কলকাতার সভাতেও স্পষ্ট ছিল দু’টি পথ, দু’টি মত। উপস্থিত ছিলেন বোর্ডের তিন পদাধিকারী— কার্যনির্বাহী প্রেসিডেন্ট সি কে খন্না, সচিব অমিতাভ চৌধুরী এবং কোষাধ্যক্ষ অনিরুদ্ধ চৌধুরী। তিন জনেই কর্তাদের দলের অংশ। আর সিওএ পক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার (সিইও) রাহুল জোহরি। বাইরের রাজ্যের ক্রিকেটারদের যোগদান নিয়ে বৈঠকটিতে ছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও। বাইপাসের ধারের হোটেলে বৈঠকের পরে কেউ মুখ খুলতে না চাইলেও জানা গিয়েছে, সকলের বক্তব্য নথিবদ্ধ হওয়া ছাড়া বিশেষ কিছু এগোয়নি।
এমনিতে কর্তাদের অংশের ডাকা কোনও বৈঠককে অনুমোদন দিচ্ছে না সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত প্রশাসকের দল বা সিওএ। এমনকি, পদাধিকারীদের তাঁরা বারণ করে দিয়েছেন, আগাম অনুমতি না নিয়ে পয়সা খরচ করে এ শহর থেকে সে শহরে উড়ে যাওয়ার দরকার নেই। ভারতীয় দল ইংল্যান্ডে খেলছে। অতীতের মতো বোর্ডের তরফে কোনও কর্তা সেখানে নেই। কারণ, সিওএ জানিয়ে দিয়েছে, ট্যুর বিল পাশ করা হবে না।
বোর্ড কর্তারা পাল্টা গজগজ করছেন, ‘‘আমাদের যেতে বারণ করছে ঠিক আছে। কিন্তু সাবা করিমকে পয়সা খরচ করে কেন পাঠানো হচ্ছে? ও কী নির্বাচক? নাকি ক্রিকেট ডিরেক্টর যে, টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করবে?’’ বাংলার হয়ে অতীতে রঞ্জি খেলে যাওয়া সাবা এখন বোর্ডের জেনারেল ম্যানেজার, ক্রিকেট অপারেশন্স। তাঁকে নিয়ে তুমুল ঝগড়া বেধেছে বোর্ডে। ঋদ্ধিমান সাহার কাঁধের চোট ঘিরেও তাঁর দিকেই আঙুল তুলছেন অনেকে। ইংল্যান্ড সফরে হোটেলের ভাড়া ধরে সাবার এক দিনের খরচ আনুমানিক ৩০,০০০ টাকা বলে খবর!
এর মধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের দিক থেকে চাপ আসছে, নাডার অন্তর্ভুক্ত হোক ক্রিকেট। কর্তারা পাল্টা প্রশ্ন তুলছেন, ক্রিকেট বোর্ড অন্য খেলার জাতীয় ফেডারেশনগুলির মতো সরকারের অধীনস্থ নয়, তাই তাদের জোর করা যাবে কী ভাবে? রিয়ো অলিম্পিক্সের সময় নরসিংহ যাদবের ডোপ কেলেঙ্কারির ঘটনা তুলে কর্তারা প্রশ্ন তুলেছেন নাডার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে। নরসিংহকে নাডা পাশ করে দিয়েছিল কিন্তু তার পরেও রিয়োতে নামতে পারেননি কলঙ্কিত ভারতীয় কুস্তিগির। নাডার রায়কে নস্যাৎ করে দিয়ে ওয়াডা নরসিংহের নির্বাসনকেই বহাল রেখে দিয়েছিল।
ও দিকে আবার আইসিসি ঘোষণা করে বসে আছে, অলিম্পিক্সে টি-টোয়েন্টি অন্তর্ভূক্ত করা হোক, আমরা সবাই খেলব। আইপিএলের দেশ ভারত এই উদ্যোগকে সমর্থন করছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন বোর্ড কর্তা়র কথায়, ‘‘প্রত্যেক দু’বছর অন্তর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ করছে আইসিসি। আবার অলিম্পিক্সেও টি-টোয়েন্টি আনতে চাইছে। সোনার রাজহাঁস ডিম পারছিল, অতি লোভে একেবারে কেটেই ফেলবে এ বার!’’
আইসিসি চাপ দিচ্ছে কারণ, অলিম্পিক্সে কোহালিদের খেলাতে গেলে ওয়াডা এবং নাডার অধীনে আসতেই হবে। ভারতীয় বোর্ডের দু’টি মত, দু’টি পথের একটি— কমিটি অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্স বা সিওএ অংশ প্রায় রাজি। অন্যরা— বোর্ড কর্তাদের দল ঘোরতর বিরোধী।
যা পরিস্থিতি, টি-টোয়েন্টির রুদ্ধশ্বাস পরিণতির মতোই ম্যাচ এগোচ্ছে শেষ ওভারের ‘ফিনিশ’-এর দিকে। এবং সকলের নজর সুপ্রিম কোর্টের দিকে। মনে করা হচ্ছে, আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে লোঢা সংস্কার নিয়ে চূড়ান্ত রায় শুনিয়ে দিতে পারে সর্বোচ্চ আদালত। তার পরে ঠিক হবে দু’টি পথ-দু’টি মতের কোনটা থাকবে, কোনটা যাবে। তার পরে হবে ডোপ নীতি নির্ধারণ। তত দিন কোহালিদের বোর্ডে চলবে শুধুই এ রকম ‘স্ট্র্যাটেজিক টাইম আউট’!