তীক্ষ্ণ ফলার মতো ভিতরে তো ঢুকে এলই, সুপারস্পোর্ট পার্কের খারাপ হতে থাকা পিচে নিচুও হয়ে এসে আছড়ে পড়ল প্যাডে। ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা কোহালি তৎক্ষণাৎ বুঝে গেলেন, তাঁর বিদায় আসন্ন। উঠে দাঁড়িয়েই বিষণ্ণ মুখে তাকিয়ে রইলেন। রিভিউ পর্যন্ত নিতে চাইছিলেন না। চেতেশ্বর পূজারার পরামর্শে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরে রিভিউ নিলেন। কিন্তু টিভি আম্পায়ার তাঁর রায় জানানোর আগেই মাঠের জায়ান্ট স্ক্রিনে রিপ্লে দেখে প্যাভিলিয়নের দিকে হাঁটা লাগাতে শুরু করেন কোহালি।
কিছুটা গিয়ে হঠাৎই আবার থমকে দাঁড়িয়ে ঘুরে তাকালেন। দক্ষিণ আফ্রিকান সমর্থকেরা চেঁচিয়ে চলেছেন। ভারতীয় ভক্তরা চুপ। মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটারেরা গোল হয়ে দাঁড়িয়ে উৎসব শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু কোহালির ঘুরে দাঁড়ানো দেখে সাময়িক আশার আলো তৈরি হয় যে, তা হলে কি আম্পায়াররা তাঁকে অপেক্ষা করতে বললেন? কোনও ভোজবাজিও কাজ করল না। আম্পায়ার আঙুল তুলে দিলেন। কোহালি বেরিয়ে গেলেন। তার সঙ্গে বেরিয়ে গেল হয়তো জয়ের আশা এবং সিরিজ।
সৌজন্য উড়ে গিয়ে সেঞ্চুরিয়নের পিচে এখন রীতিমতো যুদ্ধের মেজাজ। যত ম্যাচ হাড্ডাহাড্ডি হতে থাকল, ততই বাড়তে থাকল উত্তেজনা। দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংসের সময় কাগিসো রাবাডা যখন ব্যাট করছিলেন, কোহালি এসে আম্পায়ারের কাছে অভিযোগ জানান, রাবাডা স্পাইক দিয়ে পিচের ক্ষতি করছেন। আম্পায়ার দু’বার কথাও বললেন রাবাডার সঙ্গে।
গত কাল বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি আসায় খেলা বন্ধ হওয়া নিয়েও খুব প্রসন্ন হননি কোহালি। বার বার আম্পায়ারের কাছে জানতে চাইছিলেন, খেলা বন্ধ করা হচ্ছে কেন? এক বার রাগের মাথায় বল আছড়ে মারেন। সেই আচরণের জন্য ম্যাচ ফি-র পঁচিশ শতাংশ জরিমানাও হয়েছে তাঁর। সব মিলিয়ে বেশ উত্তপ্ত পরিবেশ। এ দিন কোহালি আউট হওয়ার পরে পার্থিব পটেল-কে পাঁজরে মারলেন এনগিডি। তাকালেনও না তাঁর দিকে, সোজা ফিরে গেলেন বোলিং রান-আপে।
অসমান বাউন্স ব্যাটসম্যানের কাজ আরও কঠিন করে দিচ্ছে। কোনও বল লাফাচ্ছে, কোনওটা নিচু হচ্ছে। এর মধ্যে অ্যাডভেঞ্চারাস হতে গিয়ে উইকেট উপহার দিয়ে গেলেন কে এল রাহুল। সেঞ্চুরিয়নে সুযোগ পেয়েও দুই ইনিংসেই দায়সারা শট খেলে আউট হলেন। এ রকম পিচে রান তাড়া করতে গেলে শুরুটাই সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মুরলী বিজয়ের বলটা তা-ও নীচু হয়ে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে স্টাম্পে এসে লাগল বলে তিনি কিছুটা সহানুভূতি পাবেন। রাহুল পাবেন না।
এক দিন বাকি থাকতেই মনে হচ্ছে ভারতের জন্য যাবতীয় আশা শেষ। খটখটে রোদ্দুরের মধ্যেও কালো মেঘ ঘনিয়ে এসেছে। ক্রিকেট মহান অনিশ্চয়তার খেলা। পূজারা, পার্থিব, রোহিত-রা এর পরেও জিতিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু সে রকম হলে অঘটনই ধরা হবে। অলৌকিক বলা হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, অলৌকিক ঘটানোর মতোও কোনও বলশালী কি আর বেঁচে আছে বাকি ব্যাটিং লাইন-আপে? অলৌকিক ঘটতে পারে কেউ দুঃসাহসিক একটা ইনিংস খেললে। যে ইনিংস এলেও আসতে পারে হার্দিক পাণ্ড্যের
ব্যাট থেকে।
দক্ষিণ আফ্রিকার বাঁ হাতি ওপেনার ডিন এলগার বলে গেলেন, ‘‘কাল কোহালিকে আর বল করতে হবে না ভেবেই আনন্দ হচ্ছে। সেরা প্রতিদ্বন্দ্বীকে আমরা তুলে নিয়েছি।’’
একটা বল। লুঙ্গি এনগিডি-র জীবনটাই হয়তো পাল্টে দিয়ে গেল!