জয়ের জুটি। মিক্সড ডাবলস ট্রফি হাতে লিয়েন্ডার-হিঙ্গিস। রবিবার উইম্বলডনে। ছবি: রয়টার্স।
বিয়াল্লিশে একটা লোক উইম্বলডন ফাইনাল জিততে চল্লিশ মিনিট নিল! অল ইংল্যান্ডের ডিনার রুমে গভীর রাতেও বসে বেশ কিছুক্ষণ আগের লিয়েন্ডার-কাণ্ডকে কেমন যেন অদ্ভুতুড়ে লাগছে।
বেকবাগান রো-র অনিয়মিত বাসিন্দার কাছে বয়স সত্যিই একটা নম্বর মাত্র! যেটা ও-ই বলে থাকে।
সেই কবে একশো পঁচিশ বছর পেরিয়ে এসেছে টেনিস ইতিহাসের সবচেয়ে ঐতিহ্যশালী গ্র্যান্ড স্ল্যাম। ভারতীয়দের কাছে যা বরাবর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ বিবেচিত হয়ে আসছে।
আর সেই মহান টেনিস-ভূমিতে এ বার ভারতীয়দের হাতে তিনটে ট্রফি শোভা পাচ্ছে! যা কি না ভারত থেকে উইম্বলডন খেলতে আসা ইস্তক সর্বকালের সেরা সাফল্য।
সানিয়া শনিবার ডাবলস চ্যাম্পিয়ন হওয়ার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে আরও দুই ট্রফি ভারতীয়দের হাতে। টুর্নামেন্টের শেষ দিনে এটাই সম্ভবত ভারতীয় টেনিসের জন্য সব থেকে বড় খবর। সব থেকে বড় চমকও।
লিয়েন্ডার সেন্টার কোর্ট থেকে ওর চার নম্বর মিক্সড ডাবলস খেতাব তুলে নিল। হিঙ্গিসকে নিয়ে ফাইনালে ‘বেটার’ বাছাই পেয়া-বাবোসকে উড়িয়ে দিল ৬-১, ৬-১ সেটে।
তার কিছুক্ষণ আগে পাশের এক নম্বর কোর্টে বালকদের ডাবলস ফাইনালে দিল্লির বছর সতেরোর সুমিত নাগাল ভিয়েতনামের লি-কে নিয়ে লিয়েন্ডারের মতোই ‘বেটার’ বাছাই মার্কিন-জাপানি জুটিকে হারাল ৭-৬, ৬-৪ সেটে।
একটা উইম্বলডন থেকে তিনটে খেতাব কোনও দিন আসেনি আমাদের দেশে!
এর পরেও সর্বদা খুঁত ধরতে ব্যস্ত ভারতীয় টেনিসের গুটিকয়েক সমালোচক হয়তো প্রশ্ন তুলবেন— উইম্বলডন সিঙ্গলসে গত কয়েক দশকে বলার মতো পারফরম্যান্স কোথায় ভারতীয়দের? শেষ চার বছর কেউ কোয়ালিফাইং পর্যন্ত পেরোয়নি।
যেখানে ষাট-সত্তর-আশির দশকেও কোনও রামনাথন কৃষ্ণন পরপর দু’বার সেমিফাইনাল উঠেছে। কোনও বিজয় অমৃতরাজ, কোনও রমেশ কৃষ্ণন শেষ আট খেলেছে। এই সামান্য টেনিস প্লেয়ারও ষাটের দশকে একটা সময় চার বছরের মধ্যে তিন বার প্রি-কোয়ার্টার পর্যন্ত এগিয়েছিল!
সেই সময় উইম্বলডন জমানা কিন্তু সব মিলিয়ে লেভার থেকে এমার্সন, বর্গ থেকে কোনর্স, এডবার্গদের মতো মহাতারকাদেরই ছিল।
কিন্তু আমি কোনও নেতিবাচক চিন্তাকে প্রশ্রয় দিতে রাজি নই।
যদি মেনে নেওয়া যায়, সাম্প্রতিক কালে পেশাদার ট্যুর ডাবলসে টপ সিঙ্গলস প্লেয়াররা প্রায় খেলেই না, তা হলে পাশাপাশি এটাও অনস্বীকার্য—ডাবলস গত পনেরো-কুড়ি বছরে ‘স্পেশ্যালিস্ট জব’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এত বেশি ডাবলস প্লেয়ার সার্কিটে থিকথিক করছে! লিয়েন্ডারই তো কুড়ি বছরে একশো ডাবলস পার্টনার নিয়ে খেলে ফেলেছে!
আটটা ডাবলস গ্র্যান্ড স্ল্যাম আছেই। এ দিন আট নম্বর মিক্সড ডাবলস খেতাবও এল। উইম্বলডনে চার নম্বর। এবং চার জন আলাদা মহিলাকে সঙ্গী করে। ’৯৯ থেকে ২০১৫— লিসা রেমন্ড, মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা, কারা ব্ল্যাক। আজ আর এক মার্টিনা। মার্টিনা হিঙ্গিস! দু’টো পরিসংখ্যানই ডাবলস প্লেয়ার হিসেবে লিয়েন্ডারের বিয়াল্লিশেও অসাধারণ ‘কোর্ট সেন্স’, রিফ্লেক্স-এর পরিষ্কার প্রমাণ।
এ দিনের বড় চমক কিন্তু সুমিত নাগাল। এই টিনএজার ছেলেটি ইদানীং কানাডার অ্যাকাডেমিতে তৈরি হচ্ছে। মহেশ ভূপতির অ্যাকাডেমির আবিষ্কার বলা যায়। সানিয়ার জুনিয়র ডাবলস চ্যাম্পিয়ন হওয়ার বারো বছর পর উইম্বলডনে কোনও জুনিয়র বিভাগে ট্রফি জিতল ভারতীয়রা। কৌতূহল হচ্ছে, বারো বছর পর সুমিত কি সিনিয়র ডাবলস চ্যাম্পিয়ন হবে, ঠিক এ বার সানিয়ার মতো?
তবে আমি চাই সুমিত পরের বছরই উইম্বলডনে জুনিয়র সিঙ্গলস চ্যাম্পিয়ন হোক। ছুঁয়ে ফেলুক ছাব্বিশ বছর পর লিয়েন্ডারের জুনিয়র উইম্বলডন খেতাবকে!
অনেক দিন আমাদের দেশ থেকে সত্যিকারের বলার মতো সিঙ্গলস প্লেয়ার বেরোচ্ছে না। যদিও সুমিত ডাবলস জিতেছে, তবু তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা যেতেই পারে।
আসলে গ্র্যান্ড স্ল্যাম গ্র্যান্ড স্ল্যাম-ই! সেটা যে বিভাগ থেকেই আসুক না কেন! সানিয়া-লিয়েন্ডার-সুমিতকে তাই এই ভারতীয় টেনিস প্রৌঢ়ের অভিনন্দন। সেলাম!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy