Advertisement
০৪ মে ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্রকে পদক জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ‘কোচি জে’র ছাত্রী

তাঁর প্রথম ছাত্রী অলিম্পিক্সে গিয়েছিলেন কুড়ি বছর আগে। আটলান্টায়। নাম অম্বিকা রাধিকা। তাঁর আরও এক ছাত্রী এ বার রিও অলিম্পিক্সের টেবলে র‌্যাকেট হাতে লড়াই করবেন— মৌমা দাস। দু’জনকেই ব্যক্তিগতভাবে কোচিং করিয়েছেন জয়ন্ত পুশিলাল।

কলকাতার জয়ন্তর (ডান দিকে) বিদেশি ছাত্রী লিলি।

কলকাতার জয়ন্তর (ডান দিকে) বিদেশি ছাত্রী লিলি।

রতন চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৬ ০৪:১৭
Share: Save:

তাঁর প্রথম ছাত্রী অলিম্পিক্সে গিয়েছিলেন কুড়ি বছর আগে। আটলান্টায়। নাম অম্বিকা রাধিকা।

তাঁর আরও এক ছাত্রী এ বার রিও অলিম্পিক্সের টেবলে র‌্যাকেট হাতে লড়াই করবেন— মৌমা দাস। দু’জনকেই ব্যক্তিগতভাবে কোচিং করিয়েছেন জয়ন্ত পুশিলাল।

এ সব সাফল্য তো ভারতে। কিন্তু বিদেশে কোচিং করানো কোনও ভারতীয় কোচের ছাত্রী সে দেশের অলিম্পিক্স টিমে সুযোগ পেয়েছেন এবং পদকের স্বপ্ন দেখছেন এ রকম ঘটনা কখনও ঘটেছে বলে মনে করা যাচ্ছে না। সেটাই ঘটেছে এ বার।

রিওগামী দলের জন্য যুক্তরাষ্ট্র যে টেবল টেনিস টিমের নাম ঘোষণা করেছে সেই দলেও বাংলার অন্যতম সফল কোচ জয়ন্ত পুশিলালের এক ছাত্রী এ বার সুযোগ পেয়েছেন। নাম লিলি ঝ্যাং। কুড়ি বছরের লিলি চিনা বংশোদ্ভূত হলেও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।

চার বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় ছিপছিপে চেহারার মেয়েটিকে গড়েপিটে তৈরি করে এসেছিলেন জয়ন্ত। সেই মেয়েটি সুযোগ পাওয়ার খবর পেয়ে উচ্ছ্বসিত লিলির কোচ মঙ্গলবার বলছিলেন, ‘‘মেয়েটির দু’দিকের টপ স্পিন এত ভাল যে ও পদক পেতেই পারে। দারুণ খেলছে গত বছর। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সে দেশের এক নম্বর এরিয়াল শিনকে হারিয়ে। মেয়েটার সবচেয়ে বড় গুণ, হঠাৎ বিপক্ষের উপর চাপ বাড়াতে পারে। যেটা সামলানো কঠিন।’’

রাজ্য স্পোর্টস কাউন্সিলের কোচ জয়ন্ত মাস চারেক ছুটি নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে ক্যালিফোর্নিয়ায় গিয়ে কোচিং করাচ্ছেন। এক ভারতীয়র উদ্যোগে ইন্ডিয়ান কমিউনিটি সেন্টার বলে একটি সংস্থায়। সেখানেই স্কুল পড়ুয়া লিলি ঝ্যাংকে কোচিং করাতেন তিনি। লিলির মা-বাবা বহু দিন রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। চাকরি করেন উচ্চপদে। ওঁরাই ‘কোচি জে’-র কাছে নিয়ে আসেন লিলিকে। ব্যক্তিগত ট্রেনিংয়ের জন্য। কোচি জে নামেই যুক্তরাষ্ট্র টিটি মহলে পরিচিতি জয়ন্তর। জয়ন্তের ইংরেজি অক্ষরের প্রথম তিনটি শব্দই উচ্চারণ করতেন লিলির বাবা-মাও। মঙ্গলবার বিকেলে অরূপ বসাক-মৌমা দাসদের তুলে আনার প্রধান কারিগর বলছিলেন, ‘‘প্রায় দেড় ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে অনুশীলন করতে আসত লিলি। অসম্ভব পরিশ্রমী। কখনও ফাঁকি দিত না। অনুশীলনের সময় একবার ওর নাক দিয়ে রক্ত পড়ছিল, তা দেখে আমি ট্রেনিং বন্ধ করে দিলাম। বললাম বিশ্রাম নাও। কিছুক্ষণ পর টয়লেট থেকে ফিরে এসে বলল, স্যার আমি আবার ট্রেনিং করব। পুরো দু’ঘণ্টার অনুশীলন শেষ করল। এই অসম্ভব জেদটাই ওকে এতদূর নিয়ে এসেছে। ও পদক পেলে তাই অবাক হব না। আর চিন-যুক্তরাষ্ট্র মিশেল সব সময়ই টিটিতে ভাল ফল করে। পরে জেনেছিলাম ক্যালিফোর্নিয়ার এই জায়গাটা এত শুকনো যে, নাক দিয়ে রক্ত ঝরে বেশি পরিশ্রম করলে।’’ লিলি ঝ্যাং যদি রিও-র ভিকট্রি স্ট্যান্ডে ওঠেন, তা হলে বলাই যায় বঙ্গসন্তান কোচের ছোঁয়া থাকবে সেই জয়ে। সেই আশায় রয়েছেন বায়োকেমিক ইঞ্জিনিয়ার জয়ন্তও।

লিলি ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র টিমে আরও এক জন সুযোগ পেয়েছেন, কনক ঝা। কনিষ্ঠতম সেই ছেলেটির আদি নিবাস ছিল বিহারে। ওই ছেলেটিও দলের সঙ্গে এক সময় অনুশীলন করতে আসত। তাঁকে অবশ্য নিজের ছাত্র বলতে নারাজ জয়ন্ত। বলছিলেন, ‘‘লিলি-এরিয়ালদের আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রশিক্ষণ দিতাম। ওদের নিজের ছাত্রী হিসাবে তাই দাবি করতে পারি। কিন্তু কনককে করছি না। ওকে আমি সে ভাবে কখনও কোচিং করাইনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jayanta Pushilal Table tennis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE