নজরে: গোলের নীচে ভারতের ভরসা ধীরজ। ফাইল চিত্র
সচিন তেন্ডুলকর তার সাহস আর পারফরম্যান্স দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে টুইট করেছেন।
কিছুটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই পেয়েছে ব্যাডমিন্টন তারকা পি ভি সিন্ধুর এসএমএস।
‘‘সচিন স্যার তো কিংবদন্তি। ওঁর সঙ্গে দেখা হয়নি কখনও। কিন্তু সিন্ধু দিদির সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল যুব বিশ্বকাপ ড্র-এর সময়। অনেকক্ষণ কথা বলেছিলাম। জানিয়েছিলাম স্কুলে আমি ফুটবলের চেয়ে বেশি ব্যাডমিন্টন খেলতাম। ওই খেলাটা আমার খুব প্রিয়। দিদি মেসেজ করেছে এটা আমার কাছে বড় পাওনা। আমি পাল্টা কিছু পাঠাইনি। কারণ ম্যাচটা তো আমরা জিততে পারিনি। ঘানার বিরুদ্ধে জিতলে ফোন করব দিদিকে।’’ হোটেলের লবিতে দাঁড়িয়ে কথা বলতে বলতেই কেমন যেন আনমনা লাগে ধীরজ সিংহ মাইরাংথেমকে। হেরেও জাতীয় যুব দলের সবথেকে বেশি প্রশংসা পাওয়া ছেলেকে সচিন-সিন্ধু তাই ছুঁয়েও যেন ছুঁতে পারেন না। বরং পুরো টিমের হতাশা আর আফসোসের মেজাজ ধরা পড়ে যায় লুইস নর্টন দে মাতোসের টিমের গোলকিপারের মুখে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দু’টো নিশ্চিত গোল বাঁচানো। ধীরজ কলম্বিয়ার বিরুদ্ধেও তিন বার রুখে দিয়েছে দলের নিশ্চিত পতন। অসামান্য দক্ষতায়। শরীর ছুড়ে দিয়ে। মণিপুরের ছেলে কিন্তু সেরা সেভ হিসেবে দেখছে কলম্বিয়া ম্যাচের শেষ মিনিটের গোল বাঁচানোকে। ‘‘ওটা প্রায় গোলে ঢুকে গিয়েছিল। শরীরটা অনেকটা ছুড়ে দিতে হয়েছিল। ভাবিনি ওটা আটকাতে পারব।’’
আরও পড়ুন: কর্নারের ঠিক আগেই প্ল্যান বদলেছিলাম: জিকসন
কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে সোমবার বল বাঁচাতে গিয়ে বাঁ হাতে চোট পেয়েছিল অনূর্ধ্ব ১৭-র ভারতীয় বিশ্বকাপ দলের শেষ প্রহরী। দফায় দফায় তার শুশ্রূষা চলছিলও মঙ্গলবারও। তার মধ্যেই হোটেলের লবিতে সকালে এসেছিল সে, মিনিট দশেকের জন্য। বাবা রোমিত সিংহ-র সঙ্গে কথা বলতে। বাবার সঙ্গে এসেছিলেন পরিবারের কয়েকজন, যাঁরা ‘গর্বের মশাল’-কে দেখতে সোমবার হাজির ছিলেন স্টেডিয়ামেও। কিন্তু কথা বলবে কী, যেখানে যাচ্ছে তার সঙ্গে সেলফি তোলার জন্য দাঁড়িয়ে পড়ছেন মন্ত্রী থেকে হোটেলকর্মী— সবাই। এবং সবথেকে মজার হল, যাঁর সঙ্গেই ছবি তুলতে যাচ্ছে ধীরজ, সবাইকে টপকে যাচ্ছিল তার মাথা।
বয়স সতেরোর কাছাকাছি। মুখটা একেবারে নিস্পাপ। কিন্তু কথা বলার সময় জেদটা ফুটে বেরোয়। ‘‘জ্যাকসন যখন গোলটা করল তখন কয়েক মুহূর্তের জন্য যেন চলে গিয়েছিলাম অন্য জগতে। সেটা আমাদের সবথেকে বড় ভুল। ওই এক মিনিট কোনওদিন ভুলব না। গোলের ইতিহাসটা হল, কিন্তু জেতাটা হল না। এই আফসোসটা থাকবে চিরদিন। সে জন্যই ঘানার বিরুদ্ধে ম্যাচটা জিততে হবে,’’ বলে দেন ধীরজ। কোচ মাতোসের মতো এখন ভারতীয় ফুটবলের নতুন যুব-তারকাও তাকিয়ে আছে বৃহস্পতিবারের ঘানা ম্যাচের দিকে।
দু’বছর আগে লা লিগার একটি ক্লাবের স্কাউটরা তাকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন মাদ্রিদে। ছোট ছেলে বলে পরিবার অনমুতি দেয়নি। এখানে আসা বুন্দেশলিগার একটি ক্লাবের স্কাউটরা ইতিমধ্যেই তাদের জুনিয়র টিমে চাইছে ধীরজকে। কিন্তু তা নিয়ে ভাবতে নারাজ সে। বলল, ‘‘ঘানা ম্যাচ ছাড়া আর কিছু নিয়ে ভাবছি না।’’ তবে মনের মধ্যে যে বিদেশি ক্লাবে খেলার ইচ্ছে রয়েছে, সেটা লুকিয়ে রাখতে চায়নি ধীরজ। সেটা বেরিয়ে পড়ে গুরপ্রীত সিংহ সাঁধুর কথা উঠতেই। সুব্রত পাল নয়, সিনিয়র টিমের এক নম্বর কিপার গুরপ্রীত সাঁধুর অন্ধ ভক্ত ধীরজ। বলছিল, ‘‘বিশ্বকাপ শুরুর আগে গুরপ্রীতভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল। আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিল। ও তো নরওয়েতে খেলছে।’’ কিন্তু বিদেশের কোনও ক্লাব ধীরজকে চাইলেও তাকে ফেডারেশন ছাড়বে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ আই লিগে খেলার জন্য ধীরজদের সঙ্গে দু’বছরের চুক্তি করছে এআইএফএফ। ধীরজের এই আগুনে পারফরম্যান্সের জন্য যাঁকে কৃতিত্ব দিচ্ছেন কোচ মাতোস, তাঁর নাম পাওলো গ্রিলো। কিপার কোচ। ধীরজদের উন্নতির কথা ভেবে এক মাস আগে তাঁকে নিয়েছিলেন মাতোস। সেই পর্তুগিজ পাওলো কিন্তু বলে দিলেন, ‘‘ধীরজের মানসিকতা, রি-অ্যাকশন আর ফিটনেস দুর্দান্ত। ঠিকঠাক পরিচর্যা পেলে ইউরোপের ক্লাবে সুযোগ পেয়ে যেতে পারে।’’ ইউরোপের বেশ কিছু ভাল গোলকিপার তুলে আনা পাওলো চলে যাচ্ছেন বিশ্বকাপের পরেই। ধীরজরা কোনও পথে এ বার বেড়ে ওঠে, সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy