ইন্ডিয়ান সুপার লিগে আটলেটিকো দে কলকাতার সঙ্গে কি খেলার সুযোগ পাবে আই লিগে খেলা কলকাতার দুই প্রধান ক্লাব?
এক শহর থেকে তিন দলের খেলা সম্ভব কী না তা নিয়ে চাপান-উতোরে হঠাৎ-ই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ময়দান। ফেসবুক, টুইটারে উপচে পড়ছে নানা মন্তব্য, খেউরও। আঁকা হচ্ছে নানা মজাদার কার্টুন। কিন্তু আইএসএলের সঙ্গে আই লিগ মেলা নিয়ে যে বিতর্কই চলুক পরিস্থিতি যা তাতে সামনের মরসুমে অর্থাৎ ২০১৭-১৮-তে যুবভারতীতে এটিকের সঙ্গে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানকে খেলতে দেখার সম্ভবনা প্রায় নেই বললেই চলে। অন্তত এই মিশে যাওয়া নিয়ে ফেডারেশন ও আইএমজিআরের পক্ষে যাঁরা আলোচনার দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁদের অভিমত, আপাতত সোনালি কোনও রেখা দেখা যাচ্ছে না। কমিটির দুই প্রধান কর্তা আই লিগের সিইও সুনন্দ ধর ও আইএমজিআরের পক্ষে চিরাগ তান্না সরাসরি কোনও মন্তব্য করতে না চাইলেও, যা ইঙ্গিত দিয়েছেন তাতে দুই লিগকে মেশাতে হলে দু’পক্ষকে তাদের দাবি থেকে কিছুটা হলেও সরে আসতে হবে। এখনও পর্যন্ত যা অসম্ভব বলেই মনে হচ্ছে।
ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট প্রফুল্ল পটেল দেড় বছর আগে ঘটা করে ক্লাবগুলোকে নিয়ে সভা করে ঘোষণা করেছিলেন, দু’টো লিগ মিলে যাবে। এবং আইএসএল-ই হবে প্রধান টুর্নামেন্ট। কিন্তু তিনি তো বলেই খালাস। সবার সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনার পরও দুই লিগকে এক করার দায়িত্বে থাকা কর্তারা ভেবেই পাচ্ছেন না ক্লাব আর ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সবার শর্ত মেনে কী ভাবে মিল মিশ হবে। ব্যাপারটা অনেকটাই তেল-জলের মেশার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে!
টাকা-পয়সা বা স্পনসর সমস্যার কথা ছেড়ে দিলেও যে পাঁচটি বিষয় নিয়ে গণ্ডগোল তার সমাধান করা বেশ কঠিন। কী কী নিয়ে জট?
এক) টুর্নামেন্ট শুরুর সময় এটিকে, দিল্লি ডায়নামোস, কেরল ব্লাস্টার্সদের মতো আটটি ফ্র্যাঞ্চাইজিকেই না কি বলা হয়েছিল, একটা শহর থেকে একটা টিমই খেলবে। এবং টুনার্মেন্টে লগ্নি করলে পাঁচ-ছয় বছরে তা থেকে লাভের মুখ দেখা যেতে পারে। টিভি সত্ত্বের টাকাও পাওয়া যাবে। আই লিগ মিশলে সেটা সম্ভব নয়।
দুই) দশ বছরের চুক্তি করার সময় সঞ্জীব গোয়েন্্কাদের বলে দেওয়া হয়েছিল বছরে খরচ হবে ৪০ থেকে ৫০ কোটি। আই লিগ মিশলে তিন মাসের টুর্নামেন্ট হয়ে যাবে সাত মাসের। খরচ হবে দ্বিগুণ।
তিন) আই লিগের কোন কোন টিমকে নেওয়া হবে বা ক’টা টিমকে সুযোগ দেওয়া হবে, তা নিয়ে ধন্দে ফেডারেশনই। তাদের আশঙ্কা, শুধু ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, বেঙ্গালুরুকে নিলে বাকি আই লিগের ক্লাবগুলো চার্চিলের মতোই মামলা করবে।
চার) আই লিগের ক্লাবগুলো কোনওমতেই ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি দিতে নারাজ। দেবব্রত সরকার বা দেবাশিস দত্তদের দাবি, দশকের পর দশক ধরে খেলার ঐতিহ্য থাকা সত্ত্বেও কেন নতুন টিমের মতো তারা ১৫ কোটি টাকা দেবেন।
পাঁচ) আইএসএলকে ভারতের এক নম্বর টুর্নামেন্ট করলে এখানকার চ্যাম্পিয়ন এবং রানার্সরা খেলার সুযোগ পাবে এএফসি-তে। এবং সে জন্য এএফসি-র লাইসেন্সিং শর্ত মানতে বাধ্য সবাই। কিন্তু এটিকে-সহ আইএসএলের কোনও ফ্র্যাঞ্জাইজিরই যা নেই।
ছয়) সমস্যা মাঠ নিয়েও। কারণ এএফসি-র নিয়মে একের বেশি টিম একটা মাঠকে নিজেদের বলে দাবি করতে পারে না। এই সমস্যা কলকাতা ছাড়াও মুম্বই ও গুয়াহাটিতেও। কারণ সেখানে এএফসির গাইডলাইন মেনে আছে একটি স্টেডিয়াম-ই।
সাত) আইএসএলের আটটা টিম ও আই লিগের দশটা টিমকে নিয়ে যদি একটা লিগ করা হয়, সেটা সাত মাসে শেষ করা অসম্ভব। টিভি-র সম্প্রচারের দায়িত্বে থাকা কর্তারাও তা চাইছে না।
এত ঝামেলা যা মেটা কঠিন। তবুও চাপ বাড়ছে। এমনিতে আগের দু’টো আইএসএলের চেয়ে এ বারের লিগে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি। শেষের দিকে কিছুটা আকর্ষণীয় হলেও, সার্বিকভাবে তা সাড়া ফেলতে পারেনি বলে আইএমজিআরের খবর। টিভি সম্প্রচারের দায়িত্বে থাকা স্পনসররা সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন, ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান বা বেঙ্গালুরুর মতো সমর্থক-সমৃদ্ধ টিম না ঢুকলে আইএসএলকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব। সেটা মানছেন সংগঠক প্রধান নীতা অম্বানীও। সে জন্য তিনি মরিয়া। সামনের মরসুমে না হলেও পরের দিকে দু’টো লিগকে কী ভাবে মেলানো যায়, তার সমাধান সূত্র বের করার চেষ্টা চলছে। নীতাদেবীদের সুবিধা, ফেডারেশনকে তাঁরা যা বলবেন, তা মানতে বাধ্য প্রফুল্ল পটেল-কুশল দাশরা। কারণ, ভারতীয় ফুটবল চলে অম্বানীদের টাকাতেই।
কলকাতার ক্লাব কর্তারা অবশ্য মনে করছেন, সামনের মরসুমে না হলে কোনও দিনই আর এই মিলন হবে না। যেমন বাগান অর্থসচিব দেবাশিস দত্ত বলে দিলেন, ‘‘হলে ২০১৭-১৮-তেই হবে। না হলে আর কোনও দিন হবে না। আমাদের দুটো টিম ঢুকলে আইএসএলের ভাল। না হলে তিন বছরের মধ্যে ওটা উঠে যাবে।’’ আর ইস্টবেঙ্গলের শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকারের মন্তব্য, ‘‘আমরা তৈরি। আমাদের কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু ফেডারেশনেই তো উদ্যোগ নেওয়ার লোক নেই।’’ যা থেকে একটা জিনিস পরিষ্কার তা হল, ক্লাব কর্তারা চাপান-উতোর চালালেও, নিজেরাই রয়েছেন ধোঁয়াশায়। বাগান সচিব অঞ্জন মিত্র তো বলেই ফেললেন, ‘‘ফেডারেশন নিজেই কিছু জানে না। জানলে আমাদের জানাত। যা দেখছি, পরের মরসুমে এটা হওয়া সম্ভব নয়।’’ অথচ দুই ক্লাবেক কর্তারাই আইএসএলে খেলার জন্য কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন। বাগান কর্তারা যেমন শাহরুখ খানের সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করে দিয়েছিলেন, তেমনই ইস্টবেঙ্গলও তাঁদের প্রধান স্পনসরের সঙ্গে বাড়তি টাকা খরচ নিয়ে আলোচনা সেরে রেখেছিল। বাগান সহ-সচিব সৃঞ্জয় বসু বলছিলেন, ‘‘আইএসএলে খেললে, এ রকম স্পনসর নেব। আই লিগ খেললে অন্য রকম। শাহরুখের কোম্পানির সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছিল। চূড়ান্ত কিছু হয়নি।’’ আর লাল-হলুদ কর্তা দেবব্রতবাবু বললেন, ‘‘আইএসএল খেললেও আমাদের স্পনসর একই থাকছে। আমাদের প্রধান স্পনসরই বাড়তি টাকার জোগান দেবে।’’
আর যাদের বিরুদ্ধে ক্লাবগুলি অকর্মণ্যতার অভিযোগ তুলছে সেই ফেডারেশনের বক্তব্য কী? সচিব কুশল দাশকেও আশাবাদী দেখাচ্ছে না। দিল্লি থেকে ফোনে বললেন, ‘‘ আমরা একটা প্রস্তাব দিয়েছিলাম। সেটা কার্যকর হলে হবে। না হলে নয়। বাধ্যতামূলক তো কিছু নেই। আমরা ক্লাবগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছি। দেখা যাক কী হয়!’’ ফেডারেশন সচিবের মতো আশার কথা শোনাচ্ছেন না আইএমজিআরের অন্যতম কর্তা সুন্দররামনও। সোমবার সকালে তাঁকে ফোনে ধরা হলে তিনি বলেন, ‘‘ক্লাবগুলোর সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। সমাধান সূত্র বেরোলে, আমরা জানিয়ে দেব।’’
আর এ সব দেখেই প্রশ্ন উঠেছে দুই লিগের মিলন নিয়ে যখন কিছুই হয়নি তা হলে হঠাৎ সঞ্জীব গোয়েন্কার এটিকে বনাম দুই ক্লাব কর্তারা এ ভাবে কেন কালনেমির লঙ্কা ভাগের মতো হাস্যকর লড়াইয়ে নেমে পড়লেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy