Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Diego Maradona

মারাদোনা নেই, দুর্দান্ত-বিতর্কিত-ঘটনাবহুল অধ্যায়ের শেষ

নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের ৮ দিন পরে তাঁকে বুয়েনাস আইরেসের হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।

স্মৃতি: ফুটবলের ইতিহাসে চির অমর সেই ছবি। ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জেতার পরে ট্রফি নিয়ে আর্জেন্টিনার নায়ক দিয়েগো মারাদোনা। ফাইল চিত্র

স্মৃতি: ফুটবলের ইতিহাসে চির অমর সেই ছবি। ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জেতার পরে ট্রফি নিয়ে আর্জেন্টিনার নায়ক দিয়েগো মারাদোনা। ফাইল চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২০ ২২:২৫
Share: Save:

বিশ্ব ফুটবলের গ্রেটেস্ট, রাজপুত্র, ব্যাড বয়, জাদুকর ইত্যাদি বহু বিশেষণ সঙ্গে নিয়ে নিজের মেজাজেই যেন চলে গেলেন দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা। ৬০ বছর বয়সেই শেষ হয়ে গেল মহানায়কীয় অধ্যায়। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন তিনি।

নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের ৮ দিন পরে তাঁকে বুয়েনাস আইরেসের হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এক ক্লিনিকে। সেখানে তাঁর মাদকাসক্তি দূর করার চিকিৎসা চলছিল। মারাদোনার আইনজীবী জানিয়েছেন, বুধবার সকালে বাড়িতেই আচমকা হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। তার পর মৃত্যু। দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন তিনি। আর্জেন্টিনার একটি সংবাদপত্রের দাবি, হঠাৎ করেই এ দিন মারাদোনার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। অচৈতন্য হয়ে পড়েন দিয়েগো। তাঁকে দেখভালের দায়িত্বে থাকা নার্স অনুমান করেন, দিয়েগো হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি খবর দেন চিকিৎসকদের। কিন্তু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই সব শেষ হয়ে যায়। যদিও মারাদোনার পরিবারের তরফে এই ঘটনা নিয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। মারাদোনার বাড়ির সামনে ন’টি অ্যাম্বুল্যান্স দাঁড়িয়ে ছিল বলেও জানা গিয়েছে।

মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ায় এ মাসের গোড়ায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্রোপচার হয়েছিল তাঁর। ১১ নভেম্বর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয় হাসপাতাল থেকে।

আরও পড়ুন: নায়ক, ফুটবলের ব্যাড বয়... সব বিতর্ক পেরিয়ে মারাদোনা শুধুই এক কিংবদন্তি

মারাদোনার আইনজীবী মাতিয়াস মোরলা সেই সময় বলেছিলেন, সম্ভবত জীবনের কঠিনতম সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে মারাদোনাকে। মস্তিষ্কে জমাট বাঁধা রক্তের জন্য প্রাণ হারানোরও আশঙ্কা ছিল বলে জানিয়েছিলেন তিনি।

ফুটবলজীবন ঘটনাবহুল মারাদোনার। ১৯৮৬ সালে মেক্সিকো বিশ্বকাপে তিনি মন্ত্রমুগ্ধ করে দিয়েছিলেন ফুটবলবিশ্বকে। আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তাঁর নেতৃত্বে। ১৯৯০ সালে ইটালি বিশ্বকাপেও তিনি আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে তুলেছিলেন। কিন্তু, সেরা করতে পারেননি। ১৯৯৭ সালে ফুটবলকে বিদায় জানান মারাদোনা। শুরু করেন কোচিং। ২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত আর্জেন্টিনার জাতীয় দলেরও কোচ ছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন: একই ম্যাচে নিন্দিত ও প্রশংসিত, ফুটবলার হিসাবে যতটা সফল কোচিংয়ে ততটাই ব্যর্থ রাজপুত্র

মৃত্যুর সময়ও তিনি ছিলেন আর্জেন্টিনার ঘরোয়া ক্লাব জিমনাসিয়া ডি লা প্লাটার কোচ।

তাঁর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ ফুটবল বিশ্ব। একের এক আসছে শোকবার্তা। কিংবদন্তি ফুটবলারকে শ্রদ্ধা জানানোর পালা চলছে। অনেকের মতে, তিনিই বিশ্বের সর্বকালের সেরা ফুটবলার। মারাদোনার প্রয়াণের খবর পেয়ে শোকগ্রস্ত হয়ে পড়েন বিশ্ব ফুটবলের সম্রাট পেলে। তিনি টুইট করেন, ‘আমার প্রিয় বন্ধুকে হারালাম’। লিয়োনেল মেসি ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, ‘উনি আমাদের ছেড়ে গিয়েও কিন্তু ছেড়ে যাননি। কারণ দিয়েগো তো অবিনশ্বর’। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো টুইট করেছেন, ‘আজ আমি পরম বন্ধু এবং গোটা বিশ্ব এক বিস্ময় প্রতিভাকে চিরকালের জন্য বিদায় জানাল’। আর্জেন্টিনা দলের প্রাক্তন কোচ লুইস সিজার মেনোত্তি লেখেন ‘খবরটা শুনে মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছি। এর চেয়ে খারাপ খবর আর কিছু হয় না’।

আরও পড়ুন: মৃত্যুর তারিখটা পর্যন্ত মিলিয়ে দিল দুই বন্ধু ফিদেল-দিয়েগোকে

তবে বিতর্ক আজীবন সঙ্গী হয়েছে তাঁর। ১৯৯৪ সালে আমেরিকা বিশ্বকাপে ডোপ পরীক্ষায় ধরা পড়ার পর তাঁকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। ড্রাগের কারণে দীর্ঘ সময় ভুগতে হয়েছিল তাঁকে। ওজনও বেড়ে গিয়েছিল। মদ্যাপানে আসক্তির জন্যও সমস্যায় পড়েছিলেন তিনি।

মারাদোনা বললেই ফুটবলপ্রমীদের মনে পড়ে ১৯৮৬ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মারাদোনার দুটো গোলের কথা। প্রথমটি ‘হ্যান্ড অফ গড’ নামে পরিচিত। এবং বিতর্কিত। রিপ্লেতে দেখা গিয়েছিল মারাদোনার হাতে লেগে বল জালে জড়িয়েছিল। সেই গোলকেই ‘হ্যান্ড অফ গড’ বলেছিলেন মারাদোনা। তবে সেই ম্যাচেই এর পরে তাঁর গোল ছিল চোখ জুড়নো। একের পর এক ফুটবলারকে কাটিয়ে গোল করেছিলেন তিনি। যা মুগ্ধতায় ভরিয়েছিল ফুটবলরসিকদের।

আরও পড়ুন: আকাশে একসঙ্গে ফুটবল খেলব একদিন, লিখলেন পেলে

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE