Advertisement
E-Paper

আগে নামা রাসেলকে দেখা গেল আরও বিধ্বংসী রূপে

ম্যাচ শেষে দেখা গেল রাসেল হাসতে হাসতে মাঠ ছাড়ছেন। কিন্তু ম্যাচের আগে এই ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডারের মুখের চেহারার সঙ্গে কালবৈশাখীর আকাশের তফাত পাওয়া যেত না। 

কৌশিক দাশ

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:১৩
বিধ্বংসী ব্যাটিং ও বোলিং-এর জেরে ম্যাচের সেরা হলেন রাসেল। ছবি এএফপি।

বিধ্বংসী ব্যাটিং ও বোলিং-এর জেরে ম্যাচের সেরা হলেন রাসেল। ছবি এএফপি।

ক্যাচটা নিয়েছিলেন ওয়াইড লং অন অঞ্চলে। সেখান থেকে ছুটতে ছুটতে চলে এলেন মিড অফে। ব্যাটসম্যান তখন আউট হয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। সতীর্থদের অভিনন্দনের হাত এড়িয়ে আন্দ্রে রাসেল ছুটে গেলেন হার্দিক পাণ্ড্যের দিকে। পিঠটা চাপড়ে দিয়ে কেকেআরের পরিত্রাতা যেন বলতে চাইলেন, ‘তুমি তো আমাদের ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে হে!’

তা ভয় পাওয়াটা অন্যায় কিছু নয়। কেকেআর একবার ২৩২ রান স্কোরবোর্ডে তুলে দেওয়ার পরে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স একটা সময় হয়ে যায় ১২১-৫। সেখান থেকে হার্দিকের (৩৪ বলে ৯১, ছ’টা চার, ন’টা ছয়) তাণ্ডবে অঙ্কটা দাঁড়িয়ে গিয়েছিল ১৩ বলে ৪৮। কিন্তু ওয়াইড লং অনে নেওয়া রাসেলের ক্যাচটা মুম্বইয়ের লড়াইকে শেষ করে দিল। আর প্লে-অফের লড়াইয়ে বাঁচিয়ে রাখল কেকেআরকে। হারের ডাবল হ্যাটট্রিকের পরে অবশেষে জয়। ১২ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট পেয়ে নাইটরা এখন পাঁচে।

ম্যাচ শেষে দেখা গেল রাসেল হাসতে হাসতে মাঠ ছাড়ছেন। কিন্তু ম্যাচের আগে এই ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডারের মুখের চেহারার সঙ্গে কালবৈশাখীর আকাশের তফাত পাওয়া যেত না।

আরও পড়ুন: হার্দিক হ্যারিকেন সত্ত্বেও যে সব কারণে মুম্বই বধ করল কলকাতা

তখন তাঁকে দেখলে প্রশ্নটা করাই যেত, আন্দ্রে রাসেল কো গুস্‌সা কিঁউ আতা হ্যায়? আন্দ্রে রাসেল রেগে যান কেন?

রাসেল রেগে যান তাঁকে ব্যাটিং অর্ডারে পরে নামালে। রাসেল রেগে যান যথেষ্ট বল খেলার সুযোগ না পেলে। রাসেল রেগে যান বোলারদের গ্যালারিতে ফেলতে না পারলে।

আর শাহরুখ খান? তিনি কেন রেগে যান? শাহরুখ রেগে যান তাঁর দল মুম্বইয়ের কাছে আত্মসমর্পণ করলে।

যে মুম্বই শাহরুখকে বাদশা বানিয়েছে, সেই মুম্বই আইপিএলে বারবার দুঃস্বপ্ন হয়ে দেখা দেয় কিং খানের কাছে। শোনা যায়, আইপিএলের শুরুর দিকে নাইট-মালিক তাঁর দলের ক্রিকেটারদের অনুরোধ করেছিলেন, আর যে ম্যাচ জেতো বা না জেতো, অন্তত মুম্বই ম্যাচটা জিতে এসো।

শাহরুখের নাইটরা দু’বার তাঁকে আইপিএল ট্রফি দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু মুম্বইয়ের কাছে হারের সেই যন্ত্রণা থেকে খুব একটা মুক্তি দিতে পারেননি। রবিবারের আগে আট বারের মুম্বই ম্যাচ মানে তো ছিল স্রেফ যন্ত্রণার একটা কোলাজ। রবিবারের ইডেনে এক রাগী যুবকের তাণ্ডব আর এক রাগী মানুষের মুখের হাসি ফিরিয়ে দিল।

ব্যাটিং অর্ডারে তাঁকে নীচের দিকে নামানো হচ্ছিল বলে এতটাই রেগে গিয়েছিলেন রাসেল, যে শনিবার সাংবাদিকদের সামনেই বিষোদ্গার করেন। বলে দেন, দলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রচুর ভুলভ্রান্তি হচ্ছে। এর আগে এক বার ম্যাচের সময় ড্রেসিংরুমেও ফিরেও ফেটে পড়েছিলেন তিনি। তাঁর প্রশ্ন ছিল, কেন ব্যাটিং অর্ডারে উপরের দিকে পাঠানো হচ্ছে না?

মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে রাসেলকে তিন নম্বরে নামানোটা কতটা তাঁর রাগ ভাঙানোর জন্য আর কতটা কৌশলগত ছিল, সে প্রশ্ন না তুলে একটা কথা বলা যায়। কেকেআরকে আপাতত শাপমুক্ত করল এই একটা সিদ্ধান্ত।

রাসেল শুরুটা অন্য দিনের চেয়ে একটু মন্থর গতিতে করলেন। তার মধ্যে আবার এক রানের মাথায় তাঁর ক্যাচ ফেললেন স্বদেশীয় এভিন লুইস। রাসেলের পঞ্চাশ রান এল ৩০ বলে, যা লিনের হাফসেঞ্চুরির চেয়ে তিন বল বেশি খেলে। কিন্তু ইনিংস যত এগিয়েছে, তত যেন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছেন রাসেল। তাঁকে বেশি বল খেলতে দিলে কী হয়, তা এ বার ভাল করে বুঝতে পারছে কেকেআর। আইপিএলের অন্যতম সেরা বোলিং আক্রমণের সামনে এ বারের সর্বোচ্চ রান করল কেকেআর। রাসেলের ব্যাট থেকে এল ৪০ বলে অপরাজিত ৮০। ছ’টি চার, আটটি ছয়। এ বারের আইপিএলের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ছয় মারার হাফসেঞ্চুরিও করে গেলেন। এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে, মালিঙ্গার করা শেষ ওভারের চতুর্থ এবং পঞ্চম বলে সিঙ্গল নিতে চাননি রাসেল। তা উল্টো দিকে যতই তাঁর অধিনায়ক দীনেশ কার্তিক থাকুন না কেন। শেষ বলটটা গ্যালারিতে ফেলে ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার বুঝিয়ে দেন, নিজের ওপর কতটা আস্থা তাঁর। এর পরে বল হাতে দু’উইকেট, দুটো ক্যাচ। রাসেল যখন ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার নিচ্ছেন, মধ্যরাত পেরিয়ে গিয়েছে। রাসেলও পা দিয়েছেন একত্রিশে। জন্মদিনে এর চেয়ে ভাল উপহার আর কী হতে পারে!

ইডেনের এই বাইশ গজ সম্ভবত এ বারের আইপিএলের সেরা ব্যাটিং উইকেট। গত কাল সন্ধ্যা পর্যন্ত উইকেটে ঘাস ছিল। কিন্তু ম্যাচের শুরুতে দেখা গেল একেবারে ন্যাড়া। পেসাররা নতুন বলও মুভ করাতে পারলেন না। শোনা যাচ্ছে, এ দিন সকালেই বাইশ গজ থেকে ঘাস উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

যে পিচে দেখা গেল দু’দলের ভয়ঙ্কর-সুন্দর ব্যাটিং। রাসেল, হার্দিকরা যদি ভয়ঙ্কর হন, তবে সুন্দর ছিলেন শুভমন গিল। এই তরুণ ভারতীয় ব্যাটসম্যানের রাসেলের মতো শক্তি নেই ঠিকই, কিন্তু আছে ঈশ্বরপ্রদত্ত টাইমিং এবং নিখুঁত ক্রিকেটীয় শটের ভাণ্ডার। কপিবুক শট খেলেও যে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ঝড় তোলা যায়, তা দেখিয়ে দিলেন এই তরুণ নাইট। এখন থেকে শুভমনকে নিয়মিত ওপেনারের ভূমিকায় দেখা না গেলে কিন্তু তদন্ত কমিশন বসানো উচিত।

প্রায় বছর চারেক পরে মুম্বই ম্যাচের শেষে শাহরুখ খান আবার হাসলেন। ঘরের মাঠে শেষ ম্যাচ খেলে তাঁর নাইটদের নিয়ে ইডেন ঘুরলেন, চুমু ছুড়ে দিলেন দর্শকদের দিকে। আর হাত নাড়তে নাড়তে হয়তো বলে গেলেন, ‘স্বপ্নটা কিন্তু এখনও বেঁচে।’

স্কোরকার্ড
কলকাতা নাইট রাইডার্স ২৩২-২ (২০)
মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ১৯৮-৭(২০)

কলকাতা নাইট রাইডার্স

শুভমন ক লুইস বো হার্দিক ৭৬•৪৫
লিন ক লুইস বো চাহার ৫৪•২৯
রাসেল ন. আ. ৮০•৪০
কার্তিক ন. আ. ১৫•৭
অতিরিক্ত ৭
মোট ২৩২-২ (২০)
পতন: ১-৯৬ (লিন, ৯.৩), ২-১৫৮ (শুভমন, ১৫.২) ।
বোলিং: বারিন্দর স্রান ২-০-২৭-০, ক্রুণাল পাণ্ড্য ৩-০-২৭-০, লাসিথ মালিঙ্গা ৪-০-৪৮-০, যশপ্রীত বুমরা ৪-০-৪৪-০, রাহুল চাহার ৪-০-৫৪-১, হার্দিক পাণ্ড্য ৩-০-৩১-১।

মুম্বই ইন্ডিয়ান্স
ডি কক ক রাসেল বো নারাইন ০•৪
রোহিত এলবিডব্লিউ বো গার্নি ১২•৯
লুইস ক কার্তিক বো রাসেল ১৫•১৬
সূর্য ক কার্তিক বো রাসেল ২৬•১৪
পোলার্ড ক রানা বো নারাইন ২০•২১
হার্দিক ক রাসেল বো গার্নি ৯১•৩৪
ক্রুণাল ক ও বো চাওলা ২৪•১৮
স্রান ন. আ. ৩•৩
চাহার ন. আ. ১•১
অতিরিক্ত ৬
মোট ১৯৮-৭ (২০)
পতন: ১-৯ (ডি কক, ১.২), ২-২১ (রোহিত, ৩.৩), ৩-৪১ (লুইস, ৬.১), ৪-৫৮ (সূর্য, ৮.২), ৫-১২১ (পোলার্ড, ১৩.২), ৬-১৮৫ (হার্দিক, ১৭.৬), ৭-১৯৬ (ক্রুণাল, ১৯.৪)।
বোলিং: সন্দীপ ওয়ারিয়র ৪-০-২৯-০, সুনীল নারাইন ৪-০-৪৪-২, হ্যারি গার্নি ৪-০-৩৭-২, আন্দ্রে রাসেল ৪-০-২৫-২, পীযূষ চাওলা ৪-০-৫৭-১।

Cricket KKR Mumbai Indians Andre Russell Hardik Pandya
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy