Advertisement
E-Paper

এই হার ভুলে বাহরিন ম্যাচের জন্য তৈরি হও

গ্যালারিতে ভারতের কয়েক হাজার সমর্থক! তেরঙ্গা পতাকা নিয়ে জাতীয় দলের নীল জার্সি পরে কেউ গান গাইছে। কেউ কেউ জয়ধ্বনি দিচ্ছে আবার সুনীল ছেত্রী, গুরুপ্রীত সিংহদের।

শ্যাম থাপা

শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৫৬
মরিয়া: আমিরশাহির রক্ষণ ভেঙে গোলের চেষ্টায় সুনীল।—ছবি এএফপি।

মরিয়া: আমিরশাহির রক্ষণ ভেঙে গোলের চেষ্টায় সুনীল।—ছবি এএফপি।

ভারত বনাম সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ম্যাচ শুরুর ঘণ্টাখানেক আগেই জ়ায়েদ স্পোর্টস স্টেডিয়ামে পৌঁছে গিয়েছিলাম। আমিরশাহি ঘরের মাঠে খেলছে। তাই ওদের সমর্থকই বেশি থাকার কথা। কিন্তু স্টেডিয়ামে ঢোকার পরে ধারণাটা বদলে গেল।

গ্যালারিতে ভারতের কয়েক হাজার সমর্থক! তেরঙ্গা পতাকা নিয়ে জাতীয় দলের নীল জার্সি পরে কেউ গান গাইছে। কেউ কেউ জয়ধ্বনি দিচ্ছে আবার সুনীল ছেত্রী, গুরুপ্রীত সিংহদের। উৎসবের আবহ। মনে হচ্ছিল, আবু ধাবির কোনও স্টেডিয়াম নয়, যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগান ডার্বি দেখতে এসেছি। কিন্তু রক্ষণের ভুলে জয়ের স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল।

অথচ আজ হওয়ার কথা ছিল ঠিক উল্টোটাই। ৪-২ জেতা উচিত ছিল ভারতের। কিন্তু দুর্দান্ত খেলেও ০-২ হেরে মাঠ ছাড়ল সুনীলেরা।

আমিরশাহি শুরু থেকেই আক্রমণের ঝড় তুলেছিল। তা সামলে দারুণ ভাবে ঘুরেও দাঁড়িয়েছিল সুনীলেরা। ভারতের কোচ স্টিভন কনস্ট্যান্টাইনের রণনীতি ছিল, রক্ষণ মজবুত করে প্রতি-আক্রমণে গোল দেওয়ার চেষ্টা করা। একদম ঠিক পরিকল্পনা। কারণ, ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে আমিরশাহি আমাদের চেয়ে অাঠারো ধাপ এগিয়ে। ফলে এই ধরনের শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলার চেষ্টা করলে বিপদ বাড়বে। প্রতি-আক্রমণ নির্ভর খেলতে খেলতেই আট মিনিটে গোলের সুযোগ পেয়েছিল ভারত। কিন্তু সন্দেশ ঝিঙ্গানের হেড লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। চার মিনিট পরে আশিক কুরিয়ানের শট দুর্দান্ত ভাবে বাঁচায় আমিরশাহির গোলরক্ষক খালিদ বিলাল। এক মিনিট পরেই ফের সন্দেশের হেড লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ২৩ মিনিটে ছয় গজ পেনাল্টি বক্সের মধ্যে থেকে নেওয়া সুনীলের হেড ফের অবিশ্বাস্য দক্ষতায় বাঁচায় আমিরশাহির গোলরক্ষক। ভারত যে-ভাবে খেলছিল, মনে হচ্ছিল, গোল পাওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। আজই আমিরশাহিকে হারিয়ে এএফসি এশিয়ান কাপের শেষ ষোলোয় খেলা নিশ্চিত করে ফেলবে ভারত। ফুটবল চরম অনিশ্চয়তার খেলা। আমরা ভাবি এক, হয় তার ঠিক উল্টো। ৪১ মিনিটে খাফলান মুবারকের গোলে এগিয়ে যায় আমিরশাহি। এই গোলের জন্য দায়ী আমাদের দুই ডিফেন্ডার সন্দেশ ও আনাস এথাদোডিকা!

ভারতের দুই ডিফেন্ডারের মাঝখান থেকে বল নিয়ে বেরিয়ে খাফলানকে ব্যাকপাস করে আলি আমেদ মাবখোত। ঠান্ডা মাথায় লব করে বল জালে জড়িয়ে দেয় খাফলান। কোচেরা সব সময় ডিফেন্ডারদের এক লাইনে দাঁড়াতে বারণ করেন। যাতে এক জন ব্যর্থ হলে অন্য জন বিপক্ষের ফুটবলারের পা থেকে বল কাড়তে পারে। আনাস ও সন্দেশের মতো অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার আজ সেই ভুলটাই করল। এই ধরনের ম্যাচে একটা ভুলই মারাত্মক হয়ে যায়।

প্রথমার্ধে ০-১ পিছিয়েও আশা করেছিলাম, সুনীলেরা সমতা ফেরাবে। এই ম্যাচ আমরা হারব না। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই হোলিচরণ নার্জারির পরিবর্তে জেজে লালপেখলুয়াকে নামিয়ে দারুণ চাল দেন স্টিভন। ভারতের আক্রমণের ঝাঁঝও বেড়ে যায়। আমিরশাহির কোচ আলবার্তো জ়াক্কেরনি ইতালীয়। এসি মিলানকে সেরি আ-তে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন। তিনি দ্বিতীয়ার্ধে রণকৌশল সম্পূর্ণ বদলে ফেললেন। প্রচণ্ড গতিতে আক্রমণে ওঠা ভারতের ছন্দ নষ্ট করতে আমিরশাহি নিজেদের মধ্যে বেশি পাস খেলছিল। যদিও সেই রণকৌশল সফল হয়নি। পরিবর্ত হিসেবে মাঠে নেমেই জেজে বিপক্ষের গোল লক্ষ্য করে যে-শট নিয়েছিলেন, অল্পের জন্য তা বাইরে যায়। সুনীলের প্লেসিং পোস্টের গা ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। দুর্ভাগ্যের এখানেই শেষ নয়। উদান্ত সিংহের শট ক্রসবারে ধাক্কা খায়। সন্দেশের হেড ক্রসবারে লাগে। গতির বিরুদ্ধেই ৮৮ মিনিটে গোল করে আমিরশাহিকে ২-০ এগিয়ে দেয় আমার চোখে ম্যাচের সেরা আলি।

তবে হারলেও সুনীলদের বলব, ভেঙে পোড়ো না। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে বাহরিনের বিরুদ্ধে ড্র করলেই শেষ ষোলোয় পৌঁছে যাবে ভারত। তবে হারলে চলবে না। তাই আমিরশাহির বিরুদ্ধে ম্যাচ দ্রুত ভুলে বাহরিন ম্যাচের জন্য তৈরি হও। তোমরা সফল হবেই।

ভারত: গুরপ্রীত সিংহ সাঁধু, প্রীতম কোটাল, সন্দেশ ঝিঙ্গান, আনাস এদাথোডিকা, শুভাশিস বসু, আশিক কুরিয়ান, প্রণয় হালদার, হোলিচরণ নার্জারি (জেজে লালপেখলুয়া), উদান্ত সিংহ (জ্যাকিচন্দ সিংহ), অনিরুদ্ধ থাপা (রওলিন বর্জেস) ও সুনীল ছেত্রী।

Football India UAE United Arab Emirates AFC Cup
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy