Advertisement
E-Paper

সীমিত ওভারে ঋষভই, টেস্টে ঋদ্ধি, অপেক্ষায় থাকছে কুল-চা

দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজে তেমন কিছুই করতে পারেননি ঋষভ। ফের উল্টোপাল্টা শট মারার প্রবণতা দেখা গিয়েছে। তার আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে মোক্ষম মুহূর্তে উইকেট ছুড়ে দিয়ে এসে টিমকে ডুবিয়েছেন।

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:২৬
নেতায়-নেতায়: টি-টোয়েন্টি সিরিজ ১-১। রবিবার পুরস্কার বিতরণীতে কোহালি এবং কুইন্টন ডি’কক। ফাইল চিত্র

নেতায়-নেতায়: টি-টোয়েন্টি সিরিজ ১-১। রবিবার পুরস্কার বিতরণীতে কোহালি এবং কুইন্টন ডি’কক। ফাইল চিত্র

ঋষভ পন্থের ব্যাটিং ফর্ম নিয়ে দেশ জুড়ে ঝড় উঠে পড়লেও এখনই তিনি সমর্থনহীন হয়ে পড়ছেন না। বিরাট কোহালিদের দল পরিচালন সমিতি চায়, তরুণ ঋষভ শট নির্বাচন নিয়ে যত্নবান হয়ে উঠুন। এ নিয়ে হেড কোচ রবি শাস্ত্রী এবং অধিনায়ক কোহালি তাঁর সঙ্গে একান্তে কথাও বলেছেন। তার মানে এই নয় যে, রাতারাতি ঋষভের প্রতিভায় আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন তাঁরা।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজে তেমন কিছুই করতে পারেননি ঋষভ। ফের উল্টোপাল্টা শট মারার প্রবণতা দেখা গিয়েছে। তার আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে মোক্ষম মুহূর্তে উইকেট ছুড়ে দিয়ে এসে টিমকে ডুবিয়েছেন। এর পরেও বলা যাবে না, তাঁকে নিয়ে ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছেন কোহালিরা। বরং সব ঠিকঠাক চললে, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে এখন ঋষভকেই খেলিয়ে যাওযা হবে। দু’টো ব্যাপার নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটের অন্দরমহলে এখনও কারও মনে কোনও সন্দেহ নেই। এক) ধোনির যোগ্য উত্তরসূরি হওয়ার মতো ক্রিকেটীয় দক্ষতা রয়েছে ঋষভের এবং দুই) তরুণ প্রজন্মের যত উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান রয়েছে তার মধ্যে প্রতিভায় তিনিই সেরা।

রবিবার কোহালির আইপিএল ঘরের মাঠ বেঙ্গালুরুতে কুইন্টন ডি’ককের তরুণ দলের কাছে হারার পরে খোঁজা শুরু হয়ে গিয়েছে, কে হতে পারেন ঋষভের বদলি। দু’টো নাম উঠে আসছে। আইপিএলে রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে নজর কাড়া সঞ্জু স্যামসন এবং মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের ঈশান কিসান। দ্বিতীয় জন আবার ধোনিরই ঝাড়খণ্ডের ছেলে। কিন্তু তুল্যমূল্য বিচারে কেউ এখনও ঋষভের ধারেকাছেও নেই। গরিষ্ঠ অংশের মত, সঞ্জু স্যামসনের উইকেটকিপিং ঋষভের চেয়েও কাঁচা। আর ধোনির রাজ্যের ঈশান এখনও নিজেকে ঋষভের মতো ‘ম্যাচউইনার’ হিসেবে প্রমাণ করতে পারেননি।

আগামী দু’বছরে দু’টি কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপ রয়েছে। কোহালিদের রণনীতি হচ্ছে, আইপিএল মঞ্চ থেকে উঠে আসা নতুন নতুন সব তরুণ প্রতিভাদের দেখে নেওয়া। কোহালি নিজেই রবিবার ম্যাচের শেষে বলে গিয়েছেন, এই পরীক্ষা নীতি চলবে। তাতে যদি ফল প্রত্যাশিত না হয়, তাতেও তাঁরা পিছু হটবেন না। অনেকে মজা করে বলতে শুরু করেছেন, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ বা ওয়ান ডে-তে পরীক্ষা করার জায়গা থাকে না। দ্বিপাক্ষিক টি-টোয়েন্টিকেই তাই ল্যাবরেটরি বানাও। নতুন প্রতিভাদের তৈরি করো এখানে।

কিন্তু পরীক্ষা নীতির মধ্যেও সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ঋষভকেই যে খেলিয়ে যাওয়া হবে, তা নিয়ে সংশয় নেই। ধোনি তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে যে রকমই সিদ্ধান্ত নিন, নাটকীয় পট পরিবর্তন না ঘটলে আগামী বছর অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ঋষভকেই উইকেটকিপার ধরে এগোচ্ছে ভারতীয় দল। যদিও প্রশ্ন উঠছে, চার নম্বরই ঋষভের উপযুক্ত জায়গা কি না? তাঁকে ধোনির মতো পাঁচেই খেলানোর পক্ষপাতী অনেকে। এঁদের বক্তব্য, চারে শ্রেয়স আইয়ার, পাঁচে ঋষভ, ছয়ে হার্দিক পাণ্ড্য— এটাই বিস্ফোরক ব্যাটিং লাইন-আপ!

ঋষভকে রিজার্ভ বেঞ্চে ঠেলে দিতে পারেন একমাত্র ঋদ্ধিমান সাহা। সেটাও সীমিত ওভারে নয়, টেস্ট ক্রিকেটে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে আসন্ন টেস্ট সিরিজে ঘূর্ণি পিচে ঋদ্ধিই কিপার হিসেবে কোহালিদের প্রথম পছন্দ। কারণ, টেস্ট সিরিজে ঘরের মাঠে স্পিন-বন্ধু উইকেটে অশ্বিন আর জাডেজাকে ‘কিপ’ করতে হবে। সেখানে ভাল ব্যাটসম্যানের চেয়েও বেশি করে লাগবে ভাল ‘কিপার’।

কিন্তু দ্বিপাক্ষিক টি-টোয়েন্টিতে নতুনদের দেখে নেওয়ার পরীক্ষা নীতি চলবে। এই মন্ত্র মাথায় রেখেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে কুল-চা জুটিকে বাইরে রাখা হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল, আরও দু’তিন জনকে দেখে নেওয়া। যেমন লেগস্পিনার রাহুল চাহার, অফস্পিনার ওয়াশিংটন সুন্দর এবং বাঁ হাতি স্পিনার-অলরাউন্ডার ক্রুণাল পাণ্ড্য। আবার ভয় রয়েছে যে, যাঁদের দেখা হচ্ছে তাঁরা যথেষ্ট যোগ্য তো?

সীমিত ওভারে সফল কুলদীপ যাদব ও যুজবেন্দ্র চহালকে বসিয়ে তিন জন নতুন স্পিনার এই সিরিজে খেলানো হয়েছে। যা ইঙ্গিত, এঁদের মধ্যে রাহুল চাহারকে আরও দেখা হবে। কিন্তু ক্রুণাল পাণ্ড্যর বাঁ হাতি স্পিন দেখে কারও মনে হচ্ছে না, ব্যাটসম্যানদের সমস্যায় ফেলার মতো ‘স্কিল’ তাঁর আছে বলে। রবীন্দ্র জাডেজার মতো বাঁ হাতি স্পিন-অলরাউন্ডার থাকার পরে আর ক্রুণালের দরকার আছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে। ওয়াশিংটন সুন্দর সম্পর্কে বলা হচ্ছে, তিনি নাকি ‘অসামান্য প্রতিভাবান’। অথচ আজ পর্যন্ত আইপিএলে একটাও ম্যাচ তিনি জিতিয়েছেন বলে শোনা যায়নি। আপাত দৃষ্টিতে কোনও অধিনায়কই টস করতে যাওয়ার আগে বলবে না, আমার চায়নাম্যান কুলদীপ চাই না, ওয়াশিংটন সুন্দর চাই। চহালের চেয়ে চাহারকে কেউ এগিয়ে রাখবেন? তা হলে? কুল-চা জুটি বাদ যাওয়ার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, তাঁরা শুধুই বল করেন। এই একমুখী প্রতিভা দিয়ে আর টি-টোয়েন্টি দলে সুযোগ পাওয়া কঠিন। কুল-চা না পারেন ব্যাট করতে, না করেন ভাল ফিল্ডিং। সেই তুলনায় ওয়াশিংটন সুন্দর বা রাহুল চাহার বেশি কার্যকরী হয়ে উঠতে পারেন।

কুল-চা জুটিকে তাই আপাতত অপেক্ষাতেই থাকতে হবে। যদি বহুমুখী প্রতিভারা ব্যর্থ হন, তা হলে তাঁদের জন্য আবার দরজা খুলতে পারে। পঞ্চাশ ওভারের ওয়ান ডে ক্রিকেটে অবশ্য এখনই জায়গা হারাচ্ছেন না তাঁরা। কুল-চার জন্য আশার আলো হচ্ছে, ইংল্যান্ডে পঞ্চাশ ওভারের বিশ্বকাপের আগে বিজয় শঙ্করকেও ‘থ্রি ডি ক্রিকেটার’ বলা হচ্ছিল। তার পর কোনও ‘থ্রি ডি’ চশমা পরেও শঙ্করের কারিকুরি খুঁজে পাওয়া যায়নি। ওয়াশিংটন সুন্দরেরাও আসলে মরুভূমির মধ্যে জল নাকি মরীচিকা, সময়ই বলে দেবে।

Cricket India Rishabh Pant Wriddhiman Saha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy