Advertisement
১১ মে ২০২৪

ইউরোর শেষ আটে এই ফ্রান্সকে দেখলে অবাক হব

দাঁতের অত্যাচারে হাতের নখের প্রায় উঠে যাওয়ার অবস্থা। চোখ দু’টো আবাক দৃষ্টিতে বিদ্ধ মাঠে। টিভি ক্যামেরার লেন্সে ফ্রান্স কোচ দেশঁর মুখটা ভেসে উঠতেই মনটা খারাপ হয়ে গেল।

গ্রিজম্যানের গোলের হেড।

গ্রিজম্যানের গোলের হেড।

দীপেন্দু বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৬ ১০:১৯
Share: Save:

ফ্রান্স-২ : আলবেনিয়া-০

(গ্রিজম্যান, পায়েত)

দাঁতের অত্যাচারে হাতের নখের প্রায় উঠে যাওয়ার অবস্থা। চোখ দু’টো আবাক দৃষ্টিতে বিদ্ধ মাঠে।

টিভি ক্যামেরার লেন্সে ফ্রান্স কোচ দেশঁর মুখটা ভেসে উঠতেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। কেমন যেন বিহ্বল, নিথর মূতির্র মতো দেখাচ্ছিল!

বিরতির বাঁশি বেজেছে মিনিট পাঁচেক হয়েছে। একে একে জিরু, পায়েতরাও নিয়ম মেনে ড্রেসিংরুমের দিকে হাঁটা দিয়েছেন। কিন্তু দেশঁ তখনও মাঠের দিকে তাকিয়ে। ঘোরে আচ্ছন্ন! হয়তো ভাবছেন এ কোন ফ্রান্স? মাঝমাঠ বলে কিছু নেই। একটা ফিনিশার নেই। ’৯৮-এর বিশ্বকাপ দলে দেশঁর সঙ্গে কারেম্বু-জিদানদের মতো তারকা ছিল মাঝমাঠে। সেই দলের সঙ্গে তুলনা করছি না। তবে ফ্রান্সের মতো দলে একটা নিখুঁত পাস বাড়ানোর ফুটবলার থাকবে না, সেটা অবশ্যই দুশ্চিন্তার।

অন্তত বিরতির আগে পর্যন্ত তো কোনও পজিটিভ দিক চোখে পড়ল না ফ্রান্সের। ওদের থামাতে আলবেনিয়া গোলকিপারকে না বাড়তি কোনও চেষ্টা করতে দেখলাম, না সেই ভাবে নড়াচড়া করলেন। উল্টে জিরুরাই হেলায় বল পজেশন হারালেন বারবার। তবে এর জন্য আলবেনিয়া রক্ষণের প্রশংসা করতে হবে। সুইৎজারল্যান্ড ম্যাচে যে ভুলগুলো করেছিল ওরা, সেটা এই ম্যাচে করেনি। সবচেয়ে জরুরি, বিপক্ষকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়েনি। কিন্তু বড় দল তো তাকেই বলা হবে যে, বিপক্ষের সাজানো সব রকম জাল ছিঁড়ে অনায়াসে জয়ের পথ খুঁজে নেবে। ফ্রান্স পারেনি। আমি জানি না ওরা শেষ ষোলোয় জায়গা পাকা করতে পারবে কি না? পারলেও আমার বিশ্বাস, এই ফুটবল দিয়ে ফ্রান্স কোয়ার্টার ফাইনালে উঠবে না।

তবে এখানে দেশঁর কোনও দোষ আমি দেখছি না। সবাই হয়তো ফ্রান্সের খারাপ পারফরম্যান্সের জন্য কোচকেই দায়ী করবেন। এটাই বিশ্বের নিয়ম। কিন্তু আলবেনিয়া ম্যাচে দারুণ হোমওয়ার্ক করে নেমেছিলেন তিনি। শুরুতেই পোগবা আর গ্রিজম্যানকে বাইরে রেখে কোম্যান আর মার্শালকে নামানো তাঁর মাস্টারস্ট্রোক। আমার মতে বিরতির আগে ফ্রান্সের দু’টো উইংগারই সবচেয়ে বেশি সচল ছিলেন। যেমন কোম্যান গতি বাড়িয়ে ওভারল্যাপে উঠছিলেন। তেমনই ‘উইথ দ্য বল’ দৌড়ে নজর কাড়লেন মার্শাল। শুরুতে যে একটা প্রকৃত সুযোগ এসেছিল ফ্রান্সের কাছে, সেটা মার্সেলেরই সৌজন্যে। এই ম্যাচে আরও একটা ব্যাপার ফ্রান্সের বিরুদ্ধে কাজ করেছিল। পায়েতের আত্মতুষ্টি। রোমনিয়া ম্যাচে সত্যিই একটা বিশ্বমানের গোল করেছিলেন তিনি। কিন্তু সেটার ঘোর বোধহয় এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি পায়েত। প্রায় গোটা ম্যাচে তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। সেখানে দেশঁ ওঁর উপর এ দিন এতটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন যে, শেষ পর্যন্ত আর বেরোতে পারেননি পায়েতের মোহ ছেড়ে। তবে ভাল ফুটবলার হলে যে শুধু ফ্রিকিক থেকেই নয়, সব জায়গা থেকেই গোল করতে পারবেন, সেটা একেবারে শেষ মিনিটে বোঝালেন তিনি। তবে সেটা সম্ভব হল, অভিজ্ঞতার জোরেই।

অর্থাৎ গ্রিজম্যান। বিরতির পরে মার্শালকে বসানোর পরে অনেকেই হয়তো ভেবেছিলেন দেশঁ ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। কিন্তু অভিজ্ঞতার দাম কতটা, সেটা বুঝিয়ে দিলেন তিনি। আটলেটিকো মাদ্রিদের অন্যতম কি-ম্যান শুধু দেশঁর মুখ বাঁচানো করলেন না। শেষ লগ্নে গোল করে ফ্রান্সের শেষ ষোলোর রাস্তাও পরিষ্কার করে দিলেন।

তবু বলছি, এই ফ্রান্স কোয়ার্টার ফাইনালে উঠলে আমি অবাক হব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

France Euro 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE