দু’বছর হল মহিলা লিগ বন্ধ। চালু করতে গিয়ে মাঠ-সমস্যায় জেরবার হতে হচ্ছে আইএফএ-কে!
মেয়েদের লিগ করার জন্য এখন জেলায় জেলায় মাঠ খুঁজে বেড়াচ্ছেন আইএফএ-র লোকজন।
কেন এই সমস্যা?
ময়দানের মাঠগুলোতে এই সময় হকি ম্যাচ চলে। এর সঙ্গে সিএবি-র ক্রিকেট তো আছেই। স্বভাবতই মেয়েদের ফুটবল লিগের জন্য ময়দানে মাঠ পাওয়া কঠিন। কিছুটা অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাই বাধ্য হয়ে খেলা ফেলতে হয় বজবজ, বেলঘরিয়া বা নিমতার মতো জেলা মাঠে। সেখানেও আবার নানা সমস্যা। মাঠ পেতে টাকা দিতে হয় তার মালিকদের। কিন্তু আইএফএ-র যা বাজেট তাতে মাঠের পিছনে টাকা খরচ করতে গেলে টুর্নামেন্টই সুষ্ঠু ভাবে চালানো যাবে না হয়তো। আইএফএ সাব কমিটির সদস্য, যিনি এই মুহূর্তে ফেডারেশনের ডি-লাইসেন্স শিক্ষার্থী কোচেদের কোচ, সেই কুন্তলা ঘোষদস্তিদার বলছিলেন, ‘‘আমরা এ বার মেয়েদের লিগ করবই। সবাই মিলে মাঠ খুঁজছি। গত দু’বছর লিগ বন্ধ ছিল। এ বার আর সেটা হতে দেওয়া চলবে না।’’ মাঠ না পেলে মেয়েদের লিগ হবে কী করে? আইএফএ সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, ‘‘মাঠ পেয়ে যাবই। লিগ শুরুর আগে সব ব্যবস্থা ঠিক হয়ে যাবে। সবাই মিলে তো চেষ্টা করছে।’’ লিগ সাব কমিটির অন্য এক সদস্য রত্না নন্দী আবার বললেন, ‘‘মাঠ পেলেই তো হবে না। বাথরুম, ড্রেসিংরুম চাই। নিরাপত্তা চাই মেয়েদের।’’
শোনা যাচ্ছে বেলঘরিয়া আর নিমতার মাঠ পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু ময়দানে না হলে কি আর লিগের আকর্ষণ থাকবে? কুন্তলা ঘোষদস্তিদার বললেন, ‘‘ময়দানে মাঠ দেবে কে? আর মেয়েদের লিগ নিয়ে ক’জনেরই বা আর মাথাব্যথা আছে? যাই হোক আগে তো লিগটা শুরু হোক। তার পর ময়দানে আনার কথা ভাবা যাবে। নেই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল।’’ স্কুল ও কলেজের পরীক্ষার জন্য মেয়েদের লিগ অবশ্য কিছু দিন পিছিয়ে গিয়েছে। সম্ভবত মার্চ থেকে শুরু হবে।
এমনিতে বাংলায় মেয়েদের ফুটবলের হাল খুবই খারাপ। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান টিম তুলে নেওয়ার পর আকর্ষণ আরও হারিয়েছে। ফুটবলার পেতেও সমস্যা। বিভিন্ন কোচ এবং কর্তারা ফুটবলারদের খেপ খেলাতে নিয়ে যান জেলায় জেলায়। খেপের টাকার উপরই বেঁচে আছেন মেয়ে ফুটবলাররা। টিমগুলোও।
মেয়েদের আরও সমস্যা আছে। ফুটবলাররা যে ট্রায়ালে আসেন, তাঁদের জন্য কোনও থাকার ব্যবস্থা নেই। ট্রায়ালে এলে নিজেদের পয়সা খরচ হবে ভেবে, অনেক প্রতিভাবান ফুটবলারই বিভিন্ন জেলা থেকে আর কলকাতায় আসতে চান না। যার জেরে বাংলায় ভাল ফুটবলার উঠছে না বলে দাবি প্রাক্তন মহিলা ফুটবলারদের। সমস্যা সমাধানের জন্য এ বার তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের দ্বারস্থ হতে চলেছেন। কুন্তলা বলছিলেন, ‘‘ট্রায়ালে বা কোনও টুর্নামেন্টের জন্য বাইরে থেকে ফুটবলার এখানে আসতে চায় না। কারণ, তাদের থাকার ব্যবস্থা আমরা করতে পারি না। এখন যদি মেয়ে ফুটবলারদের আবাসিক শিবিরের জন্য থাকার ব্যবস্থা করে দেন মুখ্যমন্ত্রী, তা হলে অনেক ভাল ফুটবলার আমরা পেতে পারি।’’ এর সঙ্গেই তিনি যোগ করেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী এবং ক্রীড়ামন্ত্রীকে আমরা চিঠি দিচ্ছি। প্রয়োজনে ওঁদের সঙ্গে দেখাও করব। মুখ্যমন্ত্রী তো মহিলাদের জন্য অনেক কাজই করছেন। আশা করি, আমাদের পাশেও দাঁড়াবেন।’’
কুন্তলাদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে উৎপলবাবু বলেছেন, ‘‘ওঁরা যদি আইএফএ-র কাছে এই বিষয়টি নিয়ে আসেন, আমরা সব রকম সাহায্য করব। প্রয়োজনে ফেডারেশনের সাহায্যও চাইব।’’
এখন দেখার, শেষ পর্যন্ত মেয়েদের ভাগ্যে আদৌ শিকে ছেঁড়ে কি না!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy