পারতপক্ষে। এমনকী ভদ্রলোকের পাশে তাঁর ভাই, আত্মীয়-স্বজনদের তাঁর সঙ্গে হাত মেলাতে হলে নিজেদের খুঁজেপেতে বার করতে হচ্ছে ভদ্রলোকের তালুকে!

এতটা টেনশনে পড়ে গিয়েছিলেন? নাকি কুসংস্কার?

“আরে না, না, টেনশনের কিছু না। আমি ওর ক্রিকেটটা মন দিয়ে দেখছিলাম। উচ্ছ্বাস দেখানো যে কোনও সময় যেতে পারে। কিন্তু কোথায় ওর জন্য ফিল্ড সেটিং চলছে, কোথায় ওর সমস্যা হচ্ছে, সে সব দেখেও তো রাখতে হবে। পরে তো বসতে হবে ওগুলো নিয়ে,” দুপুর পৌনে তিনটে নাগাদ ‘মৌনব্রত’ ভেঙে কথাগুলো যখন বলছিলেন ভদ্রলোক, স্বীকার না করতে চাইলেও তাঁকে আশ্বস্ত লাগে।

ইনি অরবিন্দ পূজারা। পরিচয়ে চেতেশ্বর পূজারার বাবা।

গত রাত থেকে একটা কথা যাঁর ক্রমাগত মনে হয়েছে। মনে হয়েছে, ইংল্যান্ড এত রান করে দিল। রাজকোটের প্রথম টেস্ট কি শেষ পর্যন্ত তা হলে ইংরেজ-শাসনের নামে লেখা থাকবে? “বারবার ভাবছিলাম, আমাদের কাউকে না কাউকে রানটা করতে হবে। ভাবতে পারিনি, চিন্টু (পূজারার ডাকনাম) সেটা করে যাবে। কাল রাতে কথা হয়েছিল ওর সঙ্গে। ক্রিকেট নিয়ে ইচ্ছে করেই কিছু বলতে যাইনি। চিন্টুও বলেনি। এ বার বলব। বলব, সাবাশ বেটা। তুই আমাদের মান রাখলি।” কিন্তু টেনশন কি একেবারে হয়নি? সম্ভব কী ভাবে? ৮৬ রানের মাথায় পূজারাকে একবার আউট দিয়ে দিলেন আম্পায়ার। ডিআরএসে পূজারা ফিরে এলেন। আবার ৯৯ দাঁড়িয়ে যখন, গোটা দশেক বলে সেঞ্চুরির রানই এল না। উল্টে চা-বিরতি হয়ে গেল! টেনশনে তো রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া উচিত। গোটা ভারতের বেড়ে গেল, আর আপনার নয়?

“না, বাড়েনি। আমি তো ছোট থেকে দেখছি ওকে। জানি কখন ও চাপে পড়ে, কখন পড়ে না। চিন্টু ডিআরএস কল করার সময় আমার মনে হয়েছিল, আউট হয়নি। বেঁচে যাবে। আর নিরানব্বইয়ে দাঁড়িয়ে থাকা? ওর মানসিকতাটা কিন্তু আলাদা। আমি নিরানব্বইয়ে দাঁড়িয়ে এটা ভাববেই না ও। আমার ছেলে নব্বইয়ের ঘরে নড়বড় করে না,” বলতে থাকেন অরবিন্দ।

এবং শেষ পর্যন্ত ছেলের সেঞ্চুরিতে ‘আবেগে ভাসব না’-র শপথও ভেঙে যায়। অরবিন্দ বলে ফেলেন, “আমি ভাবিনি আজকের এই মুহূর্ত পাব বলে। এখন আমার প্রচুর কাজ। পাড়ায় মিষ্টি বিলোব। বললে, গোটা স্টেডিয়ামেই বিলোব!” পরিবারের আর একজনকে ঠিক উপরের ব্লকে পাওয়া গেল যিনি মিষ্টি বিলোতে চান না। ভেবে বার করতে চান একটা ভাল প্ল্যান। যাতে সেলিব্রেশনটা ঠিকঠাক হয়। ইনি, তরুণী। চেতেশ্বর পূজারার স্ত্রী। পূজা পূজারা। নীচের ব্লকের প্রৌঢ়ের সঙ্গে তাঁর তফাত একটাই। অরবিন্দ পূজারা সংযম দেখিয়ে পরে আবেগে ভাসলেন। আর পূজা, পূজারার স্ত্রী, প্রথমে আবেগে ভেসে পরে সংযম দেখালেন।

‘নট আউট’ পূজারাকে দেখে গ্যালারিতে উচ্ছ্বাস বাবা অরবিন্দ ও স্ত্রী পূজার। শুক্রবার। ছবি: টুইটার।

পূজারা ডিআরএস নেওয়ার পর যিনি গোটা মাঠের সঙ্গে মোটামুটি প্রার্থনায় বসে গিয়েছিলেন। এবং শেষে লাফিয়ে উঠে হাততালিটাও ছিল দেখবার মতো! পরে কথাবার্তার সময় ওই আবেগ-প্রদর্শন নিয়ে একটু লজ্জাই যেন পেয়ে গেলেন পূজা। বলছিলেন, ‘‘আমি শুধু মাঠের বাকিদের মতো চাইছিলাম জায়ান্ট স্ক্রিনে নট আউট শব্দটা ভেসে উঠুক। ব্যস। তার পর আবেগটা থামাতে পারিনি। তবে ওর সেঞ্চুরি নিয়ে নিশ্চিত ছিলাম বলতে গেলে। নিরানব্বইয়ে যখন দাঁড়িয়ে অতগুলো বল খেলছিল, জানতাম ঠিক করে দেবে। এত দিন ধরে খেলছে।” সঙ্গে জুড়ে দিলেন, “দেখুন, ঘরের মাঠে সেঞ্চুরি করছে, তার একটা আলাদা আনন্দ থাকে। কিন্তু ওর সেঞ্চুরি করাটা আমার কাছে নতুন নয়। এটা করা তো ওর কাজ।”

ব্যতিক্রম শুধু একজন। যিনি স্বভাব-শান্ত হয়েও আবেগ দেখালেন। ঘরের মাঠের টেনশন স্বীকার করে নিলেন। শেষ পর্যন্ত কী ভাবে তা থেকে বেরোলেন, সেটাও অকপট বলে দিলেন।

তিনি, চেতেশ্বর পূজারা স্বয়ং।

সাংবাদিক সম্মেলনে ঢুকেই পূজারা শংসাপত্র যাঁকে দিলেন তাঁর নাম অনিল কুম্বলে। পূজারার স্ট্রাইক রেট উন্নতির রহস্য নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। শুনে পূজারা বললেন, ওটা সম্ভব হয়েছে কুম্বলের জন্য। সম্ভব হয়েছে ভারতীয় কোচের পরামর্শে। “গত সিরিজেই অনিলভাই আমাকে বলে দেন যে, স্ট্রাইক রেট নিয়ে ভাবতে হবে না। কে কী বলছে, শুনতে হবে না। সত্তর-আশিগুলোকে শুধু একশোয় বদলে ফেলতে হবে। রঞ্জি ট্রফি ম্যাচগুলো যে ভাবে আমি খেলি, খেলতে হবে ঠিক সে ভাবে,” বলে চলেন পূজারা। বলতে বলতে আবেগতাড়িতও হয়ে পড়েন। “টেনশন তো হচ্ছিলই। মনে হচ্ছিল, ঘরের মাঠ। আমার বাড়ির লোকজন থাকবে। সমর্থক থাকবে। আমি পারব তো? পরে ভাবলাম, এটা নিয়ে বেশি ভাবলে বরং আমি পারব না। মাথা থেকে এটাকে বার করতে হবে।” আর ডিআরএসের সময়টা? নিরানব্বইয়ে আটকে থাকার মুহূর্তগুলো? “ডিআরএসটা নিই বিজয় ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে। মনে হচ্ছিল, স্টাম্পের উপর দিয়ে বেরিয়ে যাবে। আর নিরানব্বই? আমার টার্গেট তো একশো ছিল না, দু’শো ছিল!”

ভাবা যায়, ঘরের মাঠে প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরি নয়, ডাবল সেঞ্চুরি টার্গেট ছিল পূজারার! তিনি সাংবাদিক সম্মেলনের একদম শেষে আরও একটা কথা বললেন যেটাও সমান চমকপ্রদ।

ভারত যদি শনিবার সত্তর রানের লিড নিয়ে শেষ করতে পারে, তা হলে তাঁরা নাকি টেস্টটা জিততে নামবেন!

ডান উরুতে অস্ত্রোপচারের পর লন্ডনের হাসপাতালে রোহিত শর্মা। শুক্রবার। ছবি: টুইটার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Chetesar Pujara India England
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE