Advertisement
১৮ মে ২০২৪

এই কেকেআর ফাইনালে না গেলে অবাক হব

সহজ কথাটা প্রথমেই সোজাসুজি বলে দেওয়া ভাল। আইপিএল নাইন ফাইনালে এখন থেকেই কেকেআরকে দেখতে পাচ্ছি।কেউ কেউ বলতে পারে যে, পাঁচটা ম্যাচ দেখেই এত বড় কথাটা কী করে বলে ফেলতে পারলাম? এখনও ন’টা বাকি।

দীপ দাশগুপ্ত
শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৬ ০৫:১৪
Share: Save:

সহজ কথাটা প্রথমেই সোজাসুজি বলে দেওয়া ভাল। আইপিএল নাইন ফাইনালে এখন থেকেই কেকেআরকে দেখতে পাচ্ছি।

কেউ কেউ বলতে পারে যে, পাঁচটা ম্যাচ দেখেই এত বড় কথাটা কী করে বলে ফেলতে পারলাম? এখনও ন’টা বাকি। টি-টোয়েন্টিতে খেলা ঘুরতে লাগে কখনও একটা বল, একটা ক্যাচ বা হয়তো একটা রান আউট। কেকেআরের কপালে যে সে সব পরের দিকে ঘটবে না, গ্যারান্টি কোথায়? ঠিক, গ্যারান্টি নেই। বিরাট কোহালি বা এবি ডে’ভিলিয়ার্সের মতো কেউ কেউ নাইটদের বিরুদ্ধে একটা ইমপ্যাক্ট ইনিংস খেলে চলে যেতেই পারে। এক-আধটা ম্যাচ দুম করে হেরে যেতেই পারে গম্ভীররা। কিন্তু এই কেকেআর টানা হারবে না। সবচেয়ে বড় কথা, তিনটে প্লে অফের দু’টো থাকছে ইডেনে। কেকেআর যদি কোয়ালিফায়ার ওয়ানে ওঠে আর হেরেও যায়, তা হলে তারা একটা সুযোগ পাবে ইডেনে। তা ছাড়া কাগজে-কলমে নাইটদের হারানোর মতো কাউকে এখন দেখছি না।

একটা টিমকে হারাতে গেলে কী লাগে? ধরলাম, পিচ। এটাও ধরে নিলাম কেকেআরকে প্রতিপক্ষ টার্নার দিল না। সবুজ উইকেটে নামিয়ে দিল। কেকেআর মর্কেল-উমেশ-রাসেল পেস ব্যাটারিকে ছেড়ে দেবে। আবার পুরোপুরি ব্যাটিং উইকেট? পাটা পিচ? ঠিক আছে, একটা গম্ভীর থাকবে। রবিন উথাপ্পা থাকবে। ইউসুফ পাঠান-রাসেলের মতো দু’জন হার্ডহিটার থাকবে। প্রতিপক্ষ পারবে তো আটকাতে?

টিম হিসেবে আইপিএলে বাকি আট টিমের একটাও কেকেআরের ধারেকাছে নেই। তারকা নয়, টিমের কথা বলছি। আবার ধারাবাহিকতা— সেখানেও গম্ভীরদের আশেপাশে কাউকে পাচ্ছি না। আইপিএলে গত কয়েক বছরে ধারাবাহিকতা বিচারে সেরা দু’টো টিম ছিল চেন্নাই সুপার কিংগস এবং কেকেআর। টুর্নামেন্ট জিতুক, হারুক প্রত্যেক বার আট থেকে ন’টা ম্যাচ জিতত। প্রত্যেক বার এই দু’টো টিমকে দেখে মনে হত, এরা ফাইনাল না হোক প্লে-অফ যাবেই। এখন আর চেন্নাই নেই। ভাগ হয়ে দু’টো টিম হয়ে গিয়েছে। ধোনির পুণের কী অবস্থা, নতুন করে বলার দরকার নেই। গুজরাত ভাল করছে ঠিকই। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে ওরা প্রথম বার খেলছে। সেট কেকেআরের সঙ্গে তাই ওরাও মনে হয় পারবে না।

তার উপর পরিবেশ, ক্রিকেট-সূচি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষে দেশের বেশির ভাগ পিচ দেখছি, লো স্লো হয়ে গিয়েছে। ভাবা যায়, মোহালিতে পর্যন্ত বল বনবন করে ঘুরছে! গম্ভীরদের এই কেকেআর এমনিতেই দুর্দান্ত, আর এ সব উইকেট পেলে তো বিপক্ষকে স্রেফ ধ্বংস করে ছেড়ে দেবে। তার উপর সূচিটা ভাবুন। এত দিন ফ্র্যাঞ্চাইজিরা অ্যাওয়ে ম্যাচ নিয়ে সবচেয়ে টেনশনে থাকত। কারণ সেখানে পছন্দের পরিবেশ বা পিচ নেই। ঘরে যা পাওয়া যায়। টিম গম্ভীর সেখানে একসঙ্গে ছ’টা ম্যাচ খেলতে গেল। আর রেজাল্ট কি? না, প্রথম তিনটের তিনটেতেই জয়। মে মাস জুড়ে এর পর কিন্তু ঘরের মাঠে সব ম্যাচ। বাইরে মোটে একটা।

আমি তো বলব, নাইটরাই এখন টুর্নামেন্ট ফাইনালে ওঠার এক নম্বর ফেভারিট। কোনও টিমের ক্ষমতা কতটা বুঝতে সাধারণত দেখি যে, কঠিন পরিস্থিতিতে তারা কেমন করছে। পুণে ম্যাচটার সময় মনে হচ্ছিল, আজ যদি গম্ভীর-রবিন তাড়াতাড়ি আউট হয়ে যায়, বোঝা যাবে নাইটদের মিডল অর্ডার চাপ নিতে পারে কি না। গেলও। কিন্তু পরে অবাক হয়ে দেখলাম, সূর্যকুমার যাদব বা ইউসুফ পাঠানের কোনও অসুবিধেই হল না ম্যাচটাকে দেখেশুনে বার করতে। আমি ঘরোয়া ক্রিকেট প্রচুর দেখি। মুম্বইয়ের হয়ে সূর্য-র প্রচুর ইনিংস আমি দেখেছি। কিন্তু একটাও মনে করতে পারছি না যেখানে এত চাপের মধ্যে এত মাথা ঠাণ্ডা রেখে ও ম্যাচ জিতিয়েছে বলে। ইউসুফ— এত দিন তো আমরা ওকে বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান হিসেবে জানতাম। সে কি না সিঙ্গলস খেলছে! প্রথম ১৫ বলে ১২ রান করছে! মণীশ পাণ্ডের মতো চ্যাম্পিয়ন ব্যাটসম্যান যে নেই, সেটা বুঝতেই দিল না।

আসলে প্রত্যেকটা টিমের একটা সংস্কৃতি থাকে। দর্শন থাকে। কেকেআরের দর্শন হল, এখানে ব্যক্তি কেউ নেই। পুরোটাই টিম। তুমি নিজে কী করছ, কতটা ভাল করছ, সেটা গ্রাহ্য নয়। তোমার কাজে টিমের লাভ হল কি না সেটাই আসল। যা টিম মালিক থেকে সবচেয়ে জুনিয়র ক্রিকেটার, সবাই বিশ্বাস করে। ইউসুফ গত কাল মাঠে নেমে ধুমধাড়াক্কা চালাতেই পারত। কিন্তু তাতে ওর টিমের লাভ হত না। ইউসুফ তাই ও দিকে যায়নি।

তার পর ধরুন প্লেয়ার সাপোর্ট। সুনীল নারিন দেখছে, ওর অ্যাকশন ঠিক করতে ক্যারিবিয়ান বোর্ড কিছু করছে না। যাবতীয় কাজকর্ম কেকেআর করছে। ফিরিয়ে আনছে। মাঠে তার পর নামলে নারিন দু’শো শতাংশ দেবে না? সেট টিম তৈরি—সেখানেও কেকেআর বাকি ফ্র্যাঞ্চাইজিদের হারিয়ে দিয়েছে। কেকেআর গম্ভীরকে আনার পর প্রথম দু’এক বছর ধরে একটা নিউক্লিয়াস তৈরি করেছে। যা কখনও পাল্টায়নি। তার পর যে ফাঁকফোঁকরগুলো ছিল, ভর্তি করেছে। এক নয়, চার-পাঁচ বছর লেগেছে আজকের কেকেআর তৈরি করতে।

এত মজবুত এক মাল্টিস্টোরিডকে ভেঙে ফেলা কি অতই সহজ?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

IPL 2016 KKR
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE