Advertisement
০১ মে ২০২৪
IPL 2024

নববর্ষে সুপার জায়ান্টসদের বিরুদ্ধে তেতো ইতিহাস পাল্টানোর পরীক্ষা নাইটদের

খুব তেতো ইতিহাস নিয়ে উপস্থিত হচ্ছে রবিবারের দুপুর। প্রতিপক্ষ এমন এক দল যাদের কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ প্রবল এবং নাইটদের বিরুদ্ধে সাফল্যের হার শতকরা একশো শতাংশ। দলটার নাম লখনউ সুপার জায়ান্টস।

পর্যবেক্ষণ: নেটে নারাইনের সঙ্গে গম্ভীর। ব্যাটের শক্তি পরখ রাসেলের।

পর্যবেক্ষণ: নেটে নারাইনের সঙ্গে গম্ভীর। ব্যাটের শক্তি পরখ রাসেলের। ছবি: সুমন বল্লভ। 

সুমিত ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:৩৯
Share: Save:

বাংলা নববর্ষের দিনে নাইটদের জন্য রসগোল্লার হাঁড়ি নিয়ে কেউ অপেক্ষা করছে ভাবলে ভুল ভাববেন। আসলে খুব তেতো ইতিহাস নিয়ে উপস্থিত হচ্ছে রবিবারের দুপুর। প্রতিপক্ষ এমন এক দল যাদের কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ প্রবল এবং নাইটদের বিরুদ্ধে সাফল্যের হার শতকরা একশো শতাংশ।

দলটার নাম লখনউ সুপার জায়ান্টস। আইপিএল পয়েন্টস টেবল দেখাচ্ছে, কেকেআরের নীচে রয়েছে তারা। চার ম্যাচে তিনটে জিতে কেকেআর দু’নম্বরে। পাঁচে তিনটে জিতে তিন নম্বরে এলএসজি। কিন্তু পয়েন্ট টেবল তো আর পুরনো ইতিহাস তুলে ধরে না। মনে করিয়ে দেওয়া যাক, আইপিএলে এখনও পর্যন্ত তিন বার দেখা হয়েছে দু’দলের। তিন বারই হেরেছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। তার মধ্যে দু’টোতে খুবই রুদ্ধশ্বাস সমাপ্তি ঘটেছে। কেকেআর একটা হেরেছে দুই রানে, একটা এক রানে। তাতে আরওই যেন একটা হাড্ডাহাড্ডি দ্বৈরথের হাওয়া তৈরি হয়ে গিয়েছে। গৌতম গম্ভীর গত বছর পর্যন্ত ছিলেন লখনউয়ের সঙ্গে। এ বার কেকেআরের মেন্টর। মজা করে সাংবাদিক সম্মেলনে বলে গেলেন, ‘‘আমি যেমন ওদের জানি, ওরাও আমাকে জানে।’’ লখনউয়ের তরফে পুরনো ইতিহাস তাঁর হাতে সৃষ্টি। রবিবার নাইটদের হয়ে তা পাল্টাতে হবে। গম্ভীর বলে রাখলেন, ‘‘রবিবার নতুন দিন, নতুন লড়াই। অতীত নিয়ে ভেবে লাভ নেই।’’

এলএসজি মালিকের নাম সঞ্জীব গোয়েন্‌কা। তিনি মোহনবাগানেরও মালিক। বাংলা নববর্ষের দিনে বাঙালি আবেগের তাস খেলবেন বলে মনস্থ করে নিয়েছেন সিইএসসি কর্ণধার। দলকে নামাচ্ছেন মোহনবাগান জার্সি পরিয়ে। বেগুনী না সবুজ-মেরুন? বঙ্গ আবেগের বিভাজনের ম্যাচ রবিবারের ইডেনে। প্রশ্ন উঠতে পারে, এলএসজি-তে বাঙালি ক্রিকেটার কোথায় যে সমর্থন পাবে? তা হলে পাল্টা কথা উঠবে, কেকেআরেই বা কোন বাঁড়ুজ্যে, মুখুজ্যেরা ফাটিয়ে খেলছে শুনি?

শোনা গেল, শাহরুখ খান আসবেন। ইডেনের সামনে শনিবার ভিড় করা জনতা দেখা গেল খুবই উৎসুক জেনে নিতে যে, শাহরুখ রবিবার আসছেন কি না। সঙ্গে আর কেউ আসতে পারেন কি না, সেই আগ্রহও প্রবল। আইপিএলের সেই বরাবরের ফর্মুলা। এক টিকিটে ক্রিকেট, বলিউড এক সঙ্গে প্রত্যক্ষ করার লটারি মিলে যাওয়ার সুযোগ। রথ দেখা, কলা বেচা দুই-ই হল। আচ্ছা, নববর্ষের দিন ডিজে কি বাংলা গান বাজাতে পারেন? এমন প্রশ্ন যাঁদের মনে ঘুরছে, তাঁদের জানিয়ে রাখা কেকেআর যখন শনিবার প্র্যাক্টিস করছিল, পাশাপাশি ডিজের মহড়াও চলছিল। রবীন্দ্রসঙ্গীত নয়, তখন বাজছিল শাহরুখ খানের পাঠানের গান।

তার কিছু ক্ষণ আগে দেখা গেল কংক্রিটের স্ল্যাব পেতে শ্রেয়স আয়ারকে শর্ট বলের বিরুদ্ধে ব্যাটিং প্র্যাক্টিস করানো হচ্ছে। ব্যাপারটা বেশ অভিনব। অনেক ব্যাটসম্যানকেই শর্ট বলের বিরুদ্ধে অনুশীলন করতে দেখা যায়। নতুন কিছু নয়। অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আগে সিএবি ইন্ডোরের কংক্রিটে ভিজে টেনিস বলে অনুশীলন করতেন সৌরভ। কিন্তু এ ভাবে সিমেন্টের স্ল্যাব বানিয়ে তা মাঠের মধ্যে এনে তাতে বল বাউন্স করিয়ে ব্যাট করানোর দৃশ্য আগে চোখে পড়েনি। শ্রেয়স যে শরীরের দিকে ধেয়ে আসা বলে কুঁকড়ে থাকেন, তা ক্লাস ফোরের বাচ্চাও জানে। বিশেষ করে বাঁ হাতি পেসারদের বিরুদ্ধে দুর্বল দেখাচ্ছে তাঁকে। মুস্তাফিজ়ুর রহমান আউট করছেন। টি নটরাজন আউট করেছেন। লখনউয়ের আছে বাঁ হাতি আর্শাদ খান। নিশ্চয়ই তাঁকে তৈরি রাখা হবে নাইট অধিনায়কের জন্য। তা-ও রক্ষে, এই মুহূর্তে দেশের দ্রুততম বোলার মায়াঙ্ক যাদব আহত। তাই ইডেনে তাঁকে খেলার ঝক্কি নেই শ্রেয়সদের। এখনও পর্যন্ত চার ম্যাচে শ্রেয়স করেছেন ৯১ রান, গড় ৩০.৩৩। স্ট্রাইক রেট ১৩১.৮৮। কপাল ভাল যে, দল চারটের মধ্যে তিনটে জিতেছে। না হলে হার্দিক পাণ্ড্যের মতো আক্রান্ত হতেন না, কে বলতে পারে!

অথচ বিশ্বকাপে এত সুন্দর ব্যাট করলেন তিনি। এক-এক সময় মনে হচ্ছে, শ্রেয়সের কি পি কে বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোকাল টনিক দরকার? ‘যা গিয়ে বিশ্বকাপের ব্যাটিংটা কর তো। কাউন্টার অ্যাটাক কর ওদের যা’। গম্ভীরকে দেখা গেল শ্রেয়সের সঙ্গে লেগে রয়েছেন। নিশ্চয়ই বুঝিয়ে চলেছেন। কিন্তু গুরু বললেই তো হল না, ছাত্রকেও শুনতে হবে। পাঠান শুধু নাইট প্যাভিলিয়নে থাকলে হবে না। শুধু ডিজে গান বাজিয়ে দিলেই চলবে না। নাইট অধিনায়ককেও মিনমিনে ব্যাটিং ছেড়ে পাঠান হয়ে উঠতে হবে।

নাইটদের অনুশীলনে আর একটা অভিনব জিনিস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রোজই মেন্টর গম্ভীর দলকে মাঠের মাঝখানে ব্যাটিং-বোলিং করাচ্ছেন। কোণের দিকের নেটে যা ব্যাটিং-বোলিং করছ, করো। কিন্তু মাঝের উইকেটে এক বার ঘুরে যেতেই হবে। ওখানে ব্যাটসম্যানদের বলা হয়, ছক্কা হাঁকাও। আর বোলাররা সেই মারমুখী মেজাজ আটকানোর চেষ্টা করেন। টি-টোয়েন্টির ভাষায় একে বলে ‘রেঞ্জ হিটিং’। রাসেল থেকে রিঙ্কু, সবাইকে এই বিশেষ অনুশীলনের মাধ্যমে ম্যাচের জন্য গোলাবারুদ ভরে তৈরি রাখেন গম্ভীর। সাংবাদিকদের সামনে মিচেল স্টার্কের পাশেও প্রবল ভাবে দাঁড়ালেন কেকেআর মেন্টর। বললেন, ‘‘ব্যক্তি নয় দলের স্কোরবোর্ড দেখুন। আমরা চারটের মধ্যে তিনটে জিতেছি। তা হলে কোনও এক জনকে নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে যাব কেন?’’

মেন্টর প্রকাশ্যে স্বীকার করবেন না খুব স্বাভাবিক। কিন্তু স্টার্কের উপরে চাপ বাড়ছে। চারটে ম্যাচ বেরিয়ে গেল, ২৪.৭৫ কোটির বোলার কিছুই করতে পারলেন না। লখনউয়ের ব্যাটিং রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়ার মতো নয়। অধিনায়ক কে এল রাহুল খুব ভাল ছন্দে নেই। স্ট্রাইক রেট সমস্যায় আক্রান্ত তিনিও। কুইন্টন ডি’ককের সেই ঝড় দেখা যাচ্ছে না। মার্কাস স্টোয়নিস দারুণ কিছু করেননি। দেবদত্ত পাড়িকল রান পাচ্ছেন না। ব্যাট হাতে লখনউয়ের নবাব বলতে এখন নিকোলাস পুরান। শেষ ম্যাচে ভাল খেলেছেন আয়ুষ বাদোনি। লখনউয়ে থাকতে যাঁকে তুলে এনেছিলেন গম্ভীর-ই। নেতিয়ে থাকা লখনউ ব্যাটিংকেও যদি রবিবার কাবু না করতে পারেন স্টার্ক, তা হলে কিন্তু ব্লাড প্রেশার আরও বাড়বে। তুলনায় কেকেআর দল হিসেবে এগিয়ে। ওপেনে নারাইন-ফিল সল্ট জুটি সফল। রাসেল মাস্‌ল কাজ করছে। ব্যাটিংয়ে অঙ্গকৃষ রঘুবংশী, রমনদীপ সিংহ বা বোলিংয়ে হর্ষিত রানার মতো তরুণ তুর্কিরা দৌড়চ্ছে।

আবার মনে হচ্ছে, ইডেনের পিচের যা চরিত্র, দুমড়ে থাকা লখনউ ব্যাটিংকে না চাঙ্গা করে দেয়। প্রথম ম্যাচে তো একেবারে ব্যাটসম্যানদের স্বর্গ মনে হচ্ছিল। পর-পর পাঁচটা ম্যাচ এখন ইডেনে খেলার সুযোগ পাচ্ছে নাইটরা। ঘরের মাঠের সুবিধা নিয়ে তিন-চারটে ম্যাচ জিতে ফেলতে পারলে প্লে-অফের দিকে এক পা বাড়িয়ে রাখা যাবে। কিন্তু আদৌ কি কেকেআর ঘরের মাঠের সুবিধা পাবে? ধোনি যে ভাবে চাইলেই চেন্নাইয়ে ঘুর্ণি পেয়ে যান, কেকেআর স্পিন-নির্ভর বোলিং আক্রমণ নিয়েও যে ইডেনে কখনও তা পায় না, তা বোঝার জন্য ফেলু মিত্তির হওয়ার দরকার নেই। সিএবি ও কেকেআরের সম্পর্ক যে রোম্যান্টিক হিট্‌স উপহার দেওয়া শাহরুখ খান-জুহি চাওলার মিষ্টিমধুর জুটির মতো নয়, সেটাও কারও অজানা থাকার কথা নয়। বাংলা নববর্ষের দিনে কি সেই ধারা পাল্টাতে পারে? নাকি ইডেনের বাইশ গজ পুরনো রীতি রেওয়াজ মেনেই চলবে? রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজবে না ঝুমে জো পাঠান, তার চেয়েও এটা
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE