হারের পরে হতাশ বাংলার ফুটবলাররা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
কেরলের সিসান যখন টাইব্রেকারের শেষ শটটি মারতে যাচ্ছেন, তখন হঠাৎই দেখা গেল বাংলার গোলকিপার বদল হচ্ছে।
রিজার্ভ বেঞ্চের কোনও বদলি গোলকিপার নয়, পুরো মাঠকে চমকে দিয়ে কমলা রংয়ের বিব গায়ে গোলের নীচে এসে দাঁড়ালেন দলের স্ট্রাইকার জিতেন মুর্মু!
অভিনব এই ঘটনা ঘটালেন কেন? ম্যাচের পর কান্নাভেজা চোখে বাংলার অধিনায়ক জিতেনের সরল স্বীকারোক্তি, ‘‘যদি ভাগ্য ফেরে সেই আশায়! কেরলের তিনটে গোল হয়ে যাওয়ার পরে সবাই মিলে আমাকে পাঠাল কিপিং করতে। কিন্তু পারলাম না।’’ জিতেনের পাশে দাঁড়িয়ে তখন ফ্রি-কিকে দুর্দান্ত গোল করে বাংলাকে ম্যাচে ফেরানো তীর্থঙ্কর সরকার। তাঁর মুখেও হতাশা এবং আফসোস। ‘‘দশ জনে খেলেও ২-২ করে ফেলেছিলাম। কাউকে দোষ দেব না। তবে যারা ভাল কিক মারে তারাই পেনাল্টি নষ্ট করল।’’
গোলকিপার পজিশনে স্ট্রাইকার নামিয়ে ফাটকা খেলেও শেষ পর্যন্ত ভাগ্য ফেরেনি বাংলার। ১৪ বছর পরে কেরল সন্তোষ ট্রফি জিতল এবং সেটা ফুটবলের মক্কা থেকে। আই লিগ, আইএসএলে ক্লাবগুলির চূড়ান্ত ব্যর্থতার পর বাংলার ফুটবলে আরও একটা অন্ধকার দিন ফিরল। কিন্তু কোনও টিম যদি অন্তত সাত বার বরাতজোরে গোল খাওয়া থেকে বেঁচে যায়, দু’-দু’বার পিছিয়ে পড়েও সমতায় ফিরে হেরে যায়, তাদের জন্য দুঃখ নয়, করুণা হতে পারে। এই বাংলার জন্য সেটাই প্রাপ্য।
রবিবার যুবভারতীতে ঘটনাবহুল, রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে ভাগ্যদেবী কিন্তু কার্যত ‘কৃপার থালা’ উজাড় করে দেন রঞ্জন চৌধুরীর টিমের জন্য। যে ম্যাচে প্রথমার্ধেই বাংলার পাঁচ গোল হজম করার কথা, সেখানে কেরল ১-০তেই থেমে থাকল জিতিনের গোলে। তীব্র চাপের মুখ থেকে বেরিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে জিতেন মুর্মু গোল করে বাংলাকে সমতায় ফেরালেন। ১-১ অবস্থায় ম্যাচ গড়াল অতিরিক্ত সময়ে। ১১২ মিনিটে লালকার্ড দেখে বেরিয়ে গেলেন রাজন বর্মন। বাংলা দশ জন হয়ে গেল। এর পাঁচ মিনিট পরেই কেরলের ভিবিন থমাস ফের ঝলকালেন। সাথীবেন বালানের দল ২-১ এগিয়ে গেল। সবাই যখন ধরে নিয়েছে ট্রফি বাংলার হাতছাড়া হচ্ছেই, তখন ১২৬ মিনিটে অর্থাৎ অতিরিক্ত সময়ের শেষ মিনিটে আবার নাটকীয় মোড় ম্যাচে। কেরল বক্সের কিছুটা বাইরে ফ্রি-কিক পেল বাংলা। রঞ্জনের টিমের ‘সবেধন নীলমণি’ তীর্থঙ্কর যখন বল বসিয়ে তৈরি হচ্ছেন, তখন দেখা গেল তাঁর সতীর্থ জিতেন, সঞ্চয়ন সমাদ্দার, সৌরভ দাশগুপ্তরা মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে প্রার্থনা করছেন। তীর্থঙ্কর ভুল করেননি। তাঁর বাঁকানো শট কেরল গোলকিপার মিধুন ভিকে-কে টপকে আছ়ড়ে পড়ল জালে। বাংলা ফের ‘অক্সিজেন সিলিন্ডার’ পেল বাঁচার।
টাইব্রেকারের পেনাল্টি কিকের আগে কী বলেছিলেন নিজের দলের গোলকিপারকে? উচ্ছ্বাসের সমুদ্রে ভাসতে থাকা কেরল কোচ সাথীবেন বললেন, ‘‘বলেছিলাম, সব কিকের সময়ই ডান দিকে ঝাঁপাতে। বাংলার কেউ না কেউ সে দিকে বল মারবেই।’’ হলও তাই। কিক মারতে যাওয়া বাংলার প্রথম দুই ফুটবলার অঙ্কিত মুখোপাধ্যায় এবং নবি হোসেন সে দিকেই বল মারলেন। কান্নুড়ের ছেলে মিধুন ডান দিকে ঝাঁপিয়ে দুটি কিক-ই রুখলেন। এবং চ্যাম্পিয়ন করে দিয়ে গেলেন আই এম বিজয়নের রাজ্যকে। কেরলের চার ফুটবলারই গোল করায় তীর্থঙ্কর বা সঞ্চয়নের পেনাল্টি-গোল কাজে লাগল না। ট্রফি জিতে জিতিন-জিতেন-রাহুলদের উচ্ছ্বাসে ভাসল স্টেডিয়াম। হাজার ছয়েক দর্শক ছিলেন মাঠে। তাদের মধ্যে কেরল সমর্থক ছিলেন অর্ধেক। ছিলেন অনেক মহিলাও। ভুমিপুত্রদের জাতীয় সেরা হওয়ার দেখে তাদের নাচতে দেখা গেল গ্যালারিতে। আর সেই দৃশ্য দেখতে দেখতে বাংলার কোচ রঞ্জন চৌধুরী বললেন, ‘‘তিন জন চোট পেয়ে বেরিয়ে যাওয়ায় পেনাল্টি কিক মারার তালিকা ওলট পালট হয়ে গিয়েছিল। রণনীতিও কাজে লাগেনি।’’
কিন্তু প্রশ্ন উঠে গেল, শেষ ছয় দিন পেনাল্টি অনুশীলন করিয়ে তা হলে কী লাভ হল? বাংলার গোলকিপার রণজিৎ মজুমদারকেই বা বাছল কে? যিনি পুরো টুর্নামেন্টে একবারও আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলতে পারলেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy