Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Sports News

বাংলার দুর্নীতি সামাল দিতে নিয়মই বদল ভারতীয় টিটির

রাজ্য টেবল টেনিস সংস্থার টাকা নিয়ে বাংলা দলে প্লেয়ার ঢোকানোর নজিরবিহীন কেলেঙ্কারির ঢেউ এ রাজ্য টপকে আছড়ে পড়ল দিল্লিতেও। আনন্দবাজারের খবরের জেরে র‌্যাঙ্কিংকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বেআইনি ভাবে রাজ্য দলে অতিরিক্ত খেলোয়াড় ঢোকানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করল সর্বভারতীয় টিটি ফেডারেশন।

রতন চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৬ ০৪:১৮
Share: Save:

রাজ্য টেবল টেনিস সংস্থার টাকা নিয়ে বাংলা দলে প্লেয়ার ঢোকানোর নজিরবিহীন কেলেঙ্কারির ঢেউ এ রাজ্য টপকে আছড়ে পড়ল দিল্লিতেও।

আনন্দবাজারের খবরের জেরে র‌্যাঙ্কিংকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বেআইনি ভাবে রাজ্য দলে অতিরিক্ত খেলোয়াড় ঢোকানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করল সর্বভারতীয় টিটি ফেডারেশন। আরও পরিষ্কার করে বললে, বাংলা টিটি সংস্থার দুর্নীতিকে কার্যত মেনে নিলেন দিল্লির কর্তারাও।

শুক্রবার সন্ধ্যেয় টিটিএফআই সচিব ধনরাজ চৌধুরী সব রাজ্য টিটি সংস্থাকে দিল্লি থেকে যে মেল পাঠিয়েছেন তাতে লিখেছেন, ‘‘আমরা দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি টেবল টেনিসের বিভিন্ন জাতীয় প্রতিযোগিতায় অতিরিক্ত প্লেয়ার পাঠানোর যে নিয়ম এত দিন চালু ছিল, তা এখন থেকে আর রাখা হচ্ছে না। কোনও বিভাগেই আট জনের বেশি এন্ট্রি এ বার থেকে আর নেওয়া হবে না।’’ যা থেকে স্পষ্ট, নয় থেকে বারো নম্বর খেলোয়াড়, যাঁদের কাছ থেকেই হাজার হাজার টাকা ডোনেশন নিয়ে গত দু’বছর বাংলার জার্সি তুলে দেওয়া হত বলে অভিযোগ, তাঁদের আর পাঠানো যাবে না জাতীয় প্রতিযোগিতায়।

দিল্লির রাজেন্দ্রনগরের টিটিএফআই অফিস থেকে এ দিন যে মেল রাজ্য সংস্থায় এসেছে তাতে আরও কয়েকটা ইঙ্গিতপূর্ণ লাইন আছে। যা নরেন্দ্র মোদীর হঠাৎ-ই পাঁচশো এবং হাজার টাকার নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের মতোই প্রায় অভাবিত! লেখা হয়েছে, ‘‘দেশের সব টিটি সংস্থায় এ বার থেকে সমস্ত টাকার আদানপ্রদান হবে ব্যাঙ্কের মাধ্যমে। কোনও ক্যাশ নেওয়া হবে না।’’ যে সিদ্ধান্ত ইঙ্গিত দিচ্ছে, বাংলা-সহ বিভিন্ন রাজ্য টিটি সংস্থার কর্তাদের দুর্নীতি বন্ধ করতে এটা করা।

ফেডারেশন সচিবের এই নিষেধাজ্ঞার ফলে পয়লা ডিসেম্বর থেকে শিলিগুড়িতে হতে যাওয়া জাতীয় ক্যাডেট ও সাব জুনিয়র টিটিতে রাজ্যগুলোর প্রথম আট ‘র‌্যাঙ্কড’ প্লেয়ারের বাইরে কেউ খেলতে পারবে না। ফলে বাংলার অতিরিক্ত হিসেবে নির্বাচিত অনুষ্কা বসাক, রত্নাবলী পাঠক, শ্রীতমা বিশ্বাস, কোয়েল ভট্টাচার্যদের মতো চার বিভাগের ষোলো জনের আর খেলা হচ্ছে না শিলিগুড়িতে। যাদের থেকে মাথাপিছু পাঁচ হাজার টাকা করে ডোনেশন নিয়ে বাংলা দলে ঢোকাতে চেয়েছিলেন রাজ্য কর্তারা। দুর্নীতির খবরের জেরে তাদের থেকে শেষ পর্যন্ত অবশ্য টাকা নিতে পারেনি বাংলা টিটি সংস্থা। কিন্তু রাজ্য কর্তাদের নির্দেশে অনুষ্কা-কোয়েলরা সর্বভারতীয় ফেডারেশনে চার হাজার টাকা করে এন্ট্রি ফি অবশ্য পাঠিয়ে দিয়েছেন ইতিমধ্যেই। এ দিনের নতুন নিয়মের পর বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এবং তাদের বাবা-মায়েরা সমস্যায়। অনেকেই ফোন করে জানতে চাইছেন, দিল্লিতে পাঠানো এন্ট্রি ফি-র টাকা আদৌ ফেরত পাওয়া যাবে কি না। কে ফেরত দেবে সেই টাকা?

রাজ্য সংস্থার দুর্নীতির জেরে দীর্ঘ দিন ধরে চলা নিয়ম বদলে ফেলে ফেডারেশন ঘুরিয়ে তাঁদের শাস্তিই দিয়েছে এ কথা অবশ্য মানতে নারাজ রাজ্য টিটি সচিব দেবীপ্রসাদ বসু। তিনি বললেন, ‘‘এই নিয়ম তো আমাদের একার জন্য চালু হয়নি। সব রাজ্য সংস্থার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। শুধু আমাদের উপর শাস্তির কথা বলা হচ্ছে কেন?’’ কিন্তু বাংলা ছাড়া তো অন্য কোনও রাজ্য সংস্থার বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে দলে প্লেয়ার ঢোকানোর অভিযোগ ওঠেনি? পাল্টা প্রশ্নে দেবীবাবু বললেন, ‘‘সেটা কী ভাবে বলব? কেন এই নিয়ম চালু করা হল সেটা মহাসচিবই বলতে পারবেন।’’

গত দু’বছর বেআইনি ভাবে বাংলা দলে খেলোয়াড় ঢুকিয়ে লাখ লাখ টাকা ডোনেশন তুলেছিল রাজ্য টিটি সংস্থা। চাপে পড়ে এ বার সেটা হয়নি। ভবিষ্যতেও হবে না সেটা হয়তো বুঝে গিয়েছেন রাজ্য কর্তারা। জেলা টিটি কর্তাদের একাংশের অভিযোগ, এটা বুঝেই রাজ্য এবং সর্বভারতীয় সংস্থারও কিছু কর্তার যোগসাজসে হঠাৎ করে নিয়ম বদল। তবে এই অভিযোগও মানতে চাননি রাজ্য সচিব। দেবীবাবু বললেন, ‘‘আমারও তো ছেলে-মেয়েগুলোর জন্য খারাপ লাগছে। ওরা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু খেলতে পারল না। এখন ওদের এন্ট্রি ফি-র টাকা কী ভাবে ফেরত আনা যায় সেই চেষ্টা করতে হবে।’’

দেবীবাবু পুরো ব্যাপারটা এড়িয়ে যেতে চাইলেও প্রশ্ন ওঠা থামছে না। প্রশ্ন উঠছে, কেন এত দিন সব জেনে ঘুমিয়ে ছিলেন টিটিএফআই-ও? রাজ্য কর্তা, কোচ, খেলোয়াড় ও তাঁদের বাবা-মায়েরা জানতেন প্রথম আট জনের বাইরে বাংলা দলে ঢুকতে গেলে মোটা টাকা ডোনেশন দিতে হয়। এটাই অলিখিত নিয়ম। অথচ সর্বভারতীয় টিটি কর্তারা সেটা জানতেন না, তা কি বিশ্বাসযোগ্য? জেলা কর্তাদের একাংশের অভিযোগ, ডোনেশন দিয়ে টিমে ঢোকার কথা দিল্লির কর্তারা জানতেন। তাঁদের নাকি নানা ভাবে রাজ্য কর্তারা তুষ্ট রাখায় কেউ মুখ খোলেননি এত দিন। এখন সব কিছু প্রকাশ্যে আসায় নড়েচড়ে বসা ছাড়া অন্য উপায় ছিল না টিটিএফআইয়ের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bengal Table Tennis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE