Advertisement
০৭ মে ২০২৪

ফোনে জিতেন্দ্র, চিন্তা কোরো না

সুদূর দিল্লি থেকে ৮৫ নম্বর চেতলা রোডের এই বাড়িতে লক্ষ্মীপুজোর সকালে ফোনটা এসেছিল পরিবারের একমাত্র মেয়ে পুনমের কাছে। যিনি সম্পর্কে ভারতীয় দলের সহ-অধিনায়কের দিদি।

প্রত্যয়ী: ডিফেন্সে ভরসা জিতেন্দ্র সিংহ।

প্রত্যয়ী: ডিফেন্সে ভরসা জিতেন্দ্র সিংহ।

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:৪৮
Share: Save:

চারু অ্যাভেনিউ থেকে টালি নালার দিকে মিনিট পাঁচেক হেঁটে গেলেই কাঠপোল। সেখানেই নালা লাগোয়া আট ফুট বাই আট ফুটের ছোট্ট অ্যাসবেস্টসের ঘর। আর সেই ঘরেই বসবাস ভারতীয় রক্ষণের বিশ্বস্ত প্রহরী জিতেন্দ্র সিংহ বিস্তের। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে ভারতীয় কোচ নর্টন দি মাতোসের রক্ষণের ভরসা।

সুদূর দিল্লি থেকে ৮৫ নম্বর চেতলা রোডের এই বাড়িতে লক্ষ্মীপুজোর সকালে ফোনটা এসেছিল পরিবারের একমাত্র মেয়ে পুনমের কাছে। যিনি সম্পর্কে ভারতীয় দলের সহ-অধিনায়কের দিদি। ফোনের অন্যপ্রান্তে পেয়েই দিদিকে আশ্বস্ত করেন জিতেন্দ্র। বলেন, ‘‘তোরা অযথা টেনশন করিস না। গ্রুপে কলম্বিয়া বা আমেরিকার সঙ্গে কী হবে তা জানি না। তবে ঘানাকে আমরা হারাবোই। ওদের আগেও হারিয়েছি।’’

বলেই খোঁজ নিতে শুরু করেন মা হেমাদেবী কখন বাড়ি থেকে রওনা দিচ্ছেন দিল্লির উদ্দেশে।

কোজাগরীর সন্ধ্যায় টালি নালার ধারে তাঁর ছোট্ট কুটিরে বসে সে কথাই শোনাচ্ছিলেন জিতেন্দ্রর বাবা রবীন্দ্র সিংহ বিস্ত। এক নিঃশ্বাসে বলে যাচ্ছিলেন, ‘‘বুধবার সন্ধেতেই বড় ছেলে সূরজ-এর কাছে দু’জনের ই-টিকিট চলে এসেছিল। যে কোনও দু’জন যেতে পারবে। জিতেন্দ্রর আবার মা আর বড় ভাইকে পেলে কাউকে দরকার হয় না। তাই মাঠে বসে ছেলের বিশ্বকাপ খেলা দেখা হল না আমার। ওদের পাঠিয়ে দিলাম।’’

আশায়: জিতেন্দ্রর বাড়িতে বাবা রবীন্দ্র সিংহ বিস্ত ও দিদি।

বৃহস্পতিবার সকালেই কালীঘাটে পুজো দিতে গিয়েছিলেন সূরজ। তার পর দুপুর আড়াইটার উড়ানে মাকে নিয়ে দিল্লি গিয়েছিলেন তিনি। ঘরে রয়ে গিয়েছেন জিতেন্দ্রর বাবা ও দিদি। আর ছোট ভাই কমলেশ রয়েছেন পঞ্জাবের মিনার্ভা অ্যাকাডেমিতে।

সচিন তেন্ডুলকরের কাছে তাঁর দাদা অজিত যে রকম। জিতেন্দ্রর জীবনে ঠিক সে রকমই ভূমিকা সূরজের। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের জন্য ফুটবলার বাছার ট্রায়াল চলছে সে খবর জিতেন্দ্রকে এনে দিয়েছিলেন তিনিই। তাই দেশের প্রথম বিশ্বকাপে ভাইয়ের প্রতিনিধিত্ব করার মাহেন্দ্রক্ষণে হাজির থাকতে দিল্লি গিয়েছেন তিনিই।

আলমোড়ার আদি বাসিন্দা হলেও জিতেন্দ্রর ঠাকুর্দা মদন সিংহ বিস্ত দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন-এর কর্মী ছিলেন। তার পর থেকে টালিগঞ্জেই রয়ে গিয়েছেন তাঁরা। এ দিন সে কথা বলতে গিয়ে রবীন্দ্রবাবু বলছিলেন, ‘‘ছেলেটা অল্প বয়সে ক্রিকেটার হতে চাইত। কিন্তু ক্রিকেটের সরঞ্জামের খরচ কী ভাবে জোগাড় করবো। লালবাজারের কাছে একটি পানশালায় ওয়েটারের চাকরি করে তা সম্ভব ছিল না। তাই বাড়ির কাছে অ্যাভেনিউ সম্মিলনীতে ফুটবল খেলতে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। কাল সেই ছেলেটা দেশের হয়ে নামবে। আর গোটা দেশ ওদের জন্য গলা ফাটাবে। ভাবলেই গর্ব হচ্ছে।’’

একটি বেসরকারি নিরাপত্তা সস্থায় রক্ষীর কাজ করেন রবীন্দ্রবাবু। তাঁর ছেলে বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে খেলছে জেনে সংস্থার মালিক ভারতের খেলার দিনগুলোতে ছুটি দিয়েছেন তাঁকে। বললেন, ‘‘শুক্রবার সকালেই ঘুম থেকে উঠে বজরংবলীকে পুজো দেব। সন্ধে হলেই বাবা-মেয়ে বসে যাব টিভির সামনে।’’

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE