Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘মারাত্মক গুগলিতে বিভ্রান্ত ব্যাটসম্যানরা, সঙ্গে ফ্লিপার-টপস্পিন’

লেগস্পিনার যুজবেন্দ্র চহাল এবং চায়নাম্যান কুলদীপ যাদব খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আমাদের ভুল প্রমাণ করে দিয়েছে। এই মুহূর্তে দুই ভারতীয় স্পিনারকে দেখে মনে হচ্ছে, কোনও ব্যাটসম্যানই বুঝতে পারছে না ওরা কোন দিকে বল ঘোরাবে।

অশোক মলহোত্র
শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:৩৪
Share: Save:

আর. অশ্বিন এবং রবীন্দ্র জাডেজাকে যখন ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট সীমিত ওভারের ক্রিকেট থেকে বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, অবাক হয়েছিলাম। কিন্তু লেগস্পিনার যুজবেন্দ্র চহাল এবং চায়নাম্যান কুলদীপ যাদব খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আমাদের ভুল প্রমাণ করে দিয়েছে। এই মুহূর্তে দুই ভারতীয় স্পিনারকে দেখে মনে হচ্ছে, কোনও ব্যাটসম্যানই বুঝতে পারছে না ওরা কোন দিকে বল ঘোরাবে। কেন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে দুই স্পিনার? কারণগুলো একবার দেখে নেওয়া যাক—

বড় টার্ন করানোর ক্ষমতা: দু’জনেই রিস্টস্পিনার (কবজি ব্যবহার করে যে স্পিনার) হওয়ায় যে কোনও পিচ থেকে টার্ন আদায় করে নিতে পারে। চহালের লেগস্পিন কিন্তু বড় বড় ব্যাটসম্যান ধরতে পারছে না। হয় আড়াআড়ি শট খেলতে গিয়ে আউট হচ্ছে বা ড্রাইভ করতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লাগিয়ে দিচ্ছে। কুলদীপ যাদবের সেরা অস্ত্র হল, ওর গুগলি। চায়নাম্যান বোলার হওয়ায় ডান হাতি ব্যাটসম্যানের ক্ষেত্রে ওর বল এমনিতে ভিতরে ঢুকে আসে। কিন্তু ওর সব চেয়ে বিপজ্জনক হল গুগলিটা। যা ডান হাতিদের ক্ষেত্রে বড় টার্ন করে বাইরে যাচ্ছে, বাঁ-হাতিদের ক্ষেত্রে ভিতরে আসছে। এই মারাত্মক গুগলিটা কিন্তু ব্যাটসম্যানরা ধরতেই পারছে না। যেমন প্রথম ওয়ান ডে-তে জে পি ডুমিনি গুগলি বুঝতে না পেরে বোল্ড হয়ে গেল। এত ভাল গুগলি আছে বলেই ব্যাটসম্যানরা কুলদীপের বল খেলতে গিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছে।

কবজির ব্যবহার এবং বৈচিত্র: রিস্টস্পিনারদের খেলতে গেলে ওদের গ্রিপ দেখে বুঝে নিতে হবে, বল কোন দিকে ঘুরতে পারে। এখনকার বেশিরভাগ বিদেশি ব্যাটসম্যান সেটা করতে পারছে না। ওরা পিচে বল পড়ার পরে বুঝতে চেষ্টা করছে। সেটাই মারাত্মক ভুল হচ্ছে। এমনিতে লেগস্পিনার অনেকেই খেলেছে। আমরা যখন খেলতাম, সিম পজিশন দেখে বোঝার চেষ্টা করতাম, বলটা লেগস্পিন হবে না গুগলি। কিন্তু ভাল চায়নাম্যান বোলার খেলা খুবই কঠিন। কারণ ক’জন ব্যাটসম্যান এই ধরনের বোলারের বিরুদ্ধে প্র্যাক্টিস করার সুযোগ পায়? আমি তো নিজের ক্রিকেট জীবনে কখনও চায়নাম্যানকে খেলার সুযোগ পাইনি। এ ছাড়া দুই বোলারের হাতেই অনেক বৈচিত্র। লেগস্পিন, গুগলি তো আছেই। চহালের ফ্লিপার বা কুলদীপের টপস্পিনটাও কিন্তু ঘাতক হয়ে যাচ্ছে মাঝেমাঝেই।

আরও পড়ুন: মুম্বই থেকে বেঙ্গালুরুতে বিসিসিআই-এর হেড কোয়ার্টার!

ফ্লাইটের সঙ্গে গতির হেরফের: দু’জনেই কিন্তু খুব ভাল ফ্লাইট করায়। তার চেয়েও ভাল করে গতির হেরফের। দক্ষিণ আফ্রিকার পিচে খুব স্লো বল করছে চহাল-কুলদীপ। ফলে টার্নও পাচ্ছে, ব্যাটসম্যানরাও শটের টাইমিংয়ে গণ্ডগোল করছে। একটা তথ্য দিচ্ছি। চলতি ওয়ান ডে সিরিজে আমাদের দুই স্পিনারের বলের গতি ছিল মোটামুটি ঘণ্টায় ৪৮.৫ মাইল থেকে ৫৪.৫ মাইলের মধ্যে। অন্য দিকে দক্ষিণ আফ্রিকার ইমরান তাহিরের গতি ৫৩ থেকে ৬৩ মাইলের মধ্যে। ফলে ইমরানকে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা স্লো মিডিয়াম পেসারের মতো খেলে দিয়েছে। চহাল-কুলদীপের ক্ষেত্রে যা হয়নি।

সাহস-বুদ্ধির মিশেল: এখনকার সীমিত ওভারের ক্রিকেটে দেখি ব্যাটসম্যান একটা বল মেরে দিলেই বোলার অন্য বলটা টেনে দিচ্ছে, শর্ট করে দিচ্ছে। ব্যতিক্রম এই দুই বোলার। ওরা কখনওই ফ্লাইট করাতে ভয় পায় না। তাই ওদের একটা বল মারলে পরের বলে ব্যাটসম্যানের আউট হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। এবং সেটা হচ্ছেও। ব্যাটসম্যানের মানসিকতা খুব ভাল বুঝতে পারে এরা দু’জন। চহাল তো দেখছিলাম আবার জুনিয়র পর্যায়ের দাবায় ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছে। কোনও সন্দেহ নেই, বল করার সময় মগজাস্ত্রটা খুব ভাল কাজে লাগায় ছেলেটা। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজে ও যে ভাবে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে বার বার আউট করেছিল, তাতেই ওর বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়া যায়। ব্যাটসম্যানের দুর্বলতা দ্রুত খুঁজে নেয়।

অধিনায়কের সমর্থন: ক্রিকেটে একটা কথা আছে, লেগস্পিনার হল ক্যাপ্টেনের বোলার। মানে ক্যাপ্টেন যদি লেগস্পিনারের ওপর ভরসা রাখে, তার পছন্দ মতো ফিল্ডিং দেয়, তা হলে কিন্তু তার সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আমাদের দুই রিস্টস্পিনারের পিছনেই অধিনায়ক বিরাট কোহালির পুরো সমর্থন আছে। প্লাস চহালকে আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর টিমে পাওয়ায় কোহালি আরও ভাল করে বুঝতে পারে, ওর চাহিদাটা কী। কাগজে ওদের সাক্ষাৎকার পড়ে জেনেছি, ক্যাপ্টেন ওদের বলেই রেখেছে, ছয় খাও, ঠিক আছে। কিন্তু সব সময় উইকেট তোলার জন্য ঝাঁপাও। তাঁর দুই বোলারকেই ‘লাইসেন্স টু কিল’ দিয়ে রেখেছে কোহালি। এটাই আরও বিধ্বংসী করে তুলেছে ভারতীয় বোলিংয়ের নতুন তারকা জুটিকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE